বিবিধ

জবাই ছাড়াই পশুর মাংস খাবার উপায়

পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে বিপুল পরিমাণ মাংস ভক্ষণ করে মানুষ। মানুষের এই বিপুল পরিমাণ চাহিদা পূরণ করতে জবাই করতে হয় বহু সংখ্যক পশু-প্রাণী। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়া ছাড়াই খাওয়া যাবে মাংস। এ জন্য পশু জবাই করার প্রয়োজন হবে না ।

কিন্তু, সেজন্য গুনতে হবে মোটা অংকের টাকা।
জানা গেছে, “আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলেতে অবস্থিত আপসাইড ফুডস রেস্টুরেন্টে এক অভাবনীয় উপায়ে তৈরি হচ্ছে মুরগির মাংস। রেস্টুরেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উমা ভ্যালেটি জানান, পৃথিবীর ‘প্রায় এক হাজার মানুষ এখন পর্যন্ত এই ধরনের মুরগির মাংসের স্বাদ গ্রহণ করতে পেরেছে।”

জীবন্ত মুরগি থেকে টিস্যুর নমুনা নিয়ে ল্যাবে তৈরি করা হয় এই মাংস। এ পদ্ধতিতে প্রথমে বায়োপসির মাধ্যমে মুরগি থেকে টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এক্ষেত্রে মুরগির কোনও ক্ষতিসাধন হয় না। পরে সংগৃহীত কোষগুলো দিয়ে একটি সেল লাইন তৈরির মাধ্যমে সেটিকে খাওয়ার উপযুক্ত মাংসের টুকরায় রূপান্তরিত করা হয়। সেল লাইন তৈরির এ প্রক্রিয়াকে জীববিজ্ঞানের ভাষায় টিস্যু কালচার বলা হয়।

ল্যাবে তৈরি এই মাংস দেখতে সাদা-মাংসের মুরগির হাড়বিহীন টুকরোর মতো। এছাড়া, এর স্বাদ এবং গন্ধও একেবারে মুরগির মাংসের মতোই।

তবে, এ প্রক্রিয়ায় মাংসের টুকরাগুলো কেমন আকৃতির হবে তা নির্ভর করে ওই কোম্পানির ওপর। প্রাণির দেহে স্বাভাবিক উপায়ে চর্বি, পেশী এবং সংযোজক টিস্যু একসঙ্গে একটি হাড়ের সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন আকার-আকৃতি পায়। কিন্তু ল্যাবে তৈরি মাংসে হাড় না থাকায় সেক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা।

কেউ কেউ টিস্যুগুলো ভাঁজ করে রেখে সেগুলোকে বিভিন্ন আকৃতি দেয়। আবার অনেকেই পাস্তা তৈরির মতো প্রক্রিয়া, অর্থাৎ বিভিন্ন আকৃতির ছাঁচের মাধ্যমে তাদের পণ্যের চূড়ান্ত আকার কাস্টোমাইজ করে।

তবে, এ ধরনের পরীক্ষণ এবারই প্রথম নয়। ১৯১২ সালে অ্যালেক্সিস ক্যারেল এবং তার সহযোগীরা প্রথমবারের মতো মুরগির কোষের টিস্যু কালচার করেন। একটি মুরগির হৃৎপিণ্ডের কোষ থেকে তৈরি সে টিস্যু কালচার ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছিল।

প্রাণির স্টেম সেল থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশের কোষ তৈরি সম্ভব বলে, খাদ্য উৎপাদকরা মূলত এই কোষ থেকেই মাংস তৈরি করছেন।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কার্ডিওলোজিস্ট ভ্যালেটি জানান, হার্ট অ্যাটাকের পরে পেশী পুনঃর্গঠনে সহায়তার জন্য ‘মানুষের হৃৎপিণ্ডে স্টেম সেল প্রবেশ করানোর ধারণা’ থেকে আপসাইড ফুডস চালু করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তিনি।

আপসাইড ফুডস এবং এর সমর্থকরা আশা করেন, ল্যাবে উৎপাদিত এ মাংস এক নতুন বিপ্লব নিয়ে আসবে। তবে, ল্যাবরেটরির মাংস তৈরির এ প্রতিযোগিতায় তাদের পাশাপাশি রয়েছে আরও প্রায় ১০০টি সংস্থা। সিঙ্গাপুরের একটি প্রাইভেট ক্লাব এবং তেল আবিবে একটি টেস্ট কিচেন-সহ কিছু জায়গায় এ ধরনের মাংস কালেভদ্রে পরিবেশন করা হয়। কিন্তু সর্বসাধারণের জন্য এখনও এটি পরিবেশিত হচ্ছে না।

এদিকে নতুন এ উদ্ভাবনী ব্যবসাক্ষেত্র নিয়ে উৎসাহী বিনিয়োগকারীরাও। বিশ্বের অনেক দেশেই, বিশেষত উন্নয়নশীল কিছু দেশের দ্রুত বর্ধনশীল মধ্যবিত্তদের মধ্যে মাংস এবং মাছের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। এ চাহিদার যোগানের জন্য প্রয়োজনীয় মাংসের উৎপাদন প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে হলে সেক্ষেত্রে প্রচুর জমি দরকার। এতে করে প্রচুর পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাসও উৎপাদিত হয়।

পশুর কোষ থেকে খাওয়ার উপযুক্ত মাংস তৈরি করা হলে তা এ সকল সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি মানুষের চাহিদাও পূরণ করে। তাছাড়া, ফ্যাক্টরি ফার্মিং এবং পশু জবাই সম্পর্কে শঙ্কিত ভোক্তাদের নৈতিক চাহিদাও পূরণ করে এটি।

কিন্তু এই পণ্যগুলো সহজলভ্য হওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। প্রথমত, এক্ষেত্রে প্রয়োজন সঠিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। ২০১৯ সালে এ বিষয়ে সিঙ্গাপুর একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, কোনও প্রতিষ্ঠান যদি এমন কোনও বিকল্প প্রোটিন পণ্য বিক্রি করতে চায়, যা মানুষের খাদ্য হিসাবে খাওয়ার ইতিহাস নেই, তাহলে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলের নিরাপত্তা পর্যালোচনা পাস করে সঠিক উপায়ে লেবেলযুক্ত হতে হবে।

আরেকটি চ্যালেঞ্জ হল, এসকল পণ্যের অত্যধিক দাম কমিয়ে আনা। যদি মানুষের প্রয়োজনে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য তৈরি হয়, তাহলে অবশ্যই তাদের কাছে এটি সহজলভ্য মূল্যে বিক্রি করতে হবে।

আপসাইড ফুডস আশা করে, ভোক্তাদেরকে এ পদ্ধতির বিষয়ে জানাতে ও তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে পারবে তারা।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 4 =

Back to top button