Lead Newsকরোনাভাইরাস

২৪ ঘন্টায় রংপুরে ১৪ জনের মৃত্যু, রোগীরা পাচ্ছে না সঠিক স্বাস্থ্যসেবা

রংপুর মেডিকেলের অধিকাংশ যন্ত্রাংশ বিকল

রংপুর বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৫০২ জন। এ নিয়ে তিন দিনে বিভাগে করোনায় ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা গড়ে প্রতিদিন ১৪-১৫ জনে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার (০৩ আগস্ট) দুপুরে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মোতাহারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিভাগের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে অন্তত ১০-১৫ জনের মৃত্যু হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের হিসাবে ধরছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেশির ভাগ প্রয়োজনীয় মেশিন নষ্ট হওয়াতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে ।
স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে জানা যায়, সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রংপুরের চারজন, দিনাজপুরের চারজন, গাইবান্ধার তিনজনসহ, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারীর একজন করে রয়েছেন।

এ সময়ে বিভাগে ১ হাজার ৭৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে দিনাজপুরের ১১৫ জন, রংপুরের ৮৭ জন, নীলফামারীর ৬৩ জন, পঞ্চগড়ের ৬২ জন, কুড়িগ্রামের ৫৯ জন, গাইবান্ধার ৫৬ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ৩৭ জন ও লালমনিরহাটের ২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত বিবেচনায় আক্রান্তের হার ২৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

নতুন করে মারা যাওয়া ১৪ জনসহ বিভাগে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৬৪ জনে। এর মধ্যে দিনাজপুরে ২৭৬ জন, রংপুরে ২১২ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৮৬, নীলফামারীতে ৬৯, পঞ্চগড়ে ৬১, লালমনিরহাটে ৫৬, কুড়িগ্রামে ৫৪ ও গাইবান্ধায় ৫০ জন রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৪৪৭ জন।
বিভাগের আট জেলায় এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৯২৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দিনাজপুুরে ১২ হাজার ৯২৫ জন, রংপুরে ১০ হাজার ২০২ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ৬ হাজার ২৪৩ জন, গাইবান্ধায় ৩ হাজার ৯৫১ জন, নীলফামারীর ৩ হাজার ৭৪১ জন, কুড়িগ্রামের ৩ হাজার ৭০০ জন, লালমনিরহাটের ২ হাজার ৩০১ জন এবং পঞ্চগড়ের ২ হাজার ৮৬৬ জন রয়েছেন।

করোনাভাইরাস শনাক্তের শুরু থেকে এ পর্যন্ত রংপুর বিভাগে ২ লাখ ২০ হাজার ৫৪৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। বিভাগের আট জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে দিনাজপুর, রংপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলায়। এ ছাড়া সীমান্তঘেঁষা জেলাগুলোয় শনাক্ত ও মৃত্যু বেড়েছে।

করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হওয়াতে রংপুর বিভাগের হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির চাপ বেড়ে গেছে। সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য মিলছে না আইসিইউ শয্যা। হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন চাহিদাও বেড়েছে। প্রতিদিন করোনার উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫ জনের মৃত্যু হচ্ছে।

বর্তমানে বিভাগের আট জেলার সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসাসেবার জন্য আইসিইউ শয্যা রয়েছে মাত্র ৪৬টি। এর মধ্যে রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে ১০টি (সচল ৮টি), রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০টি এবং দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬টি শয্যা রয়েছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধাসহ ৫০ শয্যার নতুন আরেকটি করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড চালুর কথা থাকলেও তা কালক্ষেপণ হচ্ছে। এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ মেশিন নষ্ট হয়ে আছে। এর মধ্যে সিটি স্ক্যান ও এমআরআই মেশিন দুই বছরের অধিক সময় ধরে বিকল।

দেড় বছর ধরে এনজিওগ্রাম মেশিনটিও নষ্ট। কার্ডিওলজি বিভাগে প্রেস মেকার বসানো পিসিআই, এনজিওগ্রাম মেশিনও অচল। আইসিইউ, সিসিইউ ও ডায়ালাইসিস ইউনিটে প্রোটেবল এক্স-রে মেশিন, ইকো মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন নেই। আইসিইউ, সিসিইউ কক্ষে আধুনিক বেডের ব্যবস্থা নেই।

সম্প্রতি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অত্যাবশকীয় মেশিন ও আধুনিক বেড জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর লিখিত অনুরোধ জানিয়েছে রংপুর-৪ আসনের সাংসদ ও সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 − 4 =

Back to top button