স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

শীতকালীন সবজি বাঁধাকপির যত গুণাগুণ

সামনেই আসছে শীতকাল। আর শীতকালে আমাদের দেশের বাজারে দেখা মেলে নানা রকম বাহারি সবজির। এসব সবজির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাঁধাকপি।

বাঁধাকপি চাষের ইতিহাস মেলে চার হাজার বছর আগে থেকে। নানান দেশে বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া হয়ে থাকে এটি। এতে থাকা বিভিন্ন খনিজ উপাদানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ফোলেটসহ আরও অনেক কিছু।

বাঁধাকপির অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এটি প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ, হজম শক্তি বৃদ্ধিসহ দীর্ঘমেয়াদি রোগেও উপকারী হিসেবে কাজ করে।

আসুন জেনে নিই বাঁধাকপি খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে—

১. প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করে
আমাদের শরীর বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে বা নিরাময়ের বিষয়টি নির্ভর করে প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়ার ওপর। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ হৃদরোগ, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগসহ অনেক রোগের কারণ হতে পারে। বাঁধাকপিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় তা প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাঁধাকপি জাতীয় শাকসবজি খেলে তা রক্তের প্রদাহ কমায়।

২. ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
ভিটামিন সি আমাদের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি শরীরের ফ্রি র‌্যাডিক্যাল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে ক্যান্সারসহ অনেক দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দেয়। ২১টি গবেষণার বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, প্রতিদিন ১০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করলে তা ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। বাঁধাকপি ভিসামিন সির আঁধার।

৩. হজম শক্তির উন্নতি করে
হজম শক্তিকে উন্নত করতে চাইলে ফাইবার সমৃদ্ধ বাঁধাকপি বেছে নিতে পারেন। বাঁধাকপিতে থাকা অদ্রবণীয় ফাইবার আপনার মলত্যাগে উৎসাহিত করে পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া এটি অন্ত্রের উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধি করে। আর এই ব্যাক্টেরিয়াগুলো ইমিউন সিস্টেমকে রক্ষা করে এবং ভিটামিন কে২ ও বি১২-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উৎপাদনে সহায়তা করে।

৪. হার্টকে সুস্থ রাখে
লাল বাঁধাকপিতে অ্যাস্থোসায়ানিন নামে একটি শক্তিশালী যৌগ থাকে। আর অ্যান্থোসায়ানিন হল উদ্ভিদ রঙ্গক, যা ফ্লেভোনয়েড পরিবারের অন্তর্গত। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই রঙ্গক সমৃদ্ধ খাবার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। ৯৩ হাজার ৬০০ নারীসহ একটি গবেষণায় গবেষকরা দেখেছেন যে, যারা অ্যান্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি খান, তাদের হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক কম থাকে।

৫. রক্তচাপ কমায়
বাঁধাকপি পটাশিয়ামের অন্যতম একটি ভালো উৎস। আর পটাশিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং ইলেক্ট্রোলাইট, যা শরীরের সঠিকভাবে কাজ করার প্রয়োজন। শরীরে সোডিয়ামের প্রভাব মোকাবিলা করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করা পটাশিয়ামের অন্যতম প্রধান কাজ। তাই বাঁধাকপি খেলে তা আমাদের রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।

৬. কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
সঠিক হজম, হরমোন নিয়ন্ত্রণ এবং ভিটামিন ডির সংশ্লেষণের মতো শরীরের গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলো কোলেস্টেরলের ওপর নির্ভর করে। উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে শরীরে খারাপ এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গিয়ে তা হৃদরোগের ঝুঁকি সৃষ্টি করে। আর বাঁধাকপিতে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার ও উদ্ভিদ স্টেরোলস পদার্থ এলডিএল কোলেস্টেরলের অস্বাস্থ্যকর মাত্রা কমাতে পারে।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight − six =

Back to top button