Lead Newsআন্তর্জাতিক

বৈদেশিক হুমকি নয়, অভ্যন্তরীণ চরমপন্থী নিয়ে উদ্বিগ্ন আমেরিকা

৯/১১ হামলার ২০তম বার্ষিকীর প্রেক্ষাপটে আমেরিকানরা বলছে, তারা বিদেশ থেকে আগত হুমকির চেয়ে অভ্যন্তরীণ চরমপন্থা নিয়ে চিন্তিত। ‘দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’ (এপি) এবং ‘এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চ’-এর জরিপে অনুসারে এ তথ্য উঠে আসে।

জরিপে দেখা গেছে, ৬৫ শতাংশ মার্কিন উত্তরদাতা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারে হয় অত্যন্ত উদ্বিগ্ন অথবা খুবই উদ্বিগ্ন। অন্য দিকে ৫০ শতাংশ দেশের বাইরের চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারে এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

ডেমোক্র্যাট হিসেবে পরিচয়দানকারী মার্কিনিরা রিপাবলিকানদের চেয়ে স্বদেশীয় হুমকির বিষয়ে বেশি উদ্বিগ্ন- যথাক্রমে ৭৫ শতাংশ থেকে ৫৭ শতাংশ।

৯/১১ হামলার পর মার্কিন সরকার দেশের ভিতরে ও বিশ্বজুড়ে চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলিকে থামাতে ব্যাপক অভিযান শুরু করে, অনেক ক্ষেত্রে যার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় মুসলিম সম্প্রদায়।

ওয়াশিংটনের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল হামলার জন্য দায়ী উগ্রবাদী গোষ্ঠী আল-কায়েদা। এই সংগঠনটিকে আবার কোনো হামলা পরিচালনা বা দেশের ভিতরে সহানুভূতি পোষণকারীদের অনুপ্রাণিত করতে বাধা দিতে ইউএস সরকার নিজের সমস্ত শক্তি পরিচালনা করে।

এই সময় উগ্র ডানপন্থী পারিবারিক সন্ত্রাসের হুমকি প্রায়ই খাটো করে দেখা হয়েছিল, বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

‘আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন’ (এসিএলইউ)-এর জাতীয় সুরক্ষা প্রকল্পের পরিচালক হিনা শামসি গার্ডিয়ানকে বলেন, কেন্দ্রীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী সহিংসতার মাত্রা হালকাভাবে অনুধাবন করেছে এবং ভুল বুঝেছে, তা অনস্বীকার্য। এবং এর পিছনে ৯/১১-এর পরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো মুসলিম, অভিবাসী এবং অশ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়কে ভুল এবং অন্যায়ভাবে নিরাপত্তা হুমকির আতশী কাচের নিচে রেখে তাদের উপর নজরদারি এবং তদন্ত করার ক্ষেত্রে জোর দেওয়ার বিষয়টি আংশিকভাবে দায়ী তিনি যোগ করেন।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক নিউ আমেরিকার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯/১১ হামলার পর থেকে আমেরিকার মাটিতে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত অন্য যেকোনো গোষ্ঠীর তুলনায় ডানপন্থী চরমপন্থীদের হাতে বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

এপি এবং এনওআরসি সংস্থার জরিপে আরো দেখা গেছে, মার্কিনিদের মধ্যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ বিশ্বাস করে আফগানিস্তান এবং ইরাকের যুদ্ধ লড়াইযোগ্য ছিল। ৩৫ শতাংশ উত্তরদাতা বলেন, আফগানিস্তানের যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর ইরাক যুদ্ধের ব্যাপারে একই কথা বলেন ৩৪ শতাংশ।

২০০১ সালের অক্টোবরে আমেরিকা আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু করে এবং ২০২১ সালের আগস্টে দেশটি থেকে তারা সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন করে। আফগানিস্তানকে তালেবানের হাতে ছেড়ে দিয়ে আসে, যে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে যুক্তরাষ্ট্র গত দুই দশক ধরে যুদ্ধ করেছিল।

২০০৩ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির নেতা সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আক্রমণ করে। তারা দাবি করে বাগদাদের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে, যে দাবি পরে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এই জুলাই মাসে বাইডেন প্রশাসন দেশটিতে যুদ্ধ কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেয়।

গত সপ্তাহে ‘কস্ট অব ওয়ার প্রজেক্ট’ প্রকাশিত একটি গুরুত্বপূর্ণে প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আফগানিস্তান, ইরাক এবং অন্যান্য অঞ্চলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে প্রায় ১০ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে- যার মধ্যে কমপক্ষে ৩৮৭,০৭২ জন বেসামরিক নাগরিক রয়েছে। ওয়াশিংটনের পরিচালিত এই যুদ্ধগুলোকে চিরকাল চলমান যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

‘কস্ট অব ওয়ার প্রজেক্ট’-এর আগের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এর ফলে কমপক্ষে ৩.৭ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যার মধ্যে প্রত্যক্ষ সহিংসতায় মারা গেছে লক্ষ লক্ষ মানুষ।

সূত্রঃ এপি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 + 17 =

Back to top button