গণতন্ত্রের প্রতীক থেকে গণহত্যার প্রতীক সু চি
অং সান সু চির ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ মেকি কান্নায় ভুলে একসময় শান্তির দূত উপাধি দিয়েছিল বিশ্ব। ঠাঁই দিয়েছিল বর্ণবাদবিরোধী বিশ্বনন্দিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার কাতারে। অহিংস আন্দোলনের জনক মহাত্মা গান্ধীর নামের সঙ্গেও উচ্চারিত হতো তার নাম।
গণতন্ত্রের স্বার্থে ১৫ বছর গৃহবন্দি থেকে অবাক করে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। হয়ে উঠেছিলেন আরেক ম্যান্ডেলা। অথচ ক্ষমতার ভাগ পেয়েই পলকে পাল্টে গেলেন সু চি। মানবতা, মানবাধিকার, শান্তির মুখোশ খুলে বেরিয়ে পড়ল রাক্ষুসে বিষদাঁত। গণতন্ত্রের মেকআপ খসে ভেসে উঠল বর্ণবাদী চেহারা।
সু চি যে শান্তির দূত নন-২০১৭ সালে রোহিঙ্গা গণহত্যার সময় তা প্রথম প্রকাশ পায়। একটা অসহায় জনপদের ওপর সেনাবাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের উল্লাসেও নীরব থাকেন সু চি। আর আজ বিশ্ব আদালত যখন সেই অপরাধে মিয়ানমারের টুঁটি চেপে ধরেছেন, তখন সেই সেনাবাহিনীকে বাঁচাতেই হঠাৎ সরব হয়ে উঠেছেন সেই ‘বোবা’ নেত্রী।
বিশ্বের চোখে ঠুলি পরিয়ে রাখা সেই সু চির এই আসল রূপটাই এবার আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া, সূত্র যুগান্তর।
চলতি শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যা রোহিঙ্গা গণহত্যা। প্রায় তিন বছর আগে এ গণহত্যা সংঘটিত হয়। কিন্তু কোনো দেশই মিয়ানমারকে বিচারের আওতায় আনার সাহস দেখায়নি। শেষ পর্যন্ত গাম্বিয়ার চেষ্টায় আদালতের কাঠগড়ায় মিয়ানমার ও তার নেত্রী সু চি। মঙ্গলবার শুরু হয় গণহত্যা মামলার শুনানি। পরপর তিনদিন শুনানির মধ্যদিয়ে বৃহস্পতিবার এর শেষ হয়েছে।
এই শুনানিতে সু চি রীতিমতোই তার দেশের সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। দিনের আলোর মতো পরিষ্কার গণহত্যা নিয়ে তার এই ডাহা মিথ্যাচারে ছিঃছিঃ করছে পুরো বিশ্ব। নিন্দা ও সমালোচনার তীর ছুড়ছে মানুষ। ঘৃণা জানাচ্ছে গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গারাও।
কিন্তু রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তার এই বিতর্কিত অবস্থান সত্ত্বেও তাকে বাহবা দিচ্ছে তার নিজ দেশের নাগরিকেরা। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে বিচার চলাকালে তার সমর্থনে তারা র্যালি-সমাবেশও করছে।
রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের (আইসিজে) মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে সু চির একের পর এক মিথ্যায় বিস্মিত পুরো বিশ্ব। অবাক গাম্বিয়াও। আর শুনানির শেষ দিন বৃহস্পতিবার মিয়ানমার নেত্রীর মিথ্যাচারের কঠিন জবাব দিলেন দেশটির আইনজীবীরা।
রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সীমাহীন নির্যাতন-নিপীড়নের পরও কেন তিনি কোনো প্রতিবাদ করেননি, কেন তিনি মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন- সেই প্রশ্ন তোলেন প্রধান দুই আইনজীবী। তারা বলেন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের’ নামে রোহিঙ্গাদের ওপর সাঁড়াশি অভিযান চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
ঢালাও হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার ব্যাপক অভিযোগ সত্ত্বেও সু চি বরাবরই নীরব ছিলেন। আদালতে মিয়ানমারের এজেন্ট সু চির উদ্দেশে গাম্বিয়ার আইনজীবী পিলিপ স্যান্ডস বলেন, ‘ম্যাডাম, আপনার নীরবতা আপনার একটা কথার চেয়েও বেশি শক্তিশালী। কিন্তু ধর্ষণ শব্দটিও তার মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়।’
মার্কিন সিনেটেও সু চির নিন্দা : রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে সেনাদের পক্ষ নেয়ায় সু চির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন সিনেটের রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট পার্টির ১০ সদস্য। আইসিজেকে পুরোপুরি সমর্থনের জন্য মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর সু চিকে চিঠি দিয়েছেন।
ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ১০ তারিখের ওই চিঠিতে তারা লিখেছেন, রোহিঙ্গা এবং অন্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নিধনে নৃশংসতার দায়ে অভিযুক্ত সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গেয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নিজের শেষ ভাবমূর্তিটুকুও ঝুঁকিতে ফেলছেন সু চি।
চিঠিতে সই করেছেন মার্কিন সিনেটে রিপাবলিকান পার্টির সদস্য মার্শা ব্ল্যাকবার্ন, টড ইয়াং, ডেমোক্রেট পার্টির সদস্য ক্রিস ভ্যান হলেন, রিচার্ড ডারবিন, ব্রায়ান শোয়াটজ, ট্যামি বল্ডউইন, জেফ্রি মার্কলে, রবাট ক্যাসি, বেঞ্জামিন কার্ডিন ও রন ওয়াইডেন।
সিনেটররা লিখেছেন, আপনি যেভাবে ২০১৭ সালের নিষ্ঠুর ও তথাকথিত ‘শুদ্ধি অভিযান’ নামে অভিহিত অভিযান সামাল দিয়েছেন তো মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আরও দেখতে চোখ রাখুনঃ চলমান রাজনীতি, ও অং সং সুচিকে আন্তর্জাতিক ভাবে বয়কট করার কথা
Tag: News rohingya, Rohingya news