ফুটবল

সের্হিও রামোসের অভিষেকে পিএসজির কষ্টের বিজয় অর্জন

ম্যাচ জুড়ে পিএসজির একচেটিয়া আক্রমণ। সাঁত এতিয়েন দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটা একজন কম নিয়েও ভালোই লড়াই করল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেরে উঠল না তারা। মাওরিসিও পচেত্তিনোর দল শঙ্কা কাটিয়ে ঠিকই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল।

রোববার লিগ ওয়ানের ম্যাচটি ৩-১ গোলে জিতেছে প্যারিসের ক্লাবটি। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এই ম্যাচ দিয়ে পিএসজির জার্সিতে অভিষেক হয়েছে সের্হিও রামোসের। উপলক্ষটা জয়ের রঙেই রাঙালেন স্প্যানিশ তারকা।

বৃষ্টির মতো তুষার পড়তে থাকায় মাঠের কন্ডিশন ছিল কিছুটা প্রতিকূল। কঠিন পরিস্থিতিতে শুরুতে পিছিয়ে পড়ার পর সমতা টানেন মার্কিনিয়োস। শেষ দিকে আনহেল দি মারিয়া দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর মার্কিনিয়োস ব্যবধান বাড়ান। তিনটি গোলেই অবদান রাখেন লিওনেল মেসি।

জয় পেলেও পচেত্তিনোর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলতে পারে নেইমারের চোট। শেষ দিকে পায়ে চোট পেয়ে স্ট্রেচারে মাঠ ছাড়েন ব্রাজিলিয়ান তারকা।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গত বুধবার ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ২-১ গোলে হারা পিএসজি বল দখলে রেখে শুরু থেকে সাঁত এতিয়েনকে চেপে ধরে। চতুর্থ মিনিটে মেসির পাসে কাছ থেকে ফাঁকা জালে বল পাঠান অরক্ষিত নেইমার, কিন্তু গোল মেলেনি। ভিএআরের সাহায্যে অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি।
ত্রয়োদশ মিনিটে ভালো একটি সুযোগ আসে কিলিয়ান এমবাপের সামনে। মার্কিনিয়োসের থ্রু বল ধরে ওয়ান-অন-ওয়ানে ফরাসি তারকার শট পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন স্বাগতিক গোলরক্ষক গ্রিন।

খেলার ধারার বিপরীতে ২৩তম মিনিটে প্রথম ভালো সুযোগে এগিয়ে যায় এতিয়েন। পিএসজির রক্ষণের ওপর দিয়ে সতীর্থের বাড়ানো ক্রসে তিমোথির শট ফিরিয়ে দেন জানলুইজি দোন্নারুম্মা। এরপর আর পারেননি তিনি। ফিরতি বলে ডান পায়ের জোরালো শটে জাল খুঁজে নেন দেনিস বুয়াঙ্গা।
শুরুতে অবশ্য অফসাইডের পতাকা তোলেন লাইন্সম্যান। ভিএআরে বদলায় সিদ্ধান্ত।

৩৮তম মিনিটে এমবাপের উদ্দেশে দি মারিয়ার বাড়ানো বল এগিয়ে এসে বিপদমুক্ত করেন গ্রিন। পরক্ষণে দুরূহ কোণ থেকে নেইমারের শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন তিনি।

দুই মিনিট পর সুবর্ণ সুযোগ হারান এমবাপে। দি মারিয়ার বাড়ানো বলে তার সামনে একমাত্র বাধা গোলরক্ষক, বিশ্বকাপ জয়ী ফরোয়ার্ডের শট বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকান গ্রিন।

বিরতির আগে বড় ধাক্কা খায় স্বাগতিকরা। এমবাপেকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন ফরাসি ডিফেন্ডার তিমোথি। মেসির নেওয়া সেই ফ্রি-কিকে ডি-বক্সে লাফিয়ে হেডে দলকে সমতায় ফেরান মার্কিনিয়োস।
৬১তম মিনিটে সুযোগ পান মেসি। তবে ডি-বক্সে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের চ্যালেঞ্জে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি আর্জেন্টাইন তারকা। এগিয়ে এসে বলের নিয়ন্ত্রণ নেন গ্রিন। ৬৯তম মিনিটে দলকে এগিয়ে নেওয়ার আরেকটি সুযোগ হারান মেসি। নেইমারের শট গ্রিন পা দিয়ে ঠেকানোর পর ফিরতি বল বাইরে মারেন সাবেক বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড।

পিএসজি শিবিরে তখন পয়েন্ট হারানোর শঙ্কা। এর মাঝেই ৭৯তম মিনিটে দলকে এগিয়ে নেন দি মারিয়া। মেসির বাড়ানো বল ডি-বক্সে পেয়ে বাঁ পায়ের শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন তিনি।

তিন মিনিট পরই নেইমারের ওই ঘটনা। বল দখলের লড়াইয়ের প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের পায়ের ওপরে পড়ে তার পা। মাঠে লুটিয়ে পড়ে কাতরাতে দেখা যায় তাকে। একটু পর মাঠ ছাড়েন স্ট্রেচারে করে।
যোগ করা সময়ে মেসির ক্রসে ছয় গজ বক্সের মুখে হেডে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন মার্কিনিয়োস। মেসি পূরণ করেন হ্যাটট্রিক, অ্যাসিস্টের!

লিগ ওয়ানে সাঁত এতিয়েনের বিপক্ষে পিএসজির সবশেষ ৩৪ গোলের সবগুলোই হলো বক্সের ভেতর থেকে। সবশেষ বক্সের বাইরে থেকে গোল এসেছিল ২০১৪ সালের অগাস্টে, করেছিলেন এদিনসন কাভানি।

রিয়াল মাদ্রিদে দীর্ঘ ১৬ বছরের অধ্যায় শেষে গত জুলাইয়ে ফ্রি ট্রান্সফারে পিএসজিতে আসা রামোস ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেলেন।

প্যারিসে আসার আগে থেকেই পায়ের পেশির চোটে ভুগছিলেন এই ডিফেন্ডার। মাঝে গুঞ্জন ছড়ায়, রামোসের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করার কথা ভাবছে পিএসজি কর্তৃপক্ষ। এসব গুজবের মাঝেই এ মাসের শুরুর দিকে অনুশীলনে ফেরেন ৩৫ বছর বয়সী এই তারকা। গত সপ্তাহে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে প্রথমবার স্কোয়াডে ডাক পাওয়ার পর এবার কাঙ্ক্ষিত অভিষেক হয়ে গেল তার। পেলেন জয়ের স্বাদও।

লিগ ওয়ানের শিরোপা পুনরুদ্ধারের অভিযানে ১২ পয়েন্টে এগিয়ে গেল পিএসজি। ১৫ ম্যাচে ১৩ জয় ও একটি ড্রয়ে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে তারা। সমান ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে রেন। ২৬ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে নিস।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − seven =

Back to top button