Lead Newsকূটনীতি

ইসলামাবাদে ছয় দেশের গোয়েন্দা প্রধানদের বৈঠক

তালেবানদের ক্ষমতায় ফেরা, তাতে পাকিস্তানের ভূমিকা বেশ ভাবিয়ে তুলেছে ভারতকে। এরই মধ্যে ভারতীয় মিডিয়ায় এ নিয়ে উদ্বেগের কথা তুলে ধরা হয়েছে একাধিকবার।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র পরিচালক উইলিয়াম বার্নস এরই মধ্যে ভারতে সাক্ষাত করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে। কান খাড়া করে দিয়ে সেসব বৈঠকের দিকে দৃষ্টি রেখেছে চীন, রাশিয়া, সঙ্গে পাকিস্তানও। এবার নতুন আরেক আয়োজন করে আলোচনায় এসেছে পাকিস্তান।

শনিবার তারা পাকিস্তান, ইরান, চীন, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের গোয়েন্দা প্রধানদের নিয়ে বিরল এক মিটিং আয়োজন করে রাজধানী ইসলামাবাদে। সচরাচর এতগুলো দেশের গোয়েন্দা প্রধানের এমন বৈঠকের খবর পাওয়া যায় না। অনলাইন ডন এবং এক্সপ্রেস ট্রিবিউন খবরে বলছে, ইসলামাবাদের ওই বৈঠকে আফগানিস্তানের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আলোচনা হয়েছে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় তা নিয়ে। বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে যে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজ হামিদ আঞ্চলিক গোয়েন্দা প্রধানদের এই বৈঠক আহ্বান করেছিলেন। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পক্ষই নিশ্চিত করেনি।

ওই সূত্রগুলো আরো বলেছেন, আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতায় ফেরার পর সেখানে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব নিয়ে সফর করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ঝাঁপ বেড়ে গেছে গোয়েন্দা প্রধানদেরও। আর আগে এ অঞ্চল সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রধান, বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬ এর প্রধানরা। ভারতের উদ্বেগের প্রেক্ষিতে তারা পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে যেমন থেমেছেন, তেমনি নয়া দিল্লিতেও ঢুঁ মেরেছেন।

কিন্তু শনিবার পাকিস্তানের আইএসআই প্রধান আঞ্চলিক দেশগুলোর গোয়েন্দা প্রধানদের নিয়ে যে বৈঠক আহ্বান করেছেন, তাতে পরিষ্কার বোঝা যায়, আফগানিস্তানকে সামনে এগিয়ে নিতে একটি সর্বসম্মত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। তারা জোর দিয়ে বলার চেষ্টা করছে, আঞ্চলিক দেশগুলোসহ বিশ্ব আফগানিস্তানকে এভাবে নিঃসঙ্গ অবস্থায় ফেলে যেতে পারে না। তাদেরকে নতুন বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতায় ফেরার ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোতে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়ার যে নেতিবাচক সম্ভাব্যতা দেখা দিয়েছে তার প্রেক্ষিতে শনিবার গোয়েন্দা প্রধানদের বৈঠক উল্লেখ করার মতো।

পাকিস্তান, রাশিয়া, চীন এবং মধ্য এশিয়ার অনেক দেশ আফগানিস্তানে আরো অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে উদ্বিগ্ন। এতে পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে। এ ছাড়া তারা আইএস-কে এর মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। আইএস-কে শুধু আফগানিস্তানের জনগণের জন্যই হুমকি এমন নয়। একই সঙ্গে তা পাকিস্তান, চীন, ইরান ও রাশিয়ার জন্যও হুমকি।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে আঞ্চলিক দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক ভার্চ্যুয়াল মিটিং আয়োজন করেছিলেন। পাকিস্তান মনে করে, নতুন আফগানিস্তান পরিস্থিতিতে বিশ্বকে নতুন পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে পুরনো দৃষ্টিভঙ্গিকে পিছনে ফেলে আসার আহ্বান জানানো হয়। দাবি তোলা হয় একটি উন্নয়নশীল কৌশল অবলম্বনের, যা আফগানিস্তানের মাঠপর্যায়ের বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটে।

আফগানিস্তানে ভীতি এবং জবরদস্তি ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করে ইসলামাবাদ। তাই তারা মনে করে আন্তর্জাতিকভাবে আফগানিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার পরিবর্তে আন্তর্জাতিকভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনই হতে পারে উত্তম সমাধান। আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে মারাত্মক অবনমন হয়েছে।

এতে সেখানে বিপজ্জনক এক পরিণতি নেমে আসতে পারে বলে উদ্বিগ্ন পাকিস্তান। তাদের ভয়, অর্থনীতি ধসে পড়ার ফলে নিরাপত্তায় শূন্যতা সৃষ্টি হবে আফগানিস্তানে। তাতে সন্ত্রাসের হুমকি আবার নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক ধস সন্ত্রাসীদের জন্য একটি ‘উপহার’ হবে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মহাপরিচালক অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 5 =

Back to top button