বিচিত্র

শামুকখৈল পাখির অভয়ারণ্য

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার কানাইপুকুর গ্রামে বাসা বেধেছে বিরল প্রজাতির পাখি শামুকখৈল। আর গ্রামবাসী গভীর মমত্ব দিয়ে আগলে রেখেছে পাখিগুলোকে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে গাছে যেন থোকায় থোকায় ফুটে আছে সাদা ফুল। গ্রামের বড় আকারের গাছটি যেন তাদের অভয়ারণ্য। পাখার ঝাপটা আর কিচিরমিচির মাতিয়ে রাখে গ্রামের আকাশ-বাতাস। সকালে সোনালি রোদ আর গোধূলির মৃদু আলোয় তাদের অপূর্ব সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।

জানা যায়, শামুকখৈল পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। সে কারণে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনভেনশন অব নেচার (আইইউসিএন) এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণি আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

পাশাপাশি এসব পাখি যেখানে থাকে সেখানে বিরাট কলোনী গড়ে তোলে। একেকটা বড় গাছে ঝাঁক বেঁধে বাস করে তারা। উপযুক্ত আবাসস্থল, আবহাওয়া, পরিমিত খাবারের যোগান আর নিরাপত্তা থাকলে এরা সাধারণত কোন জায়গা থেকে নড়ে না। বড় বড় আমগাছ, শিমুলগাছ, বট ও অশ্বত্থ গাছের উঁচু ডালে বাসা বাঁধে এরা। জুলাই-আগস্ট মাসে তিন থেকে পাঁচটি ডিম পাড়ে। ২৫ দিন লাগে ডিম ফুটে ছানা বেরুতে। ৩০-৩৫ দিন বয়স হলে ছানারা উড়তে শেখে।

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে আলমপুর ইউনিয়নের কানাইপুকুর গ্রামের আব্দুস সামাদ মন্ডল ও সোবহান মন্ডলের পুকুরের শতাধিক গাছে শামুকখৈলসহ ছয় প্রজাতির হাজার হাজার পাখির স্থায়ী অভয়াশ্রম। প্রতিদিন বিকেলে হাজারো শামুকখৈল পাখি এসে আশ্রয় নেয় গাছগুলোতে। কিচিরমিচির শব্দে পুরো পুকুরপাড় মুখরিত হয়ে ওঠে। রাতভর চলে তাদের ডানা ঝাপটানো। নির্বিঘ্নে রাত কাটিয়ে ভোর হলেই গ্রামের পার্শ্ববর্তী খাল-বিল আর ফসলের মাঠ থেকে পোকা মাকড় ও শামুক ঝিনুক খুঁজতে বের হয় পাখিগুলো। নিরাপদ আশ্রয় আর ভালবাসায় বাসা বেঁধে প্রজনন থেকে শুরু করে ডিম, বাচ্চা, প্রাপ্ত বয়স সব তারা পার করে এখানেই। তাই দিন দিন বাড়ছে এসব পাখির সংসার।

জানা যায়, পুকুরপাড়ের বড় বড় গাছে বাসা বেঁধে প্রায় এক যুগ ধরে বাস করছে এসব পাখি। নিরাপদ আশ্রয় আর মানুষের ভালবাসায় গ্রামে এখন পাখির সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিজেদের জায়গায় গড়ে ওঠা এই পাখি কলোনীর নিরাপত্তা দিচ্ছে গোটা গ্রামের মানুষ। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা দেখতে আসেন এই পাখি কলোনী।

ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নীরেন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে এলাকার সচেতন মহলকে অনুরোধ করেছি পাখিগুলোকে যেন কেউ না মারে সেদিকে খেয়াল রাখতে। পাখিগুলো আমাদের দেশের সম্পদ।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − 15 =

Back to top button