ফুটবল

রোনালদো ফের ত্রাতার ভূমিকায়; চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ম্যান ইউ’র রোমাঞ্চকর প্রত্যাবর্তন

দারুণ সব সুযোগ তৈরি করেও জালের দেখা না পাওয়া ও পোস্ট-ক্রসবারে বল লাগার হতাশা প্রথম ত্রিশ মিনিটে। হেরে যাওয়ার আশঙ্কা যখন গ্রাস করেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড শিবির। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর অসাধারণ গল্প রচনা করলো তারা। ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো শেষে গিয়ে দলকে জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসালেন।

ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে আতালান্তাকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে স্বাগতিকরা। দুর্বল ইয়াং বয়েজের বিপক্ষে হেরে আসর শুরুর পর টানা দ্বিতীয় জয়ে ‘এফ’ গ্রুপের শীর্ষে উঠল উলে গুনার সুলশারের দল।

মারিও পাসালিচ ও দেমিরালের গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ইউনাইটেড। এরপর মার্কাস র‌্যাশফোর্ড ব্যবধান কমানোর পর সমতা টানেন হ্যারি ম্যাগুইয়ার। আর সবশেষে রোনালদোর ব্যবধান গড়ে দেওয়া গোল।

ম্যাচে প্রায় ৫৫ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের উদ্দেশ্যে ২২টি শট নেয় ইউনাইটেড, যার ৯টি ছিল লক্ষ্যে। আতালান্তার ১৩ শটের ছয়টি লক্ষ্যে ছিল।

সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে দুই ম্যাচ পর জয়ের দেখা পেল ইউনাইটেড। প্রিমিয়ার লিগে গত দুই রাউন্ডে এভারটনের সঙ্গে ড্রয়ের পর লেস্টার সিটির বিপক্ষে হারে তারা।

দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর ম্যাচে ফিরতে মরিয়া ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বিরতির আগে-পরে দারুণ তিনটি সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। দুই দফায় দুর্ভাগ্যও বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
ভয়ডরহীন ফুটবলে গত কয়েক মৌসুমে আলো ছড়ানো আতালান্তা ম্যাচের শুরুটা করে দারুণ। পাল্টা আক্রমণে পঞ্চদশ মিনিটে এগিয়ে যায় তারা। ডান দিক থেকে জাপাকস্তার গোলমুখে বাড়ানো বল পা বাড়িয়ে টোকায় জালে পাঠান পাসালিচ।

পাঁচ মিনিট পর ভালো একটি সুযোগ তৈরি করেন রোনালদো। একজনকে কাটিয়ে ডান দিকের বাইলাইন থেকে ছয় গজ বক্সের মুখে উঁচু করে বাড়ান তিনি, লাফিয়ে হেড করতে গিয়ে ঠিকমতো পারেননি ব্রুনো ফের্নান্দেস। পেছনেই ফাঁকায় দাঁড়ানো ফ্রেদ প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক বরাবর মেরে হতাশ করেন। ২৬তম মিনিটে রোনালদোর শট ঠেকান গোলরক্ষক হুয়ান মুসো।

এর দুই মিনিট পরই ব্যবধান বাড়িয়ে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডকে স্তব্ধ করে দেন দেমিরাল। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল লাফিয়ে হেডে লক্ষ্যে পাঠান তুরস্কের এই ডিফেন্ডার।

প্রথমার্ধের শেষ দিকে দুই মিনিটের ব্যবধানে দারুণ দুটি সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি ইউনাইটেড। ৪৪তম মিনিটে পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে ফ্রেদের শট হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট আর র‌্যাশফোর্ডের কোনাকুনি শট বাধা পায় ক্রসবারে।
বিরতির পর খেলা শুরু হতেই আরেকটি সুবর্ণ সুযোগ পায় ইউনাইটেড। ফের্নান্দেসের পাস নিযন্ত্রণে নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন রোনালদো, সামনে একমাত্র বাধা ছিল গোলরক্ষক। কিন্তু তার বরাবর শট নিয়ে হতাশ করেন পর্তুগিজ তারকা।

চাপ ধরে রেখে ইউনাইটেড অবশেষে গোলের দেখা পায় ৫৩তম মিনিটে। ফের্নান্দেসের দারুণ থ্রু বল ডি-বক্সে ধরে কোনাকুনি শটে ব্যবধান কমান র‌্যাশফোর্ড। চার দিন আগে প্রিমিয়ার লিগে লেস্টার সিটির মাঠে ৪-২ ব্যবধানে হারের ম্যাচেও একটি গোল করেছিলেন এই ইংলিশ ফরোয়ার্ড।

পাঁচ মিনিট পর দ্বিতীয় গোলও পেতে পারত তারা; তবে কাছ থেকে স্কট ম্যাকটমিনের শট পোস্টে লাগে। কিছুক্ষণ পর রোনালদোর আরেকটি কোনাকুনি শটে ঝাঁপিয়ে ঠেকান গোলরক্ষক।

 

ইউনাইটেডের একতরফা চাপের মাঝেই ৭১তম মিনিটে মুহূর্তের ব্যবধানে আরেকটি গোল আদায় করে নেওয়ার সুযোগ তৈরি করে সফরকারীরা। ডাবল সেভে দলকে ম্যাচে রাখেন দাভিদ দে হেয়া। দুভান জাপাতার শট ঠেকানোর পর রুসলান মালিনোভস্কির দূরপাল্লার শট কর্নারের বিনিময়ে ফেরান স্প্যানিশ গোলরক্ষক।
এর চার মিনিট পরই সমতায় ফেরে প্রিমিয়ার লিগের সফলতম দলটি। একটি কর্নার আতালান্তা পুরোপুরি ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে ডান দিক থেকে ডি-বক্সে ক্রস বাড়ান জেডন স্যানচো। বল এদিনসন কাভানির মাথা ছুঁইয়ে আসে ম্যাগুইয়ারের পায়ে। অরক্ষিত এই ইংলিশ ডিফেন্ডার ডান পায়ের শটে ঠিকানা খুঁজে নেন।

আর ৮১তম মিনিটে আসে ৩ পয়েন্ট নিশ্চিত করা রোনালদোর গোল। বাঁ থেকে লুক শয়ের ক্রসে লাফিয়ে হেডে গোলটি করেন তিনি। আসরে এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচে গোল করলেন পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনালদোর গোল সংখ্যা বেড়ে হলো ১৩৭টি।
তিন ম্যাচে দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

আরেক ম্যাচে ইয়াং বয়েজের মাঠে ৪-১ গোলে জিতেছে ভিয়ারিয়াল। স্প্যানিশ দলটির সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ইতালিয়ান ক্লাব আতালান্তা।৩ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে ইয়াং বয়েজ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 − one =

Back to top button