সরকার

সমালোচনার পরোয়া না করে কাজ চালিয়ে যাব: শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সমালোচনার পরোয়া না করে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে উন্নীত করতে কাজ চালিয়ে যাব।

রোববার একাদশ সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেছেন, “যে যেটাই বলুক,যত সমালোচনাই করুক, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং আমরা কাজ করে যাব। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।”

তিনি বলেন,বাংলাদেশ শুধু উন্নয়নশীল দেশ না, সর্বক্ষেত্রেই আজকে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের একটা ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটা বিরাট অর্জন।

এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “অনেক রকমের চক্রান্ত থাকবে, কিন্তু সেগুলো মাথায় নিয়েই আমাদের চলতে হবে।” পিতা যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হত বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।

জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমানের কথা বলেন, জেনারেল এরশাদের কথা বলেন বা বেগম জিয়ার কথা বলেন, এরা তো দেশকে আসলে কখনও উন্নত করতে চায়নি। ক্ষমতা তাদের কাছে ছিল ভোগের বস্তু।

“তাদের সাথে কিছু লোক.. ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দলে নিয়ে একটা এলিট শ্রেণী তৈরি করা। দেশের মানুষ কিন্তু যেই তিমিরে সেই তিমিরেই ছিল। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ এগিয়ে আসেনি।”

১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে বিরূপ পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের জনগণের জন্য দেশে ফেরার কথা বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

তিনি বলেন, “আমি জানি এদেশে খুনিরা মুক্ত, যুদ্ধাপরাধীরা মুক্ত, তারাই রাজত্ব চালাচ্ছে। যেখানে আমার ছোট ১০ বছরের ভাইকে ছাড়েনি, সেখানে আমিও রেহাই পাব না। আমাকেও বিভিন্ন সময়ে..হয়ত যে কোনো সময়ে মৃত্যু আমার হতে পারে।

“কিন্তু সেটা জেনেও শুধু দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে,দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার নিয়ত নিয়ে আমার ছোট বাচ্চা ১০ বছরের ছেলে জয় এবং আট বছরের মেয়ে, তাদেরকে আমার বোনের কাছে দিয়ে আমি বাংলার মাটিতে ফিরে এসেছিলাম।”

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠায় তাতে অবদানের জন্য জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের উন্নয়নে কাজ করেছে বলেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।

এখন স্বল্পোন্নত দেশের সব সুবিধা পাওয়া যাবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তবে এটা বাস্তবায়নে আমরা অনেক সুবিধাও পাব। কাজেই সেই দিকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের বেশ কিছু পদক্ষেপও নিতে হবে এবং সেই প্রস্তুতিও কিন্তু আমরা নিচ্ছি।

“এই এলডিসি থেকে আমরা যেই উত্তরণ পেয়েছি, এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। অর্থাৎ আমরা মনে করি, বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে আরেকটি মাইলফলক। বাংলাদেশকে সারাবিশ্বের কাছে ব্রান্ডিং করার একটা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।”

২০২৬ সাল থেকে বাংলাদেশ পরিপূর্ণভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে তার সব ধরনের কাজ করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি উদীয়মান, বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের বাজার সৃষ্টির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে এমন একটা বার্তা এখন বিশ্বব্যাপী পাবে। বিশ্ববাসীর কাছে আমরা সেটা পৌঁছাতে পারব।”

যুক্তরাজ্যের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) এর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক বিকাশ অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ।

“দারিদ্র্যের হার যা ৪০ ভাগ ছিল আজকে তা ২০.৫ ভাগে হ্রাস পেয়েছে। অর্থনৈতিক আকার এখন ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলার উন্নীত হয়েছে। জিডিপি (প্রবৃদ্ধিতে) আমরা ৮ ভাগ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে সেটা আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।”

উন্নয়নের পাশাপাশি বৈশ্বিক শান্তি সূচক ২০২০ এও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানের ৭ ধাপ উন্নতির তথ্য জানান শেখ হাসিনা।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − 7 =

Back to top button