আগেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে পরের ম্যাচ বা ম্যাচগুলিতে একটু নির্ভার থাকার দিন আর নেই। আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপ বাছাই বলে কথা! সেই পরীক্ষায় লেটারমার্ক নিয়ে দাপটের সঙ্গেই উৎরে গেছে বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়েকে তাদেরই মাটিতে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। আজ মঙ্গলবার হারারে স্পোর্টস ক্লাবের ম্যাচটি ৫ উইকেটে জিতে দেশবাসীকে আগাম ঈদ উপহারই যেন দিলো তামিম ইকবালের দল।
প্রথম ইনিংসেই বড় একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিল জিম্বাবুয়ে, ২৯৯ রানের লক্ষ্য দিয়ে। এ মাঠে রানতাড়ায় তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোর গড়তে হতো বাংলাদেশকে। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর এতো রান তাড়ায় ভাঙতে হতো নিজেদের রেকর্ডও। বাংলাদেশ করল সেসব।
লিটন দাসকে নিয়ে শুরুটা দারুণ করেছিলেন তামিম ইকবাল। ক্যারিয়ারের ১৪তম সেঞ্চুরির পথে লিটনের পর সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়েও ফিফটি জুটি গড়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। অবশ্য তাঁর এবং ঠিক পরের বলে মাহমুদউল্লাহর উইকেট চাপে ফেলেছিল বাংলাদেশকে। তবে সাড়ে চার বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামা নুরুল সে চাপ একরকম উড়িয়েই দিয়েছেন। মোহাম্মদ মিঠুনের ধীরগতির ইনিংসেও তাই চাপ বাড়েনি আর। শেষ পর্যন্ত ৩৯ বলে ৪৫ রান অপরাজিত ছিলেন নুরুল। শেষে আফিফ নেমে খেলেছেন ১৭ বলে ২৬ রানের অপরাজিত ইনিংস। লুক জঙ্গুয়েকে ছয়ের পর চার মেরে ম্যাচ শেষ করেছেন আফিফ। বাংলাদেশ জিতেছে ১২ বল হাতে রেখেই।
প্রথম দুই ম্যাচে সিরিজ জিতে গেলেও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ম্যাচেও আরও ১০ পয়েন্টের অভিযানে নেমেছিল বাংলাদেশ। গত এপ্রিলে দেশের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জিতলেও শেষ ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর অধিনায়ক তামিম ইকবাল আক্ষেপ করেছিলেন ওই ১০ পয়েন্টের জন্য। এবার কোনো পয়েন্ট হাতছাড়া না করতে মরিয়া ছিল দল।
তাতে ষোলআনা সফল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়েকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেই সেই লক্ষ্য পূরণ করেছে রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। দেশের বাইরে এর আগে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করতে পেরেছিল কেবল ২০০৬ সালে কেনিয়া ও ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
সিরিজ থেকে সম্ভাব্য প্রায় সবকিছুই পেল বাংলাদেশ। দেশের বাইরে প্রতিপক্ষকে তৃতীয়বার হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ মিলল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পঞ্চাশতম ওয়ানডে জয় এলো। এই প্রথম কোনো দলের বিপক্ষে জয়ের ফিফটি করতে পারল বাংলাদেশ।
আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের ৩০ পয়েন্টের সবকটিও পেল বাংলাদেশ। ৮০ পয়েন্ট নিয়ে আরও সংহত হলো পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয় স্থান। আর এসব কিছুই এসেছে দলের অভিজ্ঞ কাণ্ডারী মাহমুদউল্লার দুইশতম ওয়ানডের মাইলফলক ম্যাচে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে ইনিংস : ৪৯.৩ ওভারে ২৯৮ (চাকাভা ৮৪, মারুমানি ৮, টেইলর ২৮, মায়ার্স ৩৪, মাধেভেরে ৩, রাজা ৫৭, বার্ল ৫৯, জঙ্গুয়ে ৪* টিরিপানো ০, চাতারা ১, মুজারাবানি ০; তাসকিন ১০-১-৪৮-১, সাইফ ৮-০-৮৭-২, মুস্তাফিজ ৯.৩-০-৫৭-৩, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৪৫-২, সাকিব ১০-০-৪৬-১, মোসাদ্দেক ২-০-১৩-০)।
বাংলাদেশ ইনিংস : ৪৮ ওভারে ৩০২/৫ (লিটন ৩২, তামিম ১১২, সাকিব ৩০, মিঠুন ০, মাহমুদউল্লাহ ০, সোহান ৪৫*, আফিফ ২৬*; মুজরাবানি ৮-০-৪৩-০, চাতারা ৮-০-৫৬-০, জঙ্গুয়ে ৭-০-৪৪-১, টিরিপানো ৭-০-৬১-২, মাধেভেরে ১০-০-৪৫-২, রাজা ৫-০-২৩-০, বার্ল ৩-০-২৩-০)।
ফল : বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : তামিম ইকবাল।
সিরিজ : তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০তে জয়ী।
ম্যান অব দ্য সিরিজ : সাকিব আল হাসান।
তামিমের সেঞ্চুরিতে জিইয়ে বাংলাদেশের আশা
লক্ষ্যটা বিশাল। তার শুরুটাও হয়েছিল সাবধানী। ওপেনিংয়ে দারুণ এক ধীর ৮৮ রানের জুটিতে দিচ্ছিলেন ভালো কিছুর ইঙ্গিত। তবে লিটন দাসের বিদায়ে হয় ছন্দপতন। সেখান থেকে আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসানকে নিয়ে ভালোই এগুচ্ছিলেন তামিম ইকবাল। সাকিবকে হারিয়ে ফের ছন্দপতন। ৪২ বলে ৩০ রান করে আউট হলেন দেশসেরা এই অলরাউন্ডার।
তবে একপাশ আগলে দলকে টেনে নিচ্ছেন অধিনায়ক। এই পথে তামিম তুলে নিয়েছেন ওয়ানডেতে নিজের ১৪তম সেঞ্চুরি।
৩১ ওভার শেষে ঐ দুই উইকেট হারানো বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৯২। ১০৭ রানে খেলছেন তামিম, তাকে সঙ্গ দিতে উইকেটে ১০ রান করা মোহাম্মদ মিঠুন।
২৯৯ রানের লক্ষ্য পেল বাংলাদেশ। দ্রুত রানের চেষ্টায় শেষ দিকে হুড়মুড়িয়ে উইকেট হারিয়ে তিনশ ছোঁয়া হলো না জিম্বাবুয়ের। তবে যা হলো, সেটিও কম নয়। বাংলাদেশকে ২৯৯ রানের লক্ষ্য দিতে পারল তারা।
সিরিজের সেরা ব্যাটিং উইকেটে শুরুটা ভালো করেও এক পর্যায়ে তারা অস্বস্তিতে ছিল ১৭২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে। ষষ্ঠ উইকেটে সিকান্দার রাজা ও রায়ান বার্লের দারুণ জুটি দলকে এগিয়ে নেয় বড় স্কোরের পথে। ৮০ বলে ১১২ রানের জুটি গড়েন দুজন।
শেষ তিন ওভারে প্রত্যাশিত রান না উঠলেও শেষ ১০ ওভারে জিম্বাবুয়ে তুলেছে ৯৪ রান। ১২ বলের মধ্যে ১৪ রানে জিম্বাবুয়ে হারাল শেষ ৫ উইকেট। সিরিজের আগের দুই ম্যাচ বাংলাদেশের বোলিং দুর্দান্ত হলেও এ দিন ছিল একদমই বিবর্ণ। তাসকিন ছিলেন অধারাবাহিক, সাইফ উদ্দিন এলোমেলো। দলে ফিরে মুস্তাফিজ ছিলেন ভালো-মন্দ মিলিয়ে। সাকিব খারাপ করেননি। তবে দলের সেরা বোলার ছিলেন সম্ভবত মাহমুদউল্লাহ।
বাংলাদেশের ব্যাটিং এই ম্যাচে অনেক লম্বা। উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য দারুণ। তার পরও লক্ষ্য তাড়া করতে হলে অনেক ভালো খেলতে হবে তাদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
জিম্বাবুয়ে ইনিংস : ৪৯.৩ ওভারে ২৯৮ (চাকাভা ৮৪, মারুমানি ৮, টেইলর ২৮, মায়ার্স ৩৪, মাধেভেরে ৩, রাজা ৫৭, বার্ল ৫৯, জঙ্গুয়ে ৪* টিরিপানো ০, চাতারা ১, মুজারাবানি ০; তাসকিন ১০-১-৪৮-১, সাইফ ৮-০-৮৭-২, মুস্তাফিজ ৯.৩-০-৫৭-৩, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৪৫-২, সাকিব ১০-০-৪৬-১, মোসাদ্দেক ২-০-১৩-০)।