দেশের হাসপাতালের বিশ্বজয় !
বিশ্বের সেরা ভবনের পুরস্কার জিতলো সাতক্ষীরার হাসপাতাল
বাংলাদেশের সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ইটের তৈরি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল ‘রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস (রিবা) আন্তর্জাতিক পুরস্কার ২০২১’ জিতে বিশ্বের সেরা নতুন ভবন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
স্থাপত্যকলায় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পুরস্কারগুলির মধ্যে অন্যতম এই ‘রিবা’ অর্থাৎ ‘রয়াল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস অ্যাওয়ার্ড’। হাসপাতালটির ব্যবহারিক উপযোগিতা এবং নান্দনিকতার জন্যই এই সম্মান জিতে নিল সাতক্ষীরা অঞ্চলের শ্যামনগরের সোয়ালিয়া এলাকায় অবস্থিত ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল।
নূন্যতম সম্পদের সাহায্যে নির্মিত পরিবেশবান্ধব এই ভবনটি স্থপতি ডেভিড চিপারফিল্ড নির্মিত বার্লিনের একটি গ্যালারি এবং ডেনমার্কে উইলকিনসন আইরি নির্মিত ফুটব্রিজকে প্রতিযোগিতায় হারিয়ে এ পুরস্কার জিতেছে। বিশ্বের ১১টি দেশের মধ্যে ১৬টি ব্যতিক্রমী নতুন স্থাপনা থেকে বাছাই করে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। ২৫ জানুয়ারি এই হাসপাতালের ভবনটিকে বিজয়ী ঘোষণা করে ‘রিবা’র জুরি বোর্ড।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সাতক্ষীরার জলাবদ্ধ ভূমিতে স্থপতি কাশেফ চৌধুরী নির্মাণ করেছেন ৮০ শয্যার এই ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। স্থাপনাটির চারপাশ দিয়ে বয়ে গেছে আঁকাবাঁকা খাল। গ্রীষ্মকালের প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচতে ভবনের ভেরতের খালগুলোতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কাশেফ চৌধুরী বলেন, এই হাসপাতাল গড়ার পেছনে মানুষ ও প্রকৃতির কথা ভাবা হয়েছে। স্থাপত্য মানেই শুধু ইট-কাঠ-পাথর নয়। সেখানে মানুষ ও প্রকৃতির সহাবস্তান জরুরি। এই পুরস্কার আরও অনেককে হয়তো এমন করে ভাবতে এবং কাজ করতে সাহায্য করবে।
কাশেফ চৌধুরী আরও বলেন, “এখানে পুরো জায়গাটি পানিতে পরিপূর্ণ। তবে এই জলাভূমি সবসময় উপকারী নয়।” জলবায়ু সংকটের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে এই জলাভূমিগুলো তৈরি হয়েছে। এ কারণে আশেপাশের শস্যক্ষেতগুলো চিংড়ি চাষের জলাভূমিতে পরিণত হয়েছে। ফলস্বরূপ, প্রতিদিনের কাজে ব্যবহৃত ভূগর্ভস্থ পানি হয়ে উঠেছে প্রচণ্ড লবণাক্ত। বিশুদ্ধ খাবার পানিরও সংকট রয়েছে এই অঞ্চলে। তাই বর্ষাকালে স্থানীয়রা বিশুদ্ধ পানির সংরক্ষণের যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। আর এ কারণেই ভবনটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যেন এর প্রতিটি ছাদে, উঠানে এবং খালগুলোতে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করা যায়। জমে থাকা এই পানি সংরক্ষণের জন্য ভবনের উভয় পাশে দুটি স্টোরেজ ট্যাঙ্কও রয়েছে।“
হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরের জন্য রয়েছে দুটি আলাদা জায়গা। দুটি জায়গার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও দুই রকম। এ কারণে পুরো ভবনকে দুটি ভাগ করতে হয়েছে। তবে, জায়গা স্বল্পতার কারণে ভবনের ভেতর দিয়ে প্রাচীর দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান স্থপতি কাশেফ চৌধুরী।
২০১৩ সালে নির্মাণ শুরু হয়েছিল শ্যামনগর ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের। ২০১৮ সালের ২২ জুলাই থেকে এটি কাজ শুরু করে। তখন থেকেই প্রত্যন্ত উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে ৮০ শয্যার এই হাসপাতাল। ৬ জন চিকিৎসক, ১২ জন নার্স ও কয়েকজন সহকারী আছেন এখানে। তিনটি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে।পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আধুনিক ল্যাবও রয়েছে৷
এই হাসপাতালে আউটডোরে চিকিৎসকের ফি মাত্র ১০০ টাকা। আর ৩০০ টাকায় বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্ট দেখানো যায়। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭২ হাজার মানুষ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা পেয়েছেন। সর্বক্ষণ বিদ্যুৎ এবং অ্যাম্বুল্যান্সের সুবিধা রয়েছে এখানে, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ খোলা থাকে ২৪ ঘণ্টা।