ধর্ম ও জীবন

দেশকে ভালোবাসার শিক্ষা দেয় ইসলাম

মক্কাবাসী যখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মক্কা থেকে অন্যায়ভাবে তাড়িয়ে দেয় তখনো মক্কার মায়া ছাড়তে পারছিলেন না তিনি। মক্কার প্রতি ভালোবাসায় তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছিল। মক্কা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় পেছন ফিরে বারবার মক্কার দিকে তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ‘আল্লাহর কসম! হে মক্কা, নিশ্চয়ই তুমি সবচেয়ে প্রিয় ও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম স্থান। আমাকে যদি এখান থেকে বের করে না দেওয়া হতো আমি কিছুতেই তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।’ তিরমিজি।

সবারই জানা, মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতৃভূমি মক্কার কথা ভোলেননি। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর মদিনাকে নিজের দেশ হিসেবে গণ্য করে মদিনার সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ধর্মবর্ণনির্বিশেষে মদিনার সব নাগরিককে নিয়ে এর সুরক্ষার জন্য অনেক যুদ্ধও করেছেন তিনি।

ঐতিহাসিক মদিনা সনদের অন্যতম মৌলিক ধারা ছিল- শত্রু কর্তৃক মদিনা আক্রান্ত হলে এখানকার সব নাগরিক ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করবে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য ও চাহিদার উপযোগী ভূখন্ডে তার জন্মের ব্যবস্থা করেছেন বলে আমরা মানুষ সারা বিশ্বে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসী হয়েছি। যে যেই অঞ্চলের অধিবাসী তাকে সেই অঞ্চলে স্বাধীনভাবে বিচরণ করার লক্ষ্যে প্রাকৃতিক নিয়মে সে অঞ্চল তাকে স্বাধীন ভূখ- হিসেবে দান করা হয়েছে।

যতক্ষণ একে অন্যকে অত্যাচার করার মাধ্যমে সে স্বভাবজাত স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়া না হয় ততক্ষণ সে অঞ্চলটি তার জন্য স্বাধীন ভূখ- হিসেবে বিবেচিত হয়। একটি স্বাধীন ভূখন্ডের স্বাধীনতার প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো নিরাপত্তা। সেজন্য হজরত ইবরাহিম (আ.) যখন মক্কাকে নিজ নগর হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন তখন সেই ভূখন্ডের জন্য প্রথম যে দোয়াটি করেছিলেন তা হলো নিরাপত্তার দোয়া।

এ দোয়া সম্পর্কে উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘স্মরণ কর সেই সময়ের কথা যখন ইবরাহিম বলেছিল- হে আমার প্রতিপালক! এই নগরীর তুমি নিরাপত্তা দান কর।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১২৬। এই নিরাপত্তার অর্থ ব্যাপক। একটি অঞ্চলের চারদিকে শুধু সেনা সদস্যদের পাহারায় রত থাকার নামই নিরাপত্তা নয় বরং একই অঞ্চলে বসবাসকারী প্রত্যেক পক্ষ অন্য পক্ষের কাছে নিরাপদ থাকার নামই নিরাপত্তা, অর্থাৎ সন্তান মা-বাবার কাছে, মা-বাবা সন্তানের কাছে, স্ত্রী স্বামীর কাছে, স্বামী স্ত্রীর কাছে, ছাত্র শিক্ষকের কাছে, শিক্ষক ছাত্রের কাছে, শ্রমিক মালিকের কাছে, মালিক শ্রমিকের কাছে, শাসক শাসিতের কাছে, শাসিতরা শাসকের কাছে নিরাপদ থাকা মানেই নিরাপত্তা।

এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঝুঁঁকি মনে করলে তখন এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করার মিশনে লিপ্ত হয়ে যায়, অন্যদিকে এই ফাঁকে আল্লাহ-প্রদত্ত নিয়ামত স্বাধীনতা লুণ্ঠিত হয়ে যায়। স্বাধীনতার সুরক্ষার জন্য যা খুবই জরুরি তা হলো, পারস্পরিক জুলুম পরিহার করা, আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আমি এসব জনপদ ধ্বংস করে দিয়েছি যখন তারা পারস্পরিক জুলুম শুরু করে দিয়েছে।’ সূরা ১৮, আয়াত ৫৯।

মানবীয় দুর্বলতার সুযোগে পারস্পরিক জুলুম যখন প্রতিশোধস্পৃহা জাগিয়ে তোলে নিজের পায়ে কুড়াল মেরে হলেও, শত্রুদের সঙ্গে আঁতাত করে হলেও তখন প্রতিশোধ নেওয়া মুখ্য হয়ে যায়। এই দুঃসময়ে ঐক্য বিনষ্ট হয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব লুণ্ঠিত হয়ে যায়।

এজন্যই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের পর মক্কার অধিবাসীদের মধ্যে একে অন্যকে  ঝুঁকি মনে করার প্রবণতা সৃষ্টি হওয়া থেকে দূরে রাখা এবং প্রতিশোধস্পৃহা দমন করার নিমিত্ত নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে স্পষ্ট ঘোষণা দেন ‘আজকে কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।’ অর্থাৎ অতীতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনৈক্য সৃষ্টি করে এই ভূখন্ডের ক্ষতিসাধন ও অর্জিত স্বাধীনতার ক্ষতি হয় সে রকম কোনো কাজ করা যাবে না, সূত্র বিডি প্রতিদিন।

আরও জানুনঃ  ধর্ম ও জীবন  ও  ইসলাম শান্তির ধর্ম ও কিভাবে কেন

Tag: Online Bangla news papers, online news papers bangal

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + 14 =

Back to top button