ক্রিকেট

বিশ্বকাপের আশা বাঁচিয়ে রাখা জয় বাংলাদেশের

ওমান যখন ব্যাট করতে নামে, প্রথম ওভারে বিনা উইকেটে ১৩ রান তোলে, ক্রিকইনফো তখন দেখাচ্ছে, বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা ৪২ শতাংশ, ওমানের ৫৮ শতাংশ। সেই পূর্বানুমান ভুল প্রমাণ করে, শংকার মেঘ সরিয়ে বহু আরাধ্য স্বস্তির জয়ে বিশ্বকাপে টিকে থাকল বাংলাদেশ।

স্কটল্যান্ডের কাছে বিব্রতকর হার দিয়ে এবারের টি ২০ বিশ্বকাপ শুরু করায় দ্বিতীয় ম্যাচেই বাংলাদেশকে নামতে হয়েছিল বাঁচা-মরার লড়াইয়ে। মঙ্গলবার মাসকাটের আল আমেরাত স্টেডিয়ামে স্বাগতিক ওমানের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহরা মাঠে নেমেছিলেন প্রবল চাপ নিয়ে।

হারলেই যে বেজে যেত বিদায়ঘণ্টা। সেই চাপেই হয়তো ব্যাটিংয়ে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি বাংলাদেশ। ইনিংসের শেষ বলে তারা গুটিয়ে যায় ১৫৩ রানে। তবে মোহাম্মদ নাঈম ও সাকিব আল হাসানের ব্যাটে পাওয়া দেড়শ ছাড়ানো পুঁজি নিয়েই শেষ পর্যন্ত ওমানকে ২৬ রানে হারিয়ে সুপার টুয়েলভের আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ।

প্রথম দশ ওভারে দুই উইকেটে ৭০ রান তুলে বাংলাদেশকে ভাবনায় ফেলে দিলেও শেষমেশ নয় উইকেটে ১২৭ রানে থামে ওমান। শুরুতে এলোমেলো বোলিং করলেও ৩৬ রানে চার উইকেট নিয়ে দলের জয়ে বড় অবদান রেখেছেন মোস্তাফিজুর রহমান।

ব্যাটিংয়ে ৪২ রানের মান বাঁচানো ইনিংসের পর বোলিংয়ে ২৮ রানে তিন উইকেট নিয়ে সাকিব হয়েছেন ম্যাচসেরা। একটি করে উইকেট পেলেও আঁটোসাঁটো বোলিংয়ে ওমানকে কক্ষচ্যুত করতে বড় ভূমিকা রেখেছেন মেহেদী হাসান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। মেহেদী চার ওভারে মাত্র ১৪ এবং সাইফউদ্দিন দেন ১৬ রান। ওমানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন জতিন্দর সিং। বলার মতো রান নেই আর কারও।

টানা দুই জয়ে ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষে উঠে এসেছে স্কটল্যান্ড। বাংলাদেশ ও ওমানের জয় একটি করে। শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতলে এবং ওমানের কাছে স্কটল্যান্ড হারলে তিন দলের পয়েন্ট সমান হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে রানরেটে এগিয়ে থাকা দুই দল পাবে সুপার টুয়েলভের টিকিট। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে তাই মাহমুদউল্লাহদের লক্ষ্য থাকবে বড় জয়।

বোলিংয়ে শেষটা দারুণ হলেও ব্যাটিং নিয়ে চিন্তা থেকেই গেল। দুবার জীবন পাওয়া মোহাম্মদ নাঈম ফিফটি না করলে কালও ভরাডুবি হতে পারত। ২১ রানে দুই উইকেট হারানো বাংলাদেশ ৫২ রানে হারায় শেষ আট উইকেট। তৃতীয় উইকেটে নাঈম ও সাকিবের ৮০ রানের জুটি আরও বড় সংগ্রহের আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু শেষের ধসে সেটা সম্ভব হয়নি। একাদশে ফেরা নাঈম ৫০ বলে করেন ৬৪ রান। সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছে ২৯ বলে ৪২। এ দুজন ছাড়া দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেন শুধু অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ (১৭)।

সৌম্য সরকারের জায়গায় কাল খেলেছেন আরেক বাঁ-হাতি ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। দ্বিতীয় ওভারে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়া লিটন দাস পরের ওভারে ক্যাচ দিয়েও পেলেন জীবন।

কিন্তু পরের বলেই বিলাল খানের দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে এলবিডব্ল– হয়ে ছয় রানে সাজঘরের পথ ধরেন লিটন। রানের গতি বাড়ানোর আশায় মেহেদী হাসানকে তিনে নামানোর ফাটকা কাজে লাগেনি। তাকে শূন্য রানেই ফিরিয়ে দেন ফায়াজ বাট।

পঞ্চম ওভারে ২১ রানে দুই উইকেট হারানো বাংলাদেশকে আরও চেপে ধরার সুযোগ পেয়েছিল ওমান। কিন্তু ক্যাচ মিসের মহড়ায় বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড়ানো সুযোগ করে দেয় স্বাগতিকরা। তৃতীয় উইকেটে ৮০ রানের জুটি গড়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন নাঈম ও সাকিব আল হাসান।

১৮ ও ২৬ রানে জীবন পাওয়া নাঈম ফিফটি তুলে নিলেও দুর্ভাগ্যজনক রানআউটে চল্লিশের ঘরে কাটা পড়েন দারুণ খেলতে থাকা সাকিব। ছয় চারে ২৯ বলে ৪২ রান করে ফেরেন তিনি। সাকিবের বিদায়ের পর নুরুল হাসান টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ।

আফিফ হোসেনও ফেরেন পাঁচ বলে মাত্র এক রান করে। শুরুতে একটু সময় নেওয়া নাঈম একপ্রান্ত আগলে রাখার পাশাপাশি রানের গতি বাড়ানোর ভারও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টাতেই ১৭তম ওভারে কলিমউল্লার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি।

তিন চার ও চার ছক্কায় ৫০ বলে ৬৪ রানে থামেন নাঈম। ২১ রানের ব্যবধানে চার উইকেট হারিয়ে ফের চাপে পড়ে যাওয়া দলকে শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।

শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ১০ বলে ১৭ রান করেন তিনি। ১৯তম ওভারে টানা দুই বলে মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন ফায়াজ বাট। ৩০ রানে তিন উইকেট নেন তিনি। দারুণ বোলিংয়ে ১৮ রানে তিন উইকেট নেন বিলাল খান। কলিমউল্লার ঝুলিতে গেছে দুটি করে উইকেট।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − six =

Back to top button