ডিসেম্বরে সরব হচ্ছে আদালতপ্রাঙ্গন; ভার্চুয়ালকোর্ট ছাড়া মুক্তি নাই: প্রধান বিচারপতি
অবশেষে আগামী মাসে ফের সরব হয়ে উঠছে সারাদেশের আদালতপ্রাঙ্গন। একথা জানিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন ভার্চুয়াল কোর্ট ছাড়া জুডিশিয়ারির কোনো মুক্তি নাই। তাঁর মতে, মেডিকেল সেবার মতো ২৪ ঘণ্টা কোর্ট খোলা থাকা উচিত।
এদিন দেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সামগ্রিকভাবে কথা বললেন প্রধান বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলার শুনানিকালে দেওয়া তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছিলো নানা প্রসঙ্গ। সেই বক্তব্যে স্থান পেয়েছে ফাঁসির আপিলের দ্রুত নিষ্পত্তি। মামলা জট হ্রাসে ভার্চুয়াল কোর্ট পদ্ধতির বিকল্প নাই। এমনকি প্রধান বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে নিষ্পত্তি করেছেন ১০২ ফাঁসির মামলা। সেইসব মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমে যাবজ্জীবন হয়েছে অর্ধেকের।
গতকাল বুধবার (১০ নভেম্বর) ফাঁসির আপিল শুনানিকালে এসব বিষয়ে কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। তাতে আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতিগণও তাদের মত তুলে ধরেন। এসময় রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা ভার্চুয়ালি আপিল বিভাগের শুনানিতে সংযুক্ত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আমার আমলে গত ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ফাঁসির মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ১০২ টি। এর মধ্যে অর্ধেক আসামির ফাঁসি থেকে যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। এসব মামলা দীর্ঘদিন পড়ে ছিলো। দ্রুত শুনানির জন্য কেউ আবেদন করেননি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এইসব মামলা শুনানি হওয়া উচিত। তিনি বলেন, এসব মামলা শুনানি করতে গেলেই আইনজীবীরা মুলতুবির আবেদন করেন। অথচ একদিনের জন্য সময় নেওয়া উচিত নয়।
বিচারপতিরা বাসা থেকে কাজ করলে দ্বিগুণ কাজ হবে। ভার্চুয়াল কোর্ট ছাড়া জুডিশিয়ারির কোন মুক্তি নাই। কোর্ট হচ্ছে মেডিকেল সেবার মত। মনে হয় ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকা উচিত
প্রধান বিচারপতি বলেন, মামলা জট থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে ভার্চুয়াল কোর্ট। বিচারপতিরা বাসা থেকে কাজ করলে দ্বিগুণ কাজ হবে। ভার্চুয়াল কোর্ট ছাড়া জুডিশিয়ারির কোন মুক্তি নাই। কোর্ট হচ্ছে মেডিকেল সেবার মত। মনে হয় ২৪ ঘণ্টা কোর্ট খোলা থাকা উচিত। তিনি বলেন, আপিল বিভাগে ২৩ হাজার মামলা বিচারাধীন ছিলো। করোনাকালে ভার্চুয়াল কোর্টে নিষ্পত্তির পর এখন মামলা রয়েছে ১৫ হাজার। এ সময়ে সারাদেশে মামলা বেড়েছে। একমাত্র আপিল বিভাগে মামলা কমেছে। এটা বড় ধরনের সাফল্য। কারণ আপিল বিভাগ ভার্চুয়ালি পরিচালনা করায় সময় অনেক বেঁচে যাচ্ছে। আইনজীবীরা বাসা, চেম্বার এমনকি দেশের বাইরে থেকেও শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন। কোর্টে আসার প্রয়োজন হচ্ছে না। ফলে সময় সাশ্রয় হচ্ছে। তবে ডিসেম্বর থেকে ফিজিক্যালি কোর্ট খুলে দেওয়ার কথাও জানান প্রধান বিচারপতি।
চুয়াডাঙ্গায় এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে খুনের মামলায় জেল আপিল খারিজ করে ফাঁসি কার্যকর করা হয় মোকিম ও ঝড়ুর। তাদের নিয়মিত আপিল অকার্যকর হওয়ায় দুই আসামির সেই নিয়মিত আপিল গতকাল খারিজ করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন, বিচারপতি মুহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
ফাঁসি দেওয়ার আগে দশবার ভাবতে হয়
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, নিয়মিত আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় সেদিন অনেকেই বলেছেন ঝড়ু ও মোকিম ন্যায় বিচার পাননি। তাহলে নিয়মিত আপিল বিচারাধীন থাকার পরেও জেল আপিল নিষ্পত্তিতে খালাস পেয়েছেন আরেক মামলার ফাঁসির আসামি সুজন। তাহলে কি সুজনকে ফেরত এনে আবার নিয়মিত আপিল শুনানি করবেন?
প্রধান বিচারপতি বলেন, আপিল বিভাগের বিচারপতিরা প্রতিদিন ১৪/১৫ ঘণ্টা করে কাজ করেন। আসামি সুজনের পক্ষে আইনজীবী একটা কথাও বলেনি। শুধুমাত্র তার উপস্থিতি আছে। কিন্তু আমরা (বিচারপতি) মামলার নথি চুলচেরা বিশ্লেষণ করে তাকে খালাস দিয়েছি। তার সঙ্গে যেসব আসামির নিয়মিত আপিল ছিলো তাদের ফাঁসি বহাল রেখেছি। কিন্তু এরপরেও কোর্টের উপর ব্লেইম (দোষারোপ) দেওয়ার চেষ্টা চলে। এটা বিরাট বিব্রতকর কোর্টের জন্য। একজন আসামিকে ফাঁসি দেওয়ার আগে আমরা কম করে হলেও দশবার চিন্তা করি। প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার ব্যবস্থা এখনও ডিজিটালাইজ হয়নি। এটার জন্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ডিজিটাল হয়ে গেলে তখন আর এই সমস্যা থাকবে না।
প্রধান বিচারপতির মত সকল বিচারপতিরও ভোট একটি
প্রধান বিচারপতি বলেন, যখন ফাঁসির আপিলের উপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তখন প্রধান বিচারপতির একার কোন সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা নাই। প্রতিটি রায়ের ক্ষেত্রে প্রত্যেক বিচারপতির আলাদা আলাদা মতামত নিতে হয়। এই ক্ষেত্রে অন্যদের মতো প্রধান বিচারপতিরও এক ভোট। কিছু দিন আগে এক মামলায় আমি যাবজ্জীবন সাজার পক্ষে মত দেই। অপর বিচারপতিরা খালাসের পক্ষে ছিলেন। ফলে আমাকে খালাস দিতে হয়েছে। এটাই পদ্ধতি। তিনি বলেন, গরীব বিচারপ্রার্থীদের মামলা পড়ে থাকে। মক্কেল অনুরোধ না করলে কেউ আবেদন দেয় না। মামলা পড়ে থাকে শাখায় বছরের পর বছর। কিন্তু আমি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর পুরোনো ফাঁসির মামলা নিষ্পত্তি করছি। ইতিমধ্যে শতাধিক মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।