ইতিহাসের ডায়েরী

উপমহাদেশের প্রথম হাদিসচর্চা কেন্দ্র সোনারগাঁ

ইসলাম আজ সারা বিশ্বে বিস্তৃত। পৃথিবীর সর্বত্র পৌঁছে গেছে ইসলামের দাওয়াত। ইসলামের শাশ্বত ও সুন্দর পয়গাম বিশ্বময় ছড়িয় দিতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের অন্যতম শেখ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা (রহ.)। তিনি ছিলেন ইয়েমেনের অধিবাসী।

ইতিহাস থেকে জানা যায় আনুমানিক ১২৭৭ সালের দিকে সম্রাট গিয়াসউদ্দিন বলবনের আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে আগমন করেন এ ইসলাম প্রচারক। তাকে কাছে পেয়ে মুসলমানরা বেজায় খুশি হন।

ভারতীয় মহাদেশের নানা প্রান্ত থেকে লোকজন তার কাছে আসতে থাকেন দ্বীন শিখার জন্য। তার ব্যাপক পরিচিতিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে সম্রাট গিয়াসউদ্দিন বলবন তাকে ভারত থেকে পাঠিয়ে দেন প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ে।

সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া গ্রামে ইলমে হাদিসের দরসগার চালু করেন এ হাদিসবেত্তা। ১৩০০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ২৩ বছর সেখানে হাদিসের শিক্ষা ও ইসলামের প্রচার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখে ছিলেন তিনি।

ঐতিহাসিকরা ধারণা করেন এ মাদ্রাসার ছাত্র সংখ্যা ছিল প্রায় দশ হাজার। ঐতিহাসিকদের বিশুদ্ধ তথ্যমতে এটাই হল উপমহাদেশের প্রথম হাদিসচর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র। দুঃখজনক হলেও সত্য, একদিন সোনারগাঁ থেকে ছড়িয়ে পড়া ইলমে নববীর যে আলোক শিখা সমগ্র উপমহাদেশকে আলোকিত করেছিল, অযত্ন অবহেলায় আজ তার শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকুও বিলিন হওয়ার পথে।

সোনারগাঁয়ে অবস্থিত বাইতুন নুর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা হাফিজুর রহমান বলেন, শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা ছিলেন একজন আলেম, সাধক, সুফি ও গবেষক, যুগশ্রেষ্ঠ হাদিস বিশারদ ও ইসলামী আইন বেত্তা। তিনি যে মিশন নিয়ে এখানে হাদিসচর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র চালু করেছিলেন তার স্মৃতিটুকুও আমরা ধরে রাখতে পারিনি।

বেশ কিছুদিন আগে সোনারগাঁয়ের ওলামায়ে কেরাম তার স্মৃতিবিজড়িত এ স্থানকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলেও এখন পর্যন্ত এর কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি । এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সমগ্র মুসলিম দুনিয়ার গর্ব ও গৌরবের স্থান। এটার সংরক্ষণে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেয়ার দাবি ধর্মপ্রাণ মানুষের।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − nine =

Back to top button