খ্রিস্টানদের বড়দিন ও কুরআনের বর্ণনায় ঈসা আঃ
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব ও প্রার্থনার দিন ২৫ ডিসেম্বর তথা বড়দিন। খ্রিস্টানদের ধর্ম বিশ্বাস মতে, ‘এই দিনেই খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট পৃথিবীতে এসেছিলেন। খ্রিস্টান সম্প্রদায় হজরত ঈসা আলাইহিস সালামকে যিশুখ্রিস্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
সারাবিশ্বসহ বাংলাদেশেও এ দিনটি যথাযথ মর্যাদায় আনন্দ উৎসব, ধর্মীয় আচার ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে খ্রিস্টানরা উদযাপন করে থাকেন। সময়ে পরিমাপে নয় বরং সম্মানের সঙ্গে এ দিনটিকে তারা বড় দিন হিসেবে পালন করে থাকেন। এ দিনে বাড়িঘর বর্ণিল আলোয় সাজিয়ে তোলেন।
খ্রিস্টানদের যিশুখ্রিস্ট ছিলেন মহান আল্লাহ তাআলার প্রেরিত নবি ও রাসুল। আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে পথহারা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে অসংখ্য নবি রাসুল পাঠিয়েছেন। তাদের একজন হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম। তিনি শুধু খ্রিস্টানদের কাছে সম্মানিত এমনটি নয়, বরং মুসলিম ধর্ম বিশ্বাসেও তিনি সম্মানের স্থানে অধিষ্ঠিত। খ্রিস্টানদের কাছে যিনি যিশুখ্রিস্ট তিনি মুসলিমদের কাছে হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম।
পবিত্র কুরআনুল কারিমে হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম-এর জন্ম থেকে শুরু করে অনেক বিষয়ই বর্ণিত হয়েছে। যার কিছু ধারা বর্ণনা তুলে ধরা হলো-
হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম
আল্লাহ তাআলা হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম নিজ অনুগ্রহ ও শক্তিকে পিতা ছাড়াই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। কুরআনুল কারিমে তার জন্ম সম্পর্কে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘যখন ফেরেশতারা বললো, হে মারইয়াম! আল্লাহ তোমাকে তাঁর এক সুমহান বানীর সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম হলো মাসিহ ঈসা ইবনে মারইয়াম। দুনিয়া ও আখেরাতে তিনি মহাসম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর একান্ত প্রিয়জনদের অন্তর্ভূক্ত হবেন। যখন তিনি মায়ের কোলে থাকবেন এবং পূর্ণ বয়স্ক হবেন তখন তিনি মানুষের সাথে কথা বলবেন। আর তিনি সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৪৫-৪৬)
হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর মা মারইয়াম, খ্রিস্টানদের কাছে যিনি মা মেরি হিসেবে পরিচিত; পুরুষের সংস্পর্শ ছাড়া কীভাবে মা হবেন, এ বিষয়টিও উঠে এসেছে পবিত্র কুরআনে-
‘তিনি বললেন, পরওয়ারদেগার! কেমন করে আমার সন্তান হবে; আমাকে তো কোনো মানুষ স্পর্শ করেনি। বললেন এ ভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা তা সৃষ্টি করেন। যখন কোনো কাজ করার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করেন তখন বলেন যে, ‘হয়ে যাও’ অমনি তা হয়ে যায়।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৪৭)
আল্লাহ তাআলা সুরা মারইয়ামে এ ব্যাপারে আরো স্পষ্ট করে হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম বৃত্তান্ত তুলে ধরেন-
১৬ : এই কিতাবে মারইয়ামের কথা বর্ণনা করুন, যখন সে তার পরিবারের লোকজন থেকে পৃথক হয়ে পূর্বদিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল।
১৭ : তারপর তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্যে সে পর্দা করলো। এরপর আমি তার কাছে আমার রূহ প্রেরণ করলাম, সে তার কাছে পুর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল।
১৮ : মারইয়াম বলল,আমি তোমার থেকে দয়াময়ের (আল্লাহর) আশ্রয় প্রার্থনা করি; যদি তুমি আল্লাহভীরু হও।
১৯ : সে বলল, আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা কাছ থেকে প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র ছেলে দান করে যাব।
২০ : মরিইয়াম বলল, কীভাবে আমার ছেলে হবে, যখন কোনো মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি আর আমি কখনো ব্যভিচারিণীও ছিলাম না ?
২১ : সে বলল, এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলেছেন, এটা আমার জন্যে সহজ সাধ্য এবং আমি তাকে মানুষের জন্যে একটি নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহস্বরূপ করতে চাই। এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।
২২ : তারপর তিনি গর্ভে সন্তান ধারণ করলেন এবং তৎসহ (গর্ভাবস্থায়) এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেলেন।
২৩ : প্রসব বেদনা তাঁকে এক খেজুর গাছের গোড়া আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। তিনি বললেন- হায়, আমি যদি কোনোরূপে এর আগে মরে যেতাম এবং মানুষের স্মৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে, যেতাম!
২৪ : তারপর ফেরেশতা তাকে নিম্নদিক থেকে আওয়াজ দিলেন যে, তুমি দুঃখ করো না। তোমার পালনকর্তা তোমার পায়ের নিচে একটি নহর জারি করেছেন।
২৫ : আর তুমি নিজের দিকে খেজুর গাছের কান্ডে নাড়া দাও, তা থেকে তোমার উপর সুন্দর পাকা খেজুর পড়বে।
২৬ : যখন আহার কর, পান কর এবং চক্ষু শীতল কর। যদি মানুষের মধ্যে কাউকে তুমি দেখ, তবে বলে দাও, আমি আল্লাহর উদ্দেশে রোজা মানত করছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে কথা বলব না।
২৭ : তারপর তিনি সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হলেন। তারা বলল, হে মারইয়াম, তুমি একটি অঘটন ঘটিয়ে বসেছ।
২৮ : হে হারূণ-ভাগিনী, তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলেন না এবং তোমার মাতাও ছিল না ব্যভিচারিনী।
২৯ : অতপর তিনি হাতে সন্তানের দিকে ইঙ্গিত করলেন। তারা বলল, যে কোলের শিশু তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব?
৩০ : সন্তান বলল, আমি তো আল্লাহর দাস। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবি করেছেন।
৩১ : আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন নামাজ ও জাকাত আদায় করতে।
৩২ : এবং জননীর অনুগত থাকতে এবং আমাকে তিনি উদ্ধত ও হতভাগ্য করেননি।
৩৩ : আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব।
৩৪ : এই মারইয়ামের পুত্র ঈসা। সত্যকথা, যে সম্পর্কে লোকেরা বিতর্ক করে।
৩৫ : আল্লাহ এমন নন যে, সন্তান গ্রহণ করবেন, তিনি পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা, তিনি যখন কোনো কাজ করা সিদ্ধান্ত করেন, তখন একথাই বলেনঃ হও এবং তা হয়ে যায়।
৩৬ : তিনি আরও বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ আমার পালনকর্তা ও তোমাদের পালনকর্তা। অতএব, তোমরা তার ইবাদত কর। এটা সরল পথ।
হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের সৃষ্টির দৃষ্টান্ত
আল্লাহ তাআলা পিতা ছাড়া হজরত ঈসা আলাইহিস সালামকে মায়ের পেট থেকে সৃষ্টি করেছেন, যেমনিভাবে তিনি হজরত আদম আলাইহিস সালামকে পিতা-মাতা ছাড়া সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমের মতোই। তাকে মাটি দিয়ে তৈরি করেছিলেন এবং তারপর তাকে বলেছিলেন ‘হয়ে যাও’ সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৫৯), সূত্র জাগো নিউজ।
আরও পড়ুন এখানেঃ ধর্ম ও জীবন এবং ইসলামের মর্মকথা নিরাপত্তা ও শান্তি
Tag: Islamic news today, Today Islamic news, Islamic News update today