Breakingনগরজীবন

চসিক মেয়রের জন্য কোটি টাকার গাড়ি কেনার উদ্যোগ!

ঠিকাদারদের উন্নয়ন বিল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক ও ভবিষ্য তহবিল খাতে প্রায় সাড়ে চার শ কোটি টাকা বকেয়া।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর জন্য গাড়ি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন এই গাড়ি কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগামী মাসে এই গাড়ি কেনা হতে পারে।

মহামারি করোনার সময় এভাবে গাড়ি কেনার প্রক্রিয়া হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মেয়র স্বল্প দামের গাড়ি কিনে বাকি টাকা চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন বলে মনে করেন তাঁরা।

এ ছাড়া সিটি করপোরেশন দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সংকটে ভুগছে। ঠিকাদারদের উন্নয়ন বিল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক ও ভবিষ্য তহবিল খাতে প্রায় সাড়ে চার শ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।

সিটি করপোরেশনের মেয়রের জন্য গাড়ি কেনার বিষয়ে ৪ মে চট্টগ্রামের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রকৌশল বিভাগের যান্ত্রিক শাখা। আজ বুধবার দরপত্র ফরম উন্মুক্ত করার কথা রয়েছে। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে গাড়ি কেনার টাকা খরচ করা হবে।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে তৎকালীন মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময় সর্বশেষ ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় মিতসুবিশি ব্র্যান্ডের পাজেরো গাড়ি কেনা হয়েছিল। মহিউদ্দিন চৌধুরীর পর সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলমও ওই গাড়ি (চট্ট মেট্রো ঘ-১১-০৭৩৭) ব্যবহার করতেন।

তবে আরেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সে গাড়ি ব্যবহার করতেন না। তিনি ব্যবহার করতেন নিজের গাড়ি। তখন ওই গাড়ি প্রধান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমদ ব্যবহার করতেন। অবশ্য বিদায়ী প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন মেয়রের জন্য নির্ধারিত গাড়ি ব্যবহার করতেন।

মেয়র ৩০-৪০ লাখ টাকার গাড়ি ব্যবহার করে বাকি টাকা চিকিৎসা খাতে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারতেন। মানুষের ভালোবাসাও পেতেন।
আখতার কবির চৌধুরী, সম্পাদক, সুজন, চট্টগ্রাম

একটি গাড়ি থাকা সত্ত্বেও আরেকটি গাড়ি কেন কেনা হচ্ছে, জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাক দাবি করেন, মেয়রের গাড়িটি ১৫ বছরের পুরোনো হয়ে গেছে। গাড়িটিতে বারবার ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। সম্প্রতি মেয়র বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার সময় মাঝপথেই গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়।

এ রকম পরিস্থিতি একজন মেয়রের জন্য বিব্রতকর। তাই গাড়ি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। যদিও মেয়র মহোদয় তাতে রাজি হননি। পরে অবশ্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে গাড়ি কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তাঁরা।

চট্টগ্রামের একটি সংস্থার সাবেক যন্ত্র প্রকৌশলী প্রথম আলোকে বলেন, মেরামতের মাধ্যমে গাড়িটি আরও কয়েক বছর ব্যবহার করা সম্ভব। তবে মেরামত খরচ একটু বেশি পড়বে।

আর্থিক সংকটে থাকার পরও গাড়ি কেনার উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইল সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, মেয়রের গাড়ি কেনার বিষয়ে সব প্রক্রিয়া যান্ত্রিক শাখা করছে। কীভাবে অর্থের সংস্থান করা হবে, সে সম্পর্কে তারা ভালো বলতে পারবে। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুদীপ বসাকের দাবি, যান্ত্রিক শাখার আওতায় রাজস্ব আয় রয়েছে। ওই আয় থেকে গাড়ির টাকা ব্যয় করা হবে।

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী গত ২৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মেয়রের দায়িত্ব নেন। নতুন গাড়ি কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। অবশ্য তিনি দাবি করেছেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রকৌশল বিভাগ থেকে নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। শুরুতে গাড়ি কিনতে তিনি রাজি ছিলেন না। কিন্তু বিভিন্ন ত্রুটির কারণে গাড়িটি কয়েকবার মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সবাই বলার পর গাড়ি কেনার অনুমতি দিয়েছেন।

তবে মহামারি করোনার সময় এভাবে গাড়ি কেনার বিষয়টি অপ্রত্যাশিত বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রাম জেলা সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে দেশ এখন ক্রান্তিকাল পার করছে। চিকিৎসা খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংকট। এ রকম অবস্থায় এত দামি গাড়ি না কেনাটাই ছিল প্রত্যাশিত। মেয়র ৩০-৪০ লাখ টাকার গাড়ি ব্যবহার করে বাকি টাকা চিকিৎসা খাতে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারতেন। মানুষের ভালোবাসাও পেতেন।

সূত্রঃ প্রথমআলো

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 5 =

Back to top button