৩-০ গোলে বার্সেলোনার দুঃখজনক হার
বার্সেলোনার দুঃস্বপ্নের সেই হারের পর পর্তুগালে ফেরাটা ভালো হলো না। প্রথমেই পিছিয়ে পড়ার পর খেলল এলোমেলো ফুটবল। সেই সুযোগই দারুণভাবে কাজে লাগালো বেনফিকা। প্রতি-আক্রমণে গুঁড়িয়ে দিল রোনাল্ড কুমানের দলকে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বুধবার রাতে ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচে ৩-০ গোলে হেরেছে বার্সেলোনা। প্রথম ম্যাচে একই ব্যবধানে হেরেছিল বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে।
লিসবনে প্রতিযোগিতাটির গত আসরে এক লেগের কোয়ার্টার-ফাইনালে বায়ার্নের বিপক্ষে ৮-২ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল বার্সেলোনা।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় প্রথম দুই ম্যাচে হারল বার্সেলোনা। প্রথম এই স্বাদ পেয়েছিল ১৯৭২-৭৩ মৌসুমে। সেবার প্রথম দুই ম্যাচে কাতালান ক্লাবটি হেরেছিল পোর্তোর বিপক্ষে।
গ্যারি লিনেকারের টুইটে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বার্সেলোনার হাল, “ওহ বার্সা! বেনফিকার বিপক্ষে ৩ গোলে পিছিয়ে। গোলশূন্য, পয়েন্টশূন্য ও আশাহীন। কঠিন সময়।”
হতাশায় মোড়ানো রাতের শেষটায় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন বার্সেলোনা ডিফেন্ডার এরিক গার্সিয়া। বল দখলে অনেক এগিয়ে থাকা বার্সেলোনা সেভাবে পরীক্ষা নিতে পারেনি বেনফিকা গোলরক্ষকের। সফরকারীদের আট শটের স্রেফ একটা ছিল লক্ষ্যে। স্বাগতিকদের ১২ শটের ছয়টি ছিল লক্ষ্যে, এর অর্ধেক যায় জালে।
প্রতিপক্ষের ধারহীন আক্রমণ, নড়বড়ে রক্ষণের ফায়দা দারুণভাবে তুলল বেনফিকা। সেই সঙ্গে পেল আসরে নিজেদের প্রথম জয়। জোড়া গোল করেন দারউইন নুনেস, অন্যটি রাফা সিলভা। ১৯৬১ সালের পর এই প্রথম বার্সেলোনাকে হারাল বেনফিকা।
ঘরের মাঠে তৃতীয় মিনিটেই এগিয়ে যায় বেনফিকা। প্রতি-আক্রমণ থেকে বল পেয়ে পায়ের কারিকুরি ও গতিতে গার্সিয়াকে এড়িয়ে কাছের পোস্ট দিয়ে জাল খুঁজে নেন নুনেস। ঝাঁপিয়েও বলের নাগাল পাননি মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন।
দুই মিনিট পর ব্যবধান ২-০ হতে দেননি বার্সেলোনা গোলরক্ষক। রোমান ইয়েরেমচুকের শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন তিনি।
শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলা বার্সেলোনা একাদশ মিনিটে সমতা প্রায় ফিরিয়েই ফেলেছিল। ফ্রেংকি ডি ইয়ংয়ের কাছ থেকে বল পেয়ে শট নিয়েছিলেন লুক ডি ইয়ং। কিন্তু দারুণ স্লাইডে নিশ্চিত গোল ঠেকিয়ে দেন লুকাস ভেরিস্সিমো। ফিরতি বলে এরিক গার্সিয়ার শট ব্যর্থ হয় লুক ডি ইয়ংয়ের গায়ে লেগে। বার্সেলোনা ডিফেন্ডারের পরের শট একটুর জন্য লক্ষ্যে থাকেনি।
পরের মিনিটে লুক ডি ইয়ংয়ের শট চলে যায় বার ঘেঁষে। অষ্টাদশ মিনিটে একই পরিণতি হয় চোট কাটিয়ে ফেরা পেদ্রির শটের।
ফ্রেংকি ডি ইয়ংয়ের নৈপুণ্যে ২৭ ও ৩০তম মিনিটে দুটি সুযোগ আসে বার্সেলোনার সামনে। প্রথমটিতে মেমফিস ডিপাই শট রাখতে পারেননি লক্ষ্যে। পরেরটিতে আবারও বাইরে মেরে দলকে হতাশ করেন লুক ডি ইয়ং।
চোটের জন্য ৩৩তম মিনিটে মাঠ ছাড়েন জেরার্দ পিকে। বদলি নামেন গাভি। সমতা ফেরাতে মরিয়া বার্সেলোনা ৫২তম মিনিটে আরও পিছিয়ে যেতে বসেছিল। মাঝমাঠ পর্যন্ত এগিয়ে এসে দলকে বিপদে ফেলে দিচ্ছিলেন টের স্টেগেন। তার ভাগ্য ভালো অনেক দূর থেকে ফাঁকা জালে বল পাঠাতে পারেননি নুনেস, পোস্টে লেগে বাইরে যায় তার শট।
আক্রমণে গতি বাড়াতে ৬৮তম মিনিটে আনসু ফাতি, কৌতিনিয়ো ও নিক গনসালেসকে মাঠে নামান বার্সেলোনা কোচ। পরের মিনিটে স্কোরলাইন ২-০ করে ফেলে বেনফিকা। জোয়াও মারিয়োর শট গোললাইন থেকে রোনালদ আরাহো ঠেকিয়ে দিলে ফিরতি বল জালে পাঠান সিলভা।
৭৯তম মিনিটে সফল স্পট কিকে স্কোর লাইন ৩-০ করেন নুনেস। ভিএআরে দেখে সের্জিনো দেস্তের হ্যান্ডবলের জন্য পেনাল্টি দেন রেফারি। নুনেস শট নেওয়ার আগেই বেনফিকার একজন ডি-বক্সে ঢুকে গেলেও অবশ্য গোলের বাঁশিই বাজান তিনি।
৮৭তম মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন গার্সিয়া। এর খানিক পর শেষ হয় বার্সেলোনার ভোগান্তি।
পয়েন্ট তালিকার সবার নিচে আছে কুমানের দল। গ্রুপের অন্য ম্যাচে দিনামো কিয়েভকে ৫-০ গোলে হারানো বায়ার্ন ৬ পয়েন্ট নিয়ে আছে শীর্ষে। ৪ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে বেনফিকা। তাদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ড্র করা দিনামোর পয়েন্ট ১।