উনিশশো একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের জন্য সহায়তা করায় ভারতের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত নয় বাংলাদেশের। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে এমনটি মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সচিব ড. আকবর আলি খান।
মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভে ভারতের অবদান রয়েছে জানিয়ে আকবর আলি খান বলেন, সে জন্য দেশটির কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত নয়। এ কথা একাত্তরে শোনা না গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে উঠেছে। এর সোজা জবাব হলো- পৃথিবীর কোথাও চিরন্তন কৃতজ্ঞতাবোধ নেই, এটা ভারত-বাংলাদেশ উভয়ে জানে।
দুই দেশের সম্পর্ক ‘ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা জাতির সঙ্গে আরেকটি জাতির, একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে আরেকটি রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব। অভিন্ন স্বার্থ থাকলেই কেবল রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব হবে। আমাদের স্বার্থের ক্ষেত্রে সংঘাত থাকলে চিরন্তন কৃতজ্ঞতাবোধ কখনোই হবে না।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আলোচনা সভার আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম, মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ খান, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান প্রমুখ। এতে সভাপতিত্ব করেন সিজিএস চেয়ারম্যান মনজুর এ চৌধুরী।
একাত্তরে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা তুলে ধরে আকবর আলি খান বলেন, সে সময় তারা স্পষ্টভাবে বলেছেন, আমরা স্বাধীনভাবে বাঁচবো- সেটাই চান তারা। বাংলাদেশ কারো কাছে চিরপদানত হয়ে থাকবে, এ কথা কল্পনা করেননি তারা। কারণ, এটা কখনোই সম্ভব নয়।
বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদের চূড়ান্ত অর্জন নিয়ে চিন্তার কিছু নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, গণতন্ত্র এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদারনৈতিক গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি আমরা। এতে কেবল নির্বাচন হওয়া নয়, অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, নাগরিক সমাজের ভূমিকা, আইনের শাসন থাকতে হবে। এই ধরনের বিষয়গুলো এখনো দুর্বল।
গণতন্ত্রকে সুসংহত করার আহ্বান জানিয়ে আকবর আলি খান আরো বলেন, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতে হবে সকল রাজনৈতিক দলকে। অনেক দল মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, আসলে তা বিশ্বাস করে না তারা। সবাই গণতন্ত্রে বিশ্বাস না করলে অগ্রগতি হবে না, ধর্মনিরপেক্ষতাও টেকসই হবে না।
প্রায় ৬৫ শতাংশ দেশে এদেশের চেয়ে আয়ের বৈষম্য কম উল্লেখ করে সাবেক এই আমলা বলেন, এখানে যে ধরনের বৈষম্য বিদ্যমান, তা মাত্র ৩৩ শতাংশ দেশে রয়েছে। গত ২৫-৩০ বছরে এই বৈষম্য বেড়েছে, যার পেছনে বড় কারণ হলো প্রচণ্ড দুর্নীতি। মুক্তিযুদ্ধকালে ৭০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকলেও এখন ২০ শতাংশ, এটা অকল্পনীয় অর্জন। দারিদ্র্য মানুষের সংখ্যা কেবল এদেশেই কমেনি, সব দেশে কমেছে।