তৈরী পোশাক রপ্তানিতে রেকর্ড আয়; হারানো মুকুট ফিরে পেল বাংলাদেশ
দেশে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি থেকে গত ৫ মাসে আয় হয়েছে ১ হাজার ৮৩৪ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আয়ে আরেকটি রেকর্ড। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের রপ্তানির এ তথ্য প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।
সদ্যপ্রকাশিত ইপিবি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উল্লিখিত সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৮৩৪ কোটি মার্কিন ডলার, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে, গেলো বছরে (২০২১ সালে) বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে একক দেশ হিসেবে ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলে আবারো দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে যেন হারানো মুকুট ফিরে পেল বাংলাদেশ। ২০২০ সালে বাংলাদেশেকে পেছনে ফেলেই দ্বিতীয় স্থানে উঠে গিয়েছিল ভিয়েতনাম।
ইপিবির প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিটওয়্যারের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১০১১ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ওভেন পোশাক থেকে আয় ৮২১ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১২.৫৫ শতাংশ এবং ১৯.৬১ শতাংশ। একক মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের ৩২৩ কোটি মার্কিন ডলার থেকে ২০২২ সালের একই মাসে ৩৫.৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩৭ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
এদিকে, তৈরি পোশাকের ওপর ভর করে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৫শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। যা স্বাধীনতার পর এই প্রথম বলে জানিয়েছে ইপিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এ ব্যাপারে তৈরী পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়টি যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা কঠিন। মূল্যস্ফীতির প্রভাবে পোশাকের ইউনিটের দাম বৃদ্ধি, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি এবং সেইসঙ্গে আগের মাসগুলোতে অর্ডার বৃদ্ধির কারণে রপ্তানির পরিমাণ বাড়ার কারণ হতে পারে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি হতাশাজনক বলে মনে হচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী খুচরা ব্যবসা একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই এ ধরনের রপ্তানির বৃদ্ধিকে আত্মতুষ্টির কারণ হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক হবে না। আমরা বরং সতর্ক এবং একই সঙ্গে ভবিষ্যতের বিষয়ে আশাবাদী। কারণ, পোশাক শিল্পটি একটি টেকসই শিল্পে রূপান্তরিত হচ্ছে, যা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”
এর আগে চলতি বছরের অক্টোবর ও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছিলো যথাক্রমে ৪৩৬ কোটি ডলার এবং ৩৯১ কোটি ডলার। অপরদিকে, গত কয়েক মাস রপ্তানির গতিতে কিছুটা ভাটা থাকলেও অক্টোবরের পর নভেম্বরেও পজিটিভ গ্রোথ হওয়ায় সার্বিকভাবে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ।
ইপিবি’র প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, নভেম্বরে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৫০৯ কোটি ডলারের পণ্য, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি।
ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলে হারানো মুকুট ফিরে পেল বাংলাদেশ
এদিকে, সাম্প্রতিক বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বাণিজ্য পরিসংখ্যান পর্যালোচনা অনুসারে, ২০২১ সালে বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশ আবারও দ্বিতীয় অবস্থান অর্জন করেছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশ ছিল তৃতীয় অবস্থানে, সেবার বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে দেয় ভিয়েতনাম। সম্প্রতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) ‘বিশ্ব বাণিজ্য পরিসংখ্যান’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব বাজারে ২০২০ সালে ভিয়েতনাম ৬.৪০ শতাংশ পোশাক রপ্তানি করে। ২০২১ সালে তা কমে আসে ৫.৮০ শতাংশে। অপরদিকে ২০২০ সালে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬.৩০ শতাংশ। ২০২১ সালে তা ৬.৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
ডব্লিউটিও’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত বছর বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি বার্ষিক ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পোশাক রপ্তানিতে ২০২০ সালে বড় ধরনের ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ভিয়েতনামের ৭ শতাংশ বৃদ্ধির বিপরীতে বাংলাদেশের কমে গিয়েছিল ১৭ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ব বাজারে পোশাক রপ্তানিতে প্রথম স্থানে আছে চীন। ২০২০ সালে চীনের পোশাক রপ্তানি ছিল ৩১.৬০ শতাংশ। ২০২২ সালে তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৩২.৮০ শতাংশে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তবে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। তৃতীয় অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম। এরপরই আছে যথাক্রমে তুরস্ক, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, হংকং এবং পাকিস্তান।
রেকর্ড রপ্তানি আয়, দেশের ইতিহাসে প্রথম এক মাসেই ৫০০ কোটি ডলার
এদিকে বিশ্বজুড়ে চলমান অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশে রেকর্ড রপ্তানি আয় হয়েছে। এ বছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে, কোনো একক মাসে এত বেশি রপ্তানি আয় আগে কখনো আসেনি, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত সর্বসাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, নভেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫০৯ কোটি ২৫ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি। আগের বছরের নভেম্বরের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি। গত বছরের নভেম্বরে রপ্তানি আয় ছিল ৪০৪ কোটি ১৪ লাখ ডলার। এর আগে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় এসেছিল এ বছরের জুনে, যার পরিমাণ ছিল ৪৯০ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
পোশাক খাত থেকেই বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮২ শতাংশই আসে তৈরি। সর্বশেষ ডব্লিউটিও’র বাণিজ্য পরিসংখ্যান পর্যালোচনা অনুসারে, ২০২১ সালে তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক রপ্তানির ৮ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে, যার মূল্য ৩৫৮ কোটি ডলার।
ইপিবি সূত্র বলছে, গত পাঁচ মাসে পোশাক রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হলেও ফ্রোজেন এবং কাঁচা মাছ, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, স্পেশালাইজড টেক্সটাইল, হোম টেক্সটাইলসহ বেশ কিছু পণ্যের রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং প্লাস্টিকসহ কয়েকটি পণ্যের রপ্তানি এ সময়ে বেড়েছে।