করোনার সবচেয়ে কার্যকর ঔষধ মলনুপিরাভিরঃ দাবি নির্মাতা সংস্থার
অবশেষে হাতের মুঠোয় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের অস্ত্র! করোনাকে নির্মূল করতে আশা দেখাচ্ছে ‘মলনুপিরাভির’। এই ঔষধটি করোনায় সংক্রমিত রোগীর মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি অর্ধেক কমিয়ে দেবে বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে মলনুপিরাভির ট্যাবলেটের কার্যকারিতা নিয়ে এখনো বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। করোনা আক্রান্ত কিন্তু বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা চলছে, এমন রোগীদের ওপর নাকি দারুণ কাজ করছে মলনুপিরাভির।
নির্মাতা সংস্থা মার্ক শার্প অ্যান্ড ডোমের দাবি, অল্প কয়েক দিনেই করোনাকে পরাজিত করে সুস্থ হয়ে উঠছেন আক্রান্তরা। ঔষধটির তৃতীয় পর্বের ট্রায়াল চলছে। ভারতেও ট্রায়াল ও আপদকালীন অনুমোদনের ছাড়পত্র চেয়েছে মার্ক। তবে ছাড়পত্র মেলার আগেই পাঁচটি নামজাদা ভারতীয় সংস্থার সাথে চুক্তির পথে এগিয়েছেন তিনি। মার্কিন সংস্থা মার্ক হাত মিলিয়েছে সিপলা, ডা. রেড্ডি, এমকিউর ফার্মা, হেটেরো ল্যাব ও সান ফার্মার সাথে। সংস্থার সিইও এবং চেয়ারম্যান কেনেথ সি ফ্রেজার জানিয়েছেন, ভারত ও বিশ্বে দ্রুত ওষুধ পৌঁছে দিতেই এই চুক্তি করছেন তাঁরা।
আমেরিকার সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচি এই ওষুধ নিয়ে আশাবাদী। ব্রিটেনের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সাইমন ক্লার্কের ভাষায় মলনুপিরাভিরের প্রাথমিক ফলাফল উচ্ছ্বসিত হওয়ার মতো। তবে তথ্যের বিষয়টি যাচাই করে নেয়া দরকার বলেও তিনি মনে করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার হর্বি আবার বলেছেন, মলনুপিরাভির কোভিড চিকিৎসায় দারুণ অগ্রগতির সংকেত দিচ্ছে। তবে এটি কতটা ভালো তা প্রমাণিত হবে, যখন গবেষণাগার থেকে বাইরের জগতে এসে এর প্রয়োগ শুরু হবে।
এখন প্রশ্ন হলো, এই মলনুপিরাভির আসলে কী? এটি একটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ। এর আবিষ্কারের কাহিনী খুঁজতে ফিরে যেতে হবে আরো প্রায় বছর ১৮ আগে। আমেরিকার আটলান্টা শহরের একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় এমোরি পরিচালিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ড্রাইভে’র কাছে। ড্রাইভ মূলত একটি অলাভজনক বায়োটেক সংস্থা, যারা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিয়ে কাজ করে। ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক ক্ষেত্রেই কিন্তু নিজেরা ওষুধ আবিষ্কার করে না। বহু হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় বা স্বাধীন গবেষণা সংস্থা নিজ উদ্যোগে নানারকম রোগ নিয়ে অনুসন্ধান করে। তাদের লক্ষ্যই থাকে এমন কোনো একটি উপাদান খুঁজে বের করা, যা ওই রোগের চিকিৎসায় কাজ করবে। তাদের কাছে যখন সেরকম কোনো উপাদান আশাব্যঞ্জক বলে মনে হয় তারা তখন ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর সাথে যোগাযোগ করেন। কারণ একটি ঔষধ তৈরি ও বাজারজাতকরণে যে বিপুল কর্মপ্রয়াস ও অর্থের দরকার, তাদের সেই ক্ষমতা নেই। ফলে ঔষধ কোম্পানিগুলো চুক্তি করে এসব উপাদান নিয়ে কাজ করে।
ড্রাইভও ঠিক এভাবেই কাজ করে। তারা ২০০৩ সালে এমন একটি পদার্থের সন্ধান পান যা কিনা বিভিন্নরকম আরএনএ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করবে। কিন্তু এটি খাওয়ার যোগ্য ছিল না, এবং তারা দেখতে পান প্রাণীকোষে এর মাধ্যমে মিউটেশন ঘটতে পারে। ফলে সমস্ত তথ্য ডাটাবেসে রেখে তারা আর অগ্রসর হয়নি।
২০১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রতিষ্ঠান ডিফেন্স থ্রেট রিডাকশন এজেন্সি (যারা গণবিধ্বংসী অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করতে কাজ করে) ভেনেজুয়েলান এনকেফালাইটিস ভাইরাস একটি আরএনএ ভাইরাসের কার্যকরী প্রতিষেধক তৈরির দরপত্র আহ্বান করে। এই ভাইরাস জীবাণু অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগের ভয় ছিল। উৎসাহিত ড্রাইভের গবেষকরা এবার তাদের তথ্যকেন্দ্র ঘেঁটে ১০ বছর আগের ওই উপাদানের সন্ধান পেলেন। তারা এর রাসায়নিক গঠনে কিছু পরিবর্তন আনলেন। ফলে এটি পরিণত হলো প্রোড্রাগ নামে একটি বস্তুতে, যা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় মানবশরীরে প্রবেশ করে। পরে বিপাকক্রিয়ার মাধ্যমে এটি সক্রিয় হয়। এর সাংকেতিক নাম হয় EIDD-2801, যা আমরা এখন মলনুপিরাভির নামে জানি।
সূত্র : বর্তমান