জাতীয়

যাদের ফাঁসি দেওয়া হল তাঁরাই নেই রাজাকারের তালিকায়!

স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর প্রথম ধাপে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ তালিকা প্রকাশের পর বিতর্ক বাড়ছেই। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে আদালতের রায়ে সরকার যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে, তাদের মধ্যে আলোচিতদের নামই নেই এ তালিকায়। এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

গত ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার, আলবদর ও আল-শামস বাহিনীর সদস্যের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ তালিকায় নেই— যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী), আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মীর কাসেম আলী ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানসহ আলোচিত অনেকে।

অথচ রাজাকারের এ তালিকায় কমপক্ষে ১৭ মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে। রয়েছে আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতার নামও। যাদের অনেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত। ৩৮ নারীও রাজাকার হিসেবে তালিকায় রয়েছেন। ৯২ হিন্দু ধর্মাবলম্বীর নামও রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সময় কমান্ডার ও বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই–বাছাই কমিটির সদস্যও এ তালিকায় রাজাকার হিসেবে রয়েছেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কয়েকজন স্বজনের নামও এসেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায়। আব্দুল হাই সেরনিয়াবাত তালিকায় রাজাকার হিসেবে স্থান পেয়েছেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকের হাতে নিহত শহীদ সেরনিয়াবাতের বাবা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বেয়াই। এ ঘটনায় বিস্মিত তার সন্তান ও স্বজনরা।

বঙ্গবন্ধুর ফুপুর সঙ্গে আব্দুল হাই সেরনিয়াবাতের বাবা আব্দুল খালেক সেরনিয়াবাতের বিয়ে হয়। এ সূত্রে আব্দুল হাই সেরনিয়াবাত বঙ্গবন্ধুর ফুপাতো ভাই। পরে বঙ্গবন্ধুর বোন আমেনা বেগমের সঙ্গে আব্দুল হাই সেরনিয়াবাতের ছোট ভাই শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বিয়ে হয়। এ দিক থেকে বঙ্গবন্ধুর বেয়াই হন তিনি। সব মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

প্রধানমন্ত্রীর ‘হক চাচা’ খ্যাত মজিবুল হক ছিলেন ১৯৭১ সালে তৎকালীন বরগুনা মহকুমা মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম পরিষদের সদস্য। অথচ তার নামও এসেছে রাজাকারের তালিকায়।

কোন প্রক্রিয়ায় এ তালিকা প্রকাশ হয়েছে, এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া, রাজনৈতিক অঙ্গনসহ নানা মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে।

যাচাই-বাছাই না করে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করায় ভুল হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দালাল আইনে রাজাকারদের তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে অনেকের নামের পাশে নোট ছিল, কারও নামে মামলা ছিল, সে বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই না করেই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এজন্যই এমন অসঙ্গতি। তাই নিবিড়ভাবে যাচাই-বাছাই করে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

এ দিকে রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম আসায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। মঙ্গলবার তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যা পেয়েছি তাই প্রকাশ করা হয়েছে। ভুল-ভ্রান্তি অনেক বেশি হলে এ তালিকা প্রত্যাহার করা হবে। আর ভুলের পরিমাণ কম হলে তালিকায় ভুলবশত যাদের নাম এসেছে, সেগুলো প্রত্যাহার করা হবে। প্রয়োজন হলে তারা আদালতেও যেতে পারেন।

রাজাকারের তালিকা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষকরাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ এ তালিকা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন, সূত্র অধিকার নিউজ।

 

আরও জানুনঃ চলমান রাজনীতি, ও  রাজাকার তালিকা নিয়ে তোলপাড়-ক্ষোভ বাংলাদেশে

Tag: latest political news, political latest news

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven + ten =

Back to top button