শিক্ষাঙ্গন

দারিদ্র্যকে পেছনে ঠেলে মেডিকেলে চান্স; অর্থাভাবে ভর্তি অনিশ্চিত তামান্নার

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম বেলদহ গ্রামের ভ্রাম্যমাণ কাপড় বিক্রেতা তারা মিয়ার মেয়ে তারজিনা আক্তার তামান্না। এবার ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ২২৬৭ নম্বরে স্থান পেয়ে রংপুর মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তামান্না।

কিন্তু পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হওয়ায় ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ নিয়ে অনিশ্চিয়তার মাঝে দিন কাটছে তার।

তামান্না উপজেলার জয়মনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ ও ভুরুঙ্গামারী মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পান।

তামান্নার বাবা তারা মিয়া জানান, বসতবাড়িটুকু ছাড়া চাষাবাদ করার মতো কোনো জমি নেই তার। সংসার চালাতে ভ্যানে করে বিভিন্ন হাট-বাজারে গিয়ে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করেন তিনি। তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চললেও সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই।

তিনি আরও জানান, মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে আরডিআরএস নামক একটি এনজিও থেকে ঋণ নেন তিনি। মেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ায় দুই বছরের জন্য ওই এনজিওটি ২৪ হাজার টাকা বৃত্তি প্রদান করে।

বৃত্তির টাকা খরচ না করে সেই টাকা দিয়ে মেয়েকে কোচিং সেন্টারে ভর্তি করান। মেয়ের অনলাইনে ক্লাস করার জন্য মালয়েশিয়া প্রবাসী তার এক পরিচিত ব্যক্তি একটি মোবাইল ফোন কিনে দেন। এখন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে মেয়ে। কিন্তু ভর্তির টাকাইতো নেই।

দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া দুই বোনের মধ্যে বড় তামান্না। অভাবকে জয় করে অজপাড়াগাঁ থেকে তামান্না মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় পরিবারে পাশাপাশি গ্রামবাসীর মাঝেও আনন্দের বন্যা বইছে। কিন্তু পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

তামান্না বলেন, মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু টাকার অভাবে নিমেষেই সেই অনুভূতি হারিয়ে গেছে।

তামান্নার মা লাইলি বেগম বলেন, তাদের কোনো আবাদি জমি নেই। শুধু আছে বসতভিটা। স্বামীর সামান্য আয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। মেডিকেলে ভর্তি ফি ও আনুসাঙ্গিক খরচ বাবদ নগদ প্রায় ৯০ হাজার টাকার প্রয়োজন। যা তাদের পক্ষে জোগাড় করা অসম্ভব। এ অবস্থায় মেয়ে কীভাবে ডাক্তারি পড়বে তা তারা ভাবতে পারছেন না।

ভুরুঙ্গামারী মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ খালেদুজ্জামান বলেন, মেয়েটি অসম্ভব মেধাবী। কলেজে পড়ার সময় আমরা তাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছি। এমন এক প্রতিভা যেন অর্থাভাবে হারিয়ে না যায় সেজন্য তিনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 3 =

Back to top button