করোনার এই ক্রান্তিকালে অসহায় মানুষের মাঝে কোরবানির মাংস বিতরণ করেছে ক্রিকেটার আরিফা জাহান বিথী। চলমান পরিস্থিতিতে ঈদের দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ৭০০ পরিবারে মাংস পৌঁছে দেন তিনি। বিভিন্নজনের সহযোগিতায় তিনটি গরু ও তিনটি খাসি কোরবানি করে মানবিক এ কাজ করেছেন বিথী।
বুধবার (২১ এপ্রিল) দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত রংপুর নগরীর ঘনবসতিপূর্ণ নূরপুর, মহাদেবপুর, লালবাগ রেলস্টেশন, আদর্শপাড়া, মন্ডলপাড়া এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অসহায়-দুস্থ, কর্মহীন, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারে কোরবানির মাংসের প্যাকেট বিতরণ করেন। মানবিক এই সহায়তার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বিথীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৪ জুলাই বিথীর তার নিজের ফেসবুক আইডিতে অসহায় দুস্থদের জন্য ঈদে কোরবানি করতে সহায়তা চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে লেখা ছিল ‘আপনারা সহযোগিতা করলে এই কোরবানি ঈদে অসহায় নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ৪০০ পরিবারের জন্য ইনশাআল্লাহ কোরবানি আয়োজন করা হবে। আর সেই গোশত ইনশাআল্লাহ সকলের কাছে নিজে পৌঁছে দেব।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিথীর এই মানবিক পোস্ট দেখে অনেকেই সহযোগিতার আশ্বাস দেন। মাত্র সাতদিনেই দেশ-বিদেশের অন্তত ৭০ জনের কাছ থেকে চার লাখ টাকার মতো অর্থ যোগান আসে। সেই টাকায় কোরবানির জন্য তিনটি গরু ও তিনটি ছাগল কেনার ব্যবস্থা হয়ে যায়।
তারপর ভুক্তভোগীদের বাড়ি বাড়ি খোঁজ নিয়ে একটি খসড়া তালিকা তৈরি করেন বিথী। পূর্বপরিকল্পনার চেয়ে একটি বেশি গরু কিনতে পারায় ভুক্তভোগীর সংখ্যা ৪০০ থেকে ৭০০ জনে পৌঁছায়। এ তালিকায় ত্রিশজন নৈশ্যপ্রহরীসহ দিনমজুর, রিকশাচালক, শ্রমিক ও অসহায় দুস্থরা রয়েছেন।
ঈদের দিন সকালে গরু ও ছাগল কোরবানি করা হয়। এরপর মাংস কাটাকাটি ও প্যাকেট করতে বিথীকে সহযোগিতা করে তার নিজের গড়া উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমির একঝাঁক কিশোরী। বিথীর মানবিক এ উদ্যোগে অংশ নিতে ছুটে আসেন তার নিজ এলাকার বেশকিছু তরুণ-তরুণী। দুপুরের পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তালিকা দেখে দেখে পাড়ামহল্লায় ঘুরে ঘুরে মাংস বিলি করেছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) দুপুরে বিথী তার উদ্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়ানো সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট দেন।
সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ঈদ মোবারক। আলহামদুলিল্লাহ। ৩টি গরু এবং ৩টি ছাগল কোরবানি করে ৭০০ পরিবারের মাঝে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিলাম। যার সম্পূর্ণ ক্রেডিট আপনাদের। কালকের (২১ জুলাই) দিনটা আমাদের জন্য ছিল অসাধারণ।’
বিথী আরও লিখেছেন, ‘এই কাজে যারা যারা পাশে ছিলেন, তাদের সবাইকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা। আপনারা পাশে না থাকলে হয়তো সম্ভব হতো না এত সুন্দর কাজটি সম্পূর্ণ করা। ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির সময়টা ছিলো একদম অন্যরকম। তাদের চোখে মুখের ভাষা বলে দিচ্ছিল, তারা কতটা খুশি ছিলেন।’
আরিফা জাহান বিথী বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে অসহায়-দুস্থরা খুব বেশি ভালো নেই। বিশেষ করে মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো ভীষণ কষ্টে আছে। ঈদের সবাই যাতে একবেলা কোরবানির মাংস রান্না করে খেতে পারেন, এ জন্যই উদ্যোগ নিয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, মানবিক সহায়তা চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার পর দেশের এবং প্রবাসের অনেকের কাছ থেকে সাড়া পেয়েছি। সত্যি আমি আনন্দিত, এ রকম কাজ করতে পেরে। বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া মাংসের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুপাতে। যাতে সব পরিবারের সবাই ভালো খেতে পারেন।
উল্লেখ্য, করোনা মহামারির শুরুর দিকে সমাজের অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সেবায় মেনে পড়েন আরিফা জাহান বিথী। তার এ উদ্যোগে জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটার সাড়া দেন। গেল দেড় বছরে পাঁচ হাজারের বেশি অসহায়, দুস্থ, কর্মহীন মানুষের পাশাপাশি সন্তানসম্ভবা নারীকে সেবা দিয়েছেন সাবেক এই ক্রিকেটার।
নিজের জমানো টাকা আর অন্যের আর্থিক সহযোগিতার সমন্বয়ে কয়েক হাজার মানুষের দুয়ারে চাল, ডাল, তেল, লবণ, ফল, দুধ, ডিম ও হরলিকসসহ প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার পৌঁছে দিয়েছেন।
রমজানেও অসহায় ব্যক্তিদের হাতে হাতে ইফতার পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। এই নারী ক্রিকেটার অন্তত ২৫ অসহায় নারীকে সেলাই মেশিন দিয়ে স্বাবলম্বী করেছেন। ঘরহীন দশ পরিবারকে দিয়েছেন নতুন ঘর। সহায়-সম্বলহীন ২১ জন শিক্ষার্থীকে কলেজে ভর্তির জন্য আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে রংপুর জেলা স্টেডিয়ামে নারীদের জন্য উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি নামে প্রশিক্ষণ একাডেমি গড়েন বিথী। সেখানে ২৫০ জন নারী বিনামূল্যে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
আরিফা জাহান বিথী ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে খেলেছেন। ঢাকার ওরিয়েন্ট স্পোর্টিং ক্লাব, কলাবাগান, রায়েরবাজার ক্রিকেট দলে ওপেনিং ব্যাট করতে নামতেন। ২০১৭ সালে অসুস্থতার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে পেশাদার ক্রিকেট ক্যারিয়ার বিসর্জন দিতে হয়েছে তাকে।