বিচিত্র

বরিশালে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বুড়ো-বুড়ির বিয়ে

৬৪ বছর বয়সী বর বজলু খান। ৫৮ বছরের কনে বকুল বেগম ওরফে ফুলশুনী। দুজনই আগে বিয়ে করেছিলেন। গড়েছিলেন পৃথক সুখের সংসার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে জীবনের পড়ন্ত বেলায় হয়ে পড়েন নিঃসঙ্গ। খোঁজ নিতেন না নিজের সন্তানরা। তাদের অসহায়ত্ব দেখে স্থানীয় তরুণরা দুই বুড়ো-বুড়ির বিয়ের আয়োজন করেন। শনিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে জাঁকজমকপূর্ণভাবে বরিশাল নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দা খান সড়ক এলাকায় এ বিয়ে সম্পন্ন হয়।

বর বজলু খান কনের বাড়িতে আসেন ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে। ৩০ হাজার টাকা দেনমোহরে সম্পন্ন হয় তাদের বিয়ে। তাদের বিয়ে দেখতে রাস্তার দুইপাশে উৎসুক মানুষের ভিড় তৈরি হয়। কেউ হাত তালি দিয়ে আবার কেউ ফুল ছিটিয়ে তাদের অভিবাদন জানান। চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় পুরো নগরীতে।
বজলু খান জেলার উজিরপুরের কালিহাতা গ্রামের বাসিন্দা।

গত ৩০ বছর আগে সে তার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেন। ওই সংসারে ২ ছেলে এবং ১টি মেয়ে রয়েছে। বজলু খানের দাবি- সন্তানরা তার খোঁজখবর নেয় না। এ কারণে দ্বিতীয় বিয়ে করে বরিশাল নগরীর সাগরদী দরগাহ বাড়ি ভাড়া বাসায় বসবাস করে কাঠমিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। গত বছর নগরীর ১ নম্বর সিএন্ডবি পোল এলাকায় ট্রাক চাপায় দ্বিতীয় স্ত্রী মারা যাওয়ার পর নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন তিনি।

অপরদিকে নগরীর খান সড়ক এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দা ফুলশুনীর স্বামী মারা যায় ১০ বছর আগে। একমাত্র ছেলে ঢাকায় থাকে। কিন্তু সে তার মায়ের খোঁজখবর নেয় না। জীবিকার তাগিদে নগরীর খান সড়ক এলাকায় মহাসড়কের পাশে বসে ডিম বিক্রি করেন তিনি।

খান সড়কের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় তরুণরা এই দুই জনের একাকিত্ব এবং নিঃসঙ্গতা দেখে তাদের দুই জনের বিয়ের প্রাথমিক আলোচনা করেন। উভয়ে বিয়েতে সম্মতি দিলে দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে আয়োজক তরুণরা। এরপর চাঁদা তুলে প্রায় ২০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন তারা। বর ও কনের নতুন পোশাক কেনা, অতিথি আপ্যায়নের জন্য বাজার-সদায় করা, তাদের বিয়ের দিনের জন্য ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করা, সাউন্ড সিস্টেমের জন্য মাইক ভাড়া করা সহ আনুষাঙ্গিক খরচ চাঁদার অর্থ দিয়ে মেটান তারা।

শনিবার কনেকে বিয়ের পোশাক পরিয়ে পার্লারে নববধূর মতো সাজানো হয়। দুপুরে বর সহ ৫ জন বরযাত্রী বহনকারী ঘোড়ার গাড়ি আসে কনের অস্থায়ী নিবাস নগরীর খান সড়ক খালপাড় এলাকায়। সেখানে ৩০ হাজার টাকা দেন মোহরে তাদের বিয়ে নিবন্ধন করেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী আবুল ফারাহ্।

এরপর স্থানীয় জনৈক আব্দুল মান্নানের বাসায় বরযাত্রীদের আপ্যায়ন করা হয়। দুই বুড়ো-বুড়ির বিয়ের খবরে ওই বাড়িতে ভিড় করে স্থানীয় উৎসুক জনতা। আপ্যায়ন শেষে ঘোড়ার গাড়িতে কনে নিয়ে যায় বৃদ্ধ বর বজলু খান। এই বিয়ের অন্যতম উদ্যোক্তা মো. মাহাবুবুর রহমান মিলন এবং মো. ইমান আলী খান জানান, নবদম্পতির আপনজন কেউ তাদের খোঁজখবর নেয় না।

তাই তারা চাঁদা তুলে দুইজন নিঃসঙ্গ নারী-পুরুষের বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আর্থিক অনটনের কারণে তাদের মনে যাতে কোনো আক্ষেপ না থাকে সে জন্য সোমবার বরের বাসায় বৌ-ভাতেরও আয়োজন করা হয়েছে। বৌভাত শেষে কনে সহ বরকে কনে বাসায় নিয়ে আসার কথা বলেন তারা। বিয়েতে খুশী নবদম্পতি বাকি জীবন সুখে থাকার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।

 

 

আরও খবর পেতে দেখুনঃ ধর্মও জীবনইতিহাসের ডায়েরী 

Incredible News Bd, Incredible News Bd

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − 2 =

Back to top button