অবৈধভাবে পণ্যের দাম বাড়ালে কঠিন শাস্তি দিবেন আল্লাহ
রমজান সওয়াব ও পুণ্য অর্জনের মাস। ঈমানদাররা বেশি সওয়াব অর্জনের প্রতীক্ষায় থাকেন। কেউ পুণ্য অর্জন করে, আর কেউ অবৈধভাবে সম্পদ বাড়াতে উঠে-পড়ে লাগে। রমজান কাছে এলেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা শুরু হয়ে যায়।
গণমানুষকে ঠকিয়ে বেশি লাভ করার প্রস্তুতি নিতে থাকে তারা। মজুদকরণ বা অপকৌশলে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে ‘বড়লোক’ হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তাদের লুটেরা মনোভাবের কারণে যুক্তিগ্রাহ্য কারণ না থাকলেও নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। চাল, ডাল, ছোলা, চিনি, ভোজ্য তেল, খেজুর ইত্যাদিসহ প্রায় সব পণ্যের দাম হয়ে ওঠে আকাশছোঁয়া।
ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যচর্চার মাস রমজানে তারা নির্মমতার অনুশীলন করেন। অথচ একজন মুসলমান ব্যবসায়ীর রমজান-প্রস্তুতি এমন হতে পারে না। কারণ যে ব্যবসায়ী পণ্য মজুদ করে অবৈধভাবে দাম বাড়ায়, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি ক্ষুব্ধ হন। তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন খাদ্য মজুদ রাখল— সে আল্লাহর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, আল্লাহ দূরে গেলেন তার থেকে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৮/৪৮১)
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, আল্লাহ তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৩৮)
অবৈধ সম্পদ জাহান্নামে নেবে
ভোক্তাদের জিম্মি করা জায়েজ নেই। কেউ তা করে ‘বিত্তশালী’ হয়ে গেলেও কোনো লাভ নেই। তার অবৈধ সম্পদ জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে। দুনিয়ার জীবনেও তার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। উপরন্তু উপার্জন হারাম হওয়ার কারণে নামাজ, রোজা, হজ, দান-সদকা কিছুই কবুল হবে না।
মজুদদারি ও কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে কোটিপতি হলেও তার জন্য দারিদ্র্য অবধারিত। রাসুল (সা.) বলেন—
কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম উপায়ে সংকট তৈরি করে, আল্লাহ তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেন।
(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২/৭২৯)
সৎ ব্যবসায়ীর সৌভাগ্যময় হাশর
পক্ষান্তরে যারা মজুদদারি না করে স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করল, এ ব্যবসা পরিণত হবে ইবাদতে। তার উপার্জন আল্লাহ তাআলা বরকতময় করে দেবেন। তাকে অপ্রত্যাশিত রিজিক প্রদান করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘খাঁটি ব্যবসায়ী রিজিকপ্রাপ্ত হয় আর পণ্য মজুদদকারী অভিশপ্ত হয়।’ (ইবনে মাজাহ : ২/৭২৮)
দুনিয়ায় রিজিকে বরকত দেওয়া হবে। পাশাপাশি হাশরের ময়দানেও তাকে পুরস্কৃত করা হবে। নবীগণের সঙ্গী হওয়ার পরম সৌভাগ্য লাভ করবেন তিনি। রাসুল (সা.) বলেন—
সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীদের হাশর নবীগণ, সিদ্দিকগণ ও শহীদগণের সঙ্গে হবে।
(তিরমিজি, হাদিস : ৩/৫১৫)
তাই ব্যবসায়ীদের উচিত উত্তম পরিকল্পনা করে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। যেন ব্যবসার কারণে নামাজসহ অন্যান্য ইবাদতে বিঘ্ন তৈরি না হয়। হারাম পণ্যের বেচাকেনা থেকে বিরত থাকতে পারে। পাশাপাশি সুলভমূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহ করে ব্যবসাকে ইবাদতে পরিণত করা। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন।