সরকারী চাকরি করলেও তিনি অফিসে আসেন না। মাঠেও কাজ করেন না। কারণ, বছরের বেশিরভাগ সময়েই তিনি দেশের বাইরে ভারতে থাকেন। অথচ ছুটি নেননা। আবার ছুটি না নিলেও অফিস থেকে জনসাধারণের মাঝে বিতরণের জন্য ওষুধপত্র ঠিকই তুলে নেয়ার তথ্য জানা যায়। আবার কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন মর্মে মাসিক রিপোর্টও জমা দেন।
দু’একবার না, বছরের প্রতি মাসেই এমন দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সরকারের বেতনভাতা তুলে মোটা অংকের সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার এই পরিবার কল্যাণ সহকারী চামেলী শিকদার।
চামেলী শিকদার কাউলিবেড়া ইউনিয়নের পল্লিবেড়া গ্রামের সুশান্ত মাষ্টারের স্ত্রী। পরিবার কল্যাণ সহকারী হিসেবে কাউলিবেড়া ইউনিয়নের পল্লিবেড়া এলাকাই তার কর্মস্থল। সেখানে পরিকল্পিত পরিবার গঠনে সরকারের বিভিন্ন গ্রহণে নারীদের উদ্বুদ্ধ করা ও বিভিন্ন সেবা সামগ্রী সরবরাহ করা তার কাজ।
স্থানীয়রা বলছেন, গত দশ বছর যাবত তিনি ওই এলাকায় পরিবার কল্যাণের কোন কাজ করেন না। তারা চামেলী শিকদারের নিকট হতে কোন সেবা পাননা। কারণ তিনি দেশেই থাকেন না। ইতোমধ্যে তিনি ভারতে বাড়ি তৈরি করেছেন। সেখানে তার সন্তানেরা থাকে। পড়াশুনাও করে সেখানে। তিনিও তাদের সাথেই থাকেন।
পল্লিবেড়া গ্রামের কবির হোসেন বলেন, চামেলী শিকদারের সন্তানেরা ভারতে থাকে। সেখানেই তারা লেখাপড়া করে। তাদের দেখভালের জন্য ভারতেই থাকেন বেশিরভাগ সময়।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গার পরিবার কল্যাণ অফিসের কর্মরতদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চামেলী শিকদার তার কর্মস্থলে মাসের পর মাস অনুপস্থিত থেকেও বেতন উওোলন করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অফিসের একাধিক স্টাফরা জানান, আগের এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তার মাধ্যমে চামেলী এই অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করেছেন।
দীর্ঘদিন যাবৎ আগের স্যারকে ম্যানেজ করে ছুটি ছাড়াই মাসের পর মাস অনুপস্থিত থাকেন। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না।ঠিকই তিনি ঔষধ সামগ্রী সময়মত উত্তোলন করেন এবং তার মাসিক রির্পোটও ম্যানেজ করে নেন।
কোন কাজ না করেই বেতনভাতা তুলে নিচ্ছেন বছরের পর বছর। নিচ্ছেন সরকারের উৎসব বোনাসসহ অন্যান্য সুবিধাদিও। তারা জানান, মাসের বেশিরভাগ সময় তিনি দেশের বাইরেই থাকেন। গত প্রায় দশ বছর যাবত এভাবেই চালাচ্ছেন তিনি।
কিভাবে এই অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্ভব হয়েছে? এর জবাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা অভিযোগ করেন, একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তার সাথে অনৈতিক সম্পর্কের সুবাদে তিনি এই দুর্নীতির সুযোগ করে নিয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে ওই কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ারও চেষ্টা চলছে।
এদিকে পল্লিবেড়া গ্রামবাসী চামেলী শিকদারের ব্যাপারে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন সম্প্রতি। ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিন বলেন, এবিষয়ে অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রবীন বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। এখানে এসে চামেলি শিকদারকে কোনোদিনও কর্মস্থলে পাইনি। তবে ইউএনও স্যারের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে চামেলীর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কর্মস্থল ও তার বাড়ীতে পাওয়া যায়নি।