ধর্ম ও জীবন

জেনে নিন স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির ৯টি গুরুত্বপূর্ণ আমল

স্মৃতি শক্তি মহান আল্লাহর অন্যতম নেয়ামত। কিন্তু এমন অনেকেই আছেন, যাদের কোনো কিছুই মনে থাকে না। তাদের জন্য রয়েছে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লমের গুরুত্বপূর্ণ ৯টি  উপদেশ। সেগুলো হলোঃ-

> দোয়া করা
আল্লাহর সাহায্য ছাড়া সফলতা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই সব সময় আল্লাহর কাছে জ্ঞান বৃদ্ধির সাহায্য প্রার্থনা করা জরুরি। কুরআনুল কারিমেই আল্লাহ তাআলা এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন এভাবে-
رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا
উচ্চারণ : ‘রাব্বি যিদনি ইলমা’
অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।’ (সুরা ত্বহা : আয়াত ১১৪)

> জিকির করা
কোনো কিছু ভুলে গেলে আল্লাহকে স্মরণ করা। আল্লাহ তাআলার জিকির বা স্মরণই বান্দাকে সত্যের দিকে ধাবিত করে। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন এবং বলুন, আশা করি আমার পালনকর্তা আমাকে এর চাইতেও নিকটতম সত্যের পথ নির্দেশ করবেন।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ২৪)
সুতরাং মানুষের উচিত, বেশি বেশি তাসবিহ- সুবহান আল্লাহ, তাহমিদ- আলহামদুলিল্লাহ, তাহলিল- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং তাকবির- আল্লাহু আকবার পাঠ করা।

> গোনাহ থেকে দূরে থাকা
প্রতিনিয়ত গোনাহ করার কারণে মানুষের স্মৃতিশক্তি কমে যায়। তাই স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পাপ ছেড়ে দেয়ার বিকল্প নেই। কেননা পাপের অন্ধকার ও জ্ঞানের আলো কখনো একসঙ্গে থাকতে পারে না। এ প্রসঙ্গে দুটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য-
– ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন-‘আমি (আমার শায়খ) ওয়াকি রাহিমাহুল্রাহকে আমার স্মৃতিশক্তি কমের ব্যাপারে অভিযোগ করেছিলাম এবং তিনি আমাকে উপদেশ দিয়েছিলেন- আমি যেন পাপকাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখি। তিনি বলেছিলেন- ‘আল্লাহর দেয়া জ্ঞান হলো একটি আলো এবং আল্লাহর আলো কোনো পাপচারীকে দান করা হয় না।’
– হজরত ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া বলেন, ‘এক ব্যক্তি মালিক ইবনে আনাসকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘হে আবদ-আল্লাহ! আমার স্মৃতিশক্তিকে শক্তিশালী করে দিতে পারে এমন কোনো কিছু আছে কি? তিনি বলেন, যদি কোনো কিছু স্মৃতিকে শক্তিশালী করতে পারে তা হলো- পাপ করা ছেড়ে দেয়া।’

ফলে যখনই কোনো মানুষ পাপ করে এটা তাকে উদ্বেগ ও দুঃখের দিকে ধাবিত করে। সে তার কৃতকর্মের ব্যাপারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। তার অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায় এবং জ্ঞান অর্জনের মতো কল্যাণকর ‘আমল থেকে সে দূরে সরে পড়ে। তাই সবার উচিত পাপ থেকে দূরে থাকার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

> মুখস্থ রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখা
মুখস্থ করা বিষয়গুলো বেশি বেশি পড়ার মাধ্যমে আমল করা খুবই জরুরি। সবাই এ ব্যাপারে একমত যে, কোনো একটি বিষয় যতো বেশিবার পড়া হয় তা ততো বেশি মস্তিষ্কে দৃঢ়ভাবে জমা হয়। অথচ জীবনের ব্যস্ততায় অনেকেই এ বিষয়টি মেনে চলতে পারে না।
সুতরাং যারা কুরআন শিক্ষায় জড়িত তাদের জন্য সুবর্ণ সযোগ হলো- এমনিতে কুরআন তেলাওয়াতের সুযোগ না পেলে, নামাজের সময় কুরআনের তেলাওয়াত বেশি বেশি করা। সেজদায় এবং নামাজের পর দোয়ার নিয়তে বেশি বেশি ইসলামি জ্ঞানার্জন করা। দোয়া করা।
এতে একদিকে যেমন আমল হয়ে যাবে, অন্যদিকে পড়াও হবে আর তাতে স্মৃতিশক্তি যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি মুখস্থ জিনিসগুলো আরো বেশি স্মৃতিতে জমা হবে।

> মুখস্থ শক্তি বাড়াতে কৌশলী হওয়া
সবার জ্ঞান যেমন একরকম নয়, তেমনি সবার মুখস্থ শক্তি ও মুখস্থ করার পদ্ধতিও এক নয়। তাই যার যেভাবে পড়লে বেশি মুখস্থ হয় সে সেভাবেই চেষ্টা করবে। তা হতে পারে দাঁড়িয়ে, শুয়ে কিংবা বসে। নিরবে কিংবা আওয়াজ করে। সকলা, সন্ধ্যা কিংবা গভীর রাতে।

> স্মৃতিশক্তি বাড়াতে উপযোগী খাবার গ্রহণ
মস্তিষ্কের জন্য উপকারী খাদ্য-দ্রব্য গ্রহণ করাও জরুরি। সময় মতো নিয়মিত পরিমিত ও সুষম খাদ্য গ্রহণেলর মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের যেমন কোনো সুযোগ নেই, আবার কম খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ারও কোনো সুযোগ নেই। তাই খাবার গ্রহণে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখা জরুরি।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য অনেক আলেম কিছু নির্দিষ্ট খাদ্য গ্রহণের কথাও বলেছেন। ইমাম আয-যুহরির মতে, ‘তোমাদের মধু পান করা উচিত কারণ এটি স্মৃতির জন্য উপকারী। মধুতে রয়েছে মুক্ত চিনিকোষ; যা আমাদের মস্তিষ্কের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া মধু পান করার সাত মিনিটের মধ্যেই তা রক্তে মিশে গিয়ে কাজ শুরু করে দেয়।’
ইমাম আয-যুহরি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি হাদিস মুখস্থ করতে চায় তার উচিত, কিসমিস খাওয়া।’

> নিয়ম মতো বিশ্রাম নেয়া
স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের কার্যকারীতে বাড়াতে বিশ্রাম গ্রহণ করার বিকল্প নেই। সে কারণই মানুষ যখন ঘুমায় তখন তাদের মস্তিষ্ক অনেকটা ব্যস্ত অফিসের মতো কাজ করে। এটি তখন সারাদিনের সংগৃহীত তথ্যসমূহ প্রক্রিয়াজাত করে। তাছাড়া ঘুম মস্তিষ্ক কোষের পুণর্গঠন ও ক্লান্তি দূর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আবার দুপুরের সামান্য ভাতঘুম বা কায়লুলা মানুষের মন-মেজাজ ও অনুভূতিকে চাঙ্গা রাখে। এটি একটি সুন্নাতি আমলও বটে। তবে বিশ্রামের নামে অতিরিক্ত ঘুম কোনোভাবেই সুখকর নয় বরং এর কুফলই বেশি। তাই অতিরিক্ত ঘুম থেকে বিরত থাকতে হ

অপ্রয়োজনীয় বিষয় এড়িয়ে চলা
জীবনের অপ্রয়োজনীয় বিষয়সমূহ পরিত্যাগ করে চলা আবশ্যক। কেননা এতে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যায় এবং জ্ঞান অর্জনে অনীহার অন্যতম একটি কারণও এটি।

কাজে অটল থাকা
যে কোনো কাজে সফলতার অন্যতম উপায় হচ্ছে হাল ছেড়ে না দেয়া। যে কোনো কিছু মুখস্থ করার ক্ষেত্রে শুরুটা কিছু কষ্টসাধ্য হলেও মুখস্থ করার বিষয়ে অটল ও অবিচল থাকা। সময়ের ব্যবধানে এক সময় মস্তিষ্ক সবকিছুর মানিয়ে নেয়। তাই কোনো কিছু মখস্থ না থাকলে বা স্মরণ না থাকলে হতাশ না হয়ে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই  উত্তম।

 

আরও খবর পেতে দেখুনঃ ধর্মও ও জীবন ইতিহাসের ডায়েরী 

Latest Islamic Amol, Latest Islamic Amol

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 4 =

Back to top button