Breakingধর্ম ও জীবন

বাবা সন্তানের জন্য জান্নাতের মধ্যবর্তী দরজা!

বাবা সন্তানের জন্য জান্নাতের মধ্যবর্তী দরজা। সন্তান চাইলে জান্নাতের এ দরজা যেমন নষ্ট করতে পারে আবার চাইলে তা রক্ষাও করতে পারে। বাবার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই সন্তান জান্নাতের এ মর্যাদা ও সম্মান পেতে পারেন। বাবার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালনের কথাই তুলে ধরেছেন বিশ্বনবি। হাদিসের বর্ণনায় তা এভাবে ওঠে এসেছে-

হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘বাবা হলো জান্নাতের দরজাসমূহের মধ্যবর্তী দরজা। অতএব তুমি (সন্তান চাইলে) ওই দরজা নষ্টও করতে পারো অথবা তার হেফাজতও করতে পারো।’ (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ)

বাবা শুধু সন্তানের জন্য মধ্যবর্তী দরজাই নয়, বরং সন্তানকে জান্নাতের পথ দেখানোর অন্যতম কারিগরও বটে। কুরআনুল কারিমের সুরা লোকমানেই সে প্রমাণ ওঠে এসেছে। বাবা লোকমান তাঁর ছেলেকে জান্নাতের পথে চলতে সঠিক জীবনদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-

১. وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ – وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ

‘যখন লোকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বললঃ হে বৎস, আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়। আর আমি মানুষকে তার বাবা-মার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি।’ (সুরা লোকমান : আয়াত ১৩-১৪)

২. وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا

‘আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি।’ (সুরা আহকাফ : আয়াত ১৫)

৩. وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا

‘আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৮)

বাবার অধিকার ও প্রাপ্তি সম্পর্কে হাদিসের আরও বর্ণনা

১. হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি বলল- হে আল্লাহর রাসুল! সন্তানের উপর বাবা-মার কী অধিকার আছে? তিনি বলেন- তারা তোমার জান্নাত এবং তোমার জাহান্নাম।’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

২. হজরত মিকদাম বিন মাদি কারিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের মা-দের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন। একথা তিনি তিনবার বলেন- নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের বাবাদের সম্পর্কে উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পর্যায়ক্রমে তোমাদের কাছাকাছিদের সম্পর্কে (সদাচরণে) তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ)

৩. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এক কিনতার হলো বারো হাজার উকিয়ার সমান এবং উকিয়া হলো আসমান-জমিনের মাঝখানে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘জান্নাতে মানুষের মর্যাদা অবশ্যই বাড়ানো হবে। সে বলবে, এটা (মর্যাদা বৃদ্ধি) কীভাবে হলো? বলা হবে- তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনার বদৌলতে।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, দারেমি, মিশকাত)

৪. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো সন্তান তার বাবার হক আদায় করতে সক্ষম নয়। তবে সে যদি তাকে দাসরূপে পায় এবং তাকে খরিদ করে আজাদ করে দেয় (তাহলে কিছু হক আদায় হয়)।’ (ইবনে মাজাহ, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)

৫. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসুল! কার সঙ্গে সদাচরণ করবো? তিনি বলেন, তোমার মায়ের সঙ্গে। তারা বলেন, অতঃপর কার সঙ্গে? তিনি বলেন, তোমার বাবার সঙ্গে। তিনি বলেন, অতঃপর কার সঙ্গে? তিনি বলেন, অতঃপর পর্যায়ক্রমে কাছাকাছিদের সঙ্গে।’ (ইবনে মাজাহ, বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)

সুতরাং সব সন্তানের উচিত, বাবার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা। পরিবার প্রতিপালনে বাবাকে সহযোগিতা করা। বাবার প্রতি সদাচরণ পারিবারিক দায়িত্ব পালনেও হবে সহায়ক।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বাবার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনের তাওফিক দান করুন। বাবার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় হাদিসে নির্দেশিত উপদেশ মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty + nineteen =

Back to top button