প্রবাস

আমেরিকাকেও নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশীরাঃ মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী

ফোবানার ঐক্য শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়তে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশীদের প্রজন্ম একসময় দেশটিকে নেতৃত্ব দেবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ম্যারিল্যান্ডের গেইলর্ড হোটেলের পটোম্যাক কনভেনশন সেন্টারে স্থানীয় সময় রাত ৮টায় ফেডারেশন অব বাংলাদেশী অ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকার (ফোবানা) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ আশাবাদ রাখেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাসে বসে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ এগিয়ে যাচ্ছেন তা ভবিষ্যৎ শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এবং আপনাদের এখান থেকেই নতুন প্রজন্ম একসময় আমেরিকাকেও নেতৃত্ব দেবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের গেইলর্ড হোটেলে বসেছে উত্তর আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংস্থা ফোবানার ৩৫তম কনভেনশন। তিন দিনের এই আয়োজনের প্রথম দিন ছিল শুক্রবার। তবে বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর বিভিন্ন রাজ্য থেকে লোক জড়ো হতে থাকেন পটোম্যাক উপকূলে।

উত্তর আমেরিকা প্রবাসীদের এই কনভেনশনে যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকেও যায় বড় একটি দল। সব মিলিয়ে পটোম্যাকের উপকূল সেজে উঠে ছোটখাট একটা বাংলাদেশের মতো করেই।

গেইলর্ড হোটেলের আয়োজন, সাজ-সজ্জা এবং আশপাশের হোটেলগুলোতে বাংলাদেশীদের উপস্থিতি দৃষ্টি কাড়ে আমেরিকানদেরও।

ফোবানা সম্মেলনের শুরুর দিন ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’র মতো উৎসব থাকলেও আমেরিকানদের অনেকের দৃষ্টি ছিল বাংলাদেশীদের দিকে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেখা গেছে লাল-সবুজ রঙের পাঞ্জাবি এবং শাড়ি পরে সম্মেলনে যোগ দিতে। আর লাল-সবুজের এই মিশেল এখন মেরিল্যান্ডে উপস্থাপন করছে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশীদের ঐক্য। কনভেনশনের প্রথম দিনে ঐক্যের বিষয়টিই উঠে আসে অতিথিদের কথায়।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ৩৫তম ফোবানার মেম্বার সেক্রেটারি শিব্বির মাহমুদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কনভেনোর জিআই রাসেল। তিনি প্রথমেই তিন দিনব্যাপী আয়োজনের বিষয়ে উপস্থিত অতিথিদের অবহিত করেন। এরপর বক্তব্য রাখেন ফোবানার নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী। তিনি মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে ফোবানায় আসার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং নির্বাহী কমিটি এবং স্বাগতিক কমিটিকে শুভেচ্ছা জানান এই চমৎকার আয়োজনের জন্য।

এরপর বক্তব্য রাখেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম, সিনেটর শেখ রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, হোস্ট কমিটির মাসুদুল হক চৌধুরী, ফোবানার ইসি এমডি মাহবুবুর রহমান, ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান রোকেয়া হায়দার, ফোবানার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান ডক্টর নূর নবী, টাইটেল স্পন্সর ইঞ্জিনিয়ার আবু বক্কর হানিফ, অন্তর শোবিজের কর্ণধার স্বপন চৌধুরীসহ আরো অনেকে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আজকের অনুষ্ঠানে আমাদের মান্যবর রাষ্ট্রদূত উপস্থিত আছেন। তবে তিনি একমাত্র প্রতিনিধি নন, সমস্ত প্রবাসী বন্ধুরা আপনারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। দল-মত-নির্বিশেষে বিভিন্ন লোক বিভিন্ন দল ও আদর্শ হতে পারেন। কিন্তু যখন আপনারা বিদেশে থাকেন তখন আপনারা আমাদের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন। দেশের সম্মান যাতে আরো উপরে যায়, ভাবমূর্তি যাতে উজ্জ্বল হয় সেই হিসেবে আপনারা কাজ করেন। আপনারাই হচ্ছেন প্রকৃত অ্যাম্বেসেডর।’

দেশ চালানোর জন্য প্রবাসী রেমিটেন্সের গুরুত্ব উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আজকে প্রবাসী ভাই-বোনদের থেকে রেমিটেন্স পাওয়ায় শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছে দেশ। আপনাদের এই শ্রম এবং দেশপ্রেমের কারণে বাংলাদেশ আজ কোথায় গিয়েছে বলেন এককালে যাদের বলতো তলাবিহীন ঝুড়ি। সেই ঝুড়ি এখন উপচে পড়ছে আপনাদের পরিশ্রমের কারণে। বাস্কেট আর খালি নেই। এর মূলে রয়েছেন আপনারা, যারা প্রবাসে থেকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে টাকা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে পাঠান।’

তিনি বলেন, সেই দেশ আজকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছে। ৭১ সালের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে গোডাউনে কোনো খাবার ছিল না, আমাদের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা ছিল না। আজকে সেই দেশ নিজের টাকায় নদীতে টানেল করে, পদ্মাসেতু করে। এই সাহস আমরা কোথায় পেলাম। আপনারা প্রবাসীরাই কিন্তু এতে সিংহভাগ অবদান রেখেছেন। যে গ্রামে আপনার জন্ম সেখানে হাঁটার রাস্তা ছিল না। আজকে সেখানে পাকা রাস্তা গিয়েছে। আপনার গ্রামের প্রাইমারি স্কুল এখন পাকা দালান। আপনার গ্রামে আগে কিছুই ছিল না। সেখানে কমিউনিটি ক্লিনিক হয়েছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ পৃথিবীর রোল মডেল। এটা আমাদের কোনো কথা নয়। জাতিসঙ্ঘ এই কথার স্বীকৃতি দিয়েছে। আমাদের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিকভাবে আজ সম্মানিত ও স্বীকৃতি পেয়ে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। কিছুদিন আগেও তিনি এই দেশে এসেছিলেন। জাতিসঙ্ঘ তাকে সম্মানিত করেছে। এর আগে বারাক ওবামা তার পিতৃভূমি কেনিয়াতে গিয়ে বলেছিলেন, ফলো বাংলাদেশ, ফলো শেখ হাসিনা। কেনিয়াকে উন্নত করতে বাংলাদেশকে অনুসরণ করো। এটা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কথা। যে আমেরিকার নাগরিক এখন আপনাদের অনেকেই।’

দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের এই অর্জনের মধ্যেই স্বাধীনতায় ৫০ বছর পালন করছি। একই সাথে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি। সেই সময় আমি অনেক কাজ ফেলে এখানে এসেছি ফোবানার গৌরবগাথা শুনে। বাঙালি কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এই দেশে যারা থাকেন তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক বিভিন্ন পর্যায়ে সংগঠনগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে একত্রিত করে একটি আমরেলার মতো বানিয়েছে। গত দুই বছরের করোনায় সারা বিশ্ব একটি বিপর্যায়ে গিয়ে গুটিয়ে যায়। সেই সময়ও আপনারা সাহস করে এতো বড় সম্মেলন করেছেন, আমি অভিভূত। আমি এতোটুকু ভাবতে পারিনি। আমার যা চিন্তা ছিল তার চেয়ে বহু বেশি দেখে গেলাম।’

তিনি বলেন, ‘আপনারাই উত্তর আমেরিকাতে বাঙালি জাতিকে কত শক্তিশালীভাবে সংগঠিত করেছেন। আমাদের প্রিয় একজন সিনেটর (শেখ কবির) বলে গেলেন, দেশকে শক্তিশালী করতে গেলে রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে। আমি নিশ্চয়ই এটা বিশ্বাস করি। আপনারা এক দিন সিনেটর হবেন, এমপি হবেন এই দেশ পরিচালনায়ও আপনাদের বাঙালি বংশোদ্ভূত যারা আছেন তারা ভবিষ্যতে সেই জায়গায় যাবেন। বাংলাদেশ যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে আপনারও একইভাবে এই আমেরিকায় এগিয়ে যাবেন। সেইদিন খুব দূরে নয় যেদিন সবক্ষেত্রে বাংলা কমিউনিটির প্রতিনিধিরা থাকবেন। ব্যবসা-বাণিজ্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান আপনারা প্রতিনিধিত্ব করবেন।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের মেধা এবং প্রতিভা এরই মধ্যে বিশ্বের বুকে জানান দিয়েছেন। ইতোমধ্যে দেশকে আপনারা অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আরো চূড়ান্ত পর্যায়ে আপনারা নিয়ে যাবেন। ফোবানা সম্মেলন তারই একটি লক্ষণ। আমি মনে করি, ফোবানার মাধ্যমে যেভাবে আপনার সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছেন, বিভিন্ন কমিউনিটি দল-মত নির্বিশেষে মিলেমিশে একসাথে হয়েছেন। একইভাবে আপনারা আপনাদের প্রিয় জন্মভূমিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ধন্যবাদ জানাই এবং অভিনন্দন জানাই, আপনারা আরো বেশি সফলকাম হন, আজকের এ সম্মেলনে এটাই আমি প্রত্যাশা করছি। বাংলাদেশে গিয়ে আপনাদের সফলতার গল্প, নেতৃত্ব দেয়ার গল্প সবাইকে জানাবো। আমি মনে করি, আপনাদের এই নেতৃত্ব শুধু ফোবানায় থেমে থাকবে না। ভবিষ্যতে দেশের বড় কাজে আপনারা নেতৃত্ব দিতে পারবেন। সেটা আমি আগাম অনুমান করে গেলাম।’

মন্ত্রীর বক্তব্যের পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। এই পর্বে প্রথমে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পরে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত এবং কানাডার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। ওয়াশিংটনের বাংলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেয়।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − eleven =

Back to top button