আন্তর্জাতিক

মন্ত্রীপুত্রের অস্ত্র থেকেই কৃষকদের গুলি; তোপের মুখে যোগী সরকার

শেষপর্যন্ত ভারতের উত্তরপ্রদেশে বিক্ষোভরত কৃষকদের দাবিই সরকারি স্বীকৃতি। লখিমপুর খেরিতে সেদিন গুলি বর্ষণ হয়েছিল মন্ত্রিপুত্রের বন্দুক থেকেই। ফরেন্সিক রিপোর্টে উঠে এসেছে তার প্রমাণ। সোমবার এই ঘটনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়ে যোগী আদিত্যনাথের সরকার।

তারপর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই জানা গেল এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রমন্ত্রী অজয় মিশ্রর ছেলে আশিস এবং তার বন্ধু অঙ্কিত দাসকে গ্রেফতারের সময় তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ। সেগুলো থেকেই গুলি চলেছিল বলে নিশ্চিত করেছে ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাব।

অবশ্য এই রিপোর্টের ব্যাপারে নীরব যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। লখিমপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, সেটি সরাসরি আদালতে পেশ করা হবে। যদিও রিপোর্টের তথ্যকে হাতিয়ার করেই বিজেপি তথা মোদি সরকারের দিকে আক্রমণ শানিয়েছে বিরোধীরা।

কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্রের ইস্তফা দাবি তোলা হয়েছে। মন্ত্রিপুত্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস এমপি সৌগত রায়। জানিয়েছেন, গোটা ঘটনায় চুপ করে রয়েছেন দিল্লির বিজেপি নেতারা। এতে এটাই প্রমাণ হয় যে মন্ত্রীর মাথায় তাদের হাত রয়েছে।

গত ৩ অক্টোবর কৃষি আইনের বিরোধিতায় লখিমপুর খেরিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কৃষকরা। ওই সময় একটি গাড়ি আন্দোলনকারীদের পিষে দেয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় চার কৃষকের। তারপর প্রাণ হারান আরো চারজন। ঘটনায় আঙুল ওঠে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ডেপুটি অজয় মিশ্রর ছেলে আশিসের দিকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ ছিল, ওই গাড়িটিতে ছিলেন মন্ত্রিপুত্র। ঘটনার পর তিনি ও তার সঙ্গীরা কৃষকদের লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলিও চালায়।

সূত্রের খবর, সেই দাবিকেই স্বীকৃতি দিয়েছে ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবের ব্যালিস্টিক রিপোর্ট। সোমবার রাতে সেটি পুলিশের হাতে এসেছে। তাতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, সেদিন আশিস মিশ্রের লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক থেকে গুলি চালানো হয়েছিল। আশিসের সঙ্গী অঙ্কিত দাসের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ‘রিপিটার গান’ এবং পিস্তলেও মিলেছে ‘ফায়ারিং মার্ক’। উল্লেখ্য, অঙ্কিত ইউপিএ-১ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য অখিলেশ দাসের ভাইপো।

লখিমপুর কাণ্ডে আশিস, অঙ্কিতসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যদিও প্রথম থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন মন্ত্রিপুত্র। স্বয়ং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্রও জানিয়েছেন, তার ছেলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না। তার গাড়িটি সেখানে ছিল। শুধু তাই নয়, আশিস ও তার সঙ্গীদের এলোপাথাড়ি গুলি ছোঁড়ার কথাও অস্বীকার করা হচ্ছিল মন্ত্রী এবং গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে। এমনকি ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হলেও মন্ত্রিপুত্রকে গ্রেফতার করতে গড়িমসি করছিল পুলিশ। পরে আদালতের ‘ধমক’ খেয়ে আশিসকে হেফাজতে নেয়া হয়। গত ১৫ অক্টোবর তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র পাঠানো হয় ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য। আর সেই রিপোর্টই কার্যত কাল হলো মন্ত্রিপুত্রের।

সূত্র : বর্তমান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen + thirteen =

Back to top button