দরকার হলে খালেদা জিয়ার মামলা লড়বেন ড. কামাল
কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলায় প্রয়োজন হলে লড়বেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলে নিজ চেম্বারে ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ড. কামাল হোসেন।
এ সময় খালেদা জিয়ার মামলায় লড়ার ব্যাপারে ড. কামাল বলেন, ‘এটা বলার কথা না। যদি প্রয়োজন হয়, অবশ্যই আমি উদ্যোগ গ্রহণ করব।’
গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন আরো বলেন, ‘সম্প্রতি মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যের আলোকে আমরা অবগত হয়েছি যে, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। তাঁর স্বাস্থ্যের গুরুতর অবনতির কারণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে আমরা গভীর উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটলে দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।’
ড. কামাল আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জামিন প্রদান নিয়ে টালবাহানার জন্য আমরা নিন্দা প্রকাশ করছি। এবং বর্তমান অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করছি।’
এ সময় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম সংগঠক ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) যে রিপোর্ট দিয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য এখন আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা জানায় ঐক্যফ্রন্ট।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ চৌধুরী, সাবেক নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, গণফোরাম নেতা অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, অ্যাডভোকেট মহসীন রশীদ, মোস্তাক আহমেদ, শফিউদ্দিন স্বপন, শহীদ উল্লা কায়সার, মমিনুল হক, ডা. জাহিদ, শাহ আহমেদ বাদল, দপ্তর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। গুরুতর অসুস্থ হয়ে বর্তমানে তিনি বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সর্বশেষ গত রোববার তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন স্বজনরা।
সাক্ষাৎ শেষে খালেদা জিয়ার বোন বেগম সেলিমা ইসলাম হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাঁর (খালেদা জিয়ার) স্বাস্থ্যের অনেক অবনতি হয়েছে। সরকার তাঁকে জামিন না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাঁর যে চিকিৎসা দরকার এখানে সেই চিকিৎসা হচ্ছে না। চিকিৎসা না হলে কেমন করে বাঁচবেন তিনি?’
‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের আগের চাইতে আরো অনেক বেশি অবনতি হয়েছে। সেদিন তো তাঁর ফাস্টিং (ডায়াবেটিসের রোগীর খালি পেটে ব্লাড সুগারের পরীক্ষা) বললাম ১৫, আজকে ১৮। তিনি হাত সোজা করতে পারছেন না। তাঁর হাত বাঁকা হয়ে গেছে। হাতের আঙুল বাঁকা হয়ে গেছে, খুবই খারাপ অবস্থা এবং দুই হাঁটু অপারেশন করা হয়েছে। হাঁটুতেও ব্যথা, হাঁটু ফুলে গেছে- তিনি পা ফেলতে পারছেন না’, যোগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বোন।
গত রোববার বিকেল ৩টার দিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন খালেদা জিয়ার বোন বেগম সেলিমা ইসলাম, ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মীলা সিথী, কোকোর ছোট মেয়ে জাহিয়া রহমান, খালেদা জিয়ার নাতি সামিন ইসলাম, রাখিন ইসলাম ও নাতনি আরিফা ইসলাম। তাঁরা প্রায় সোয়া ঘণ্টা সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে আসেন। এ সময় সেলিমা ইসলাম সেখানে থাকা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।
জামিনের ব্যাপারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে স্বজনদের কোনো কথা হয়েছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘সেদিন তো জামিন দিল না। এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। খালেদা জিয়ার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে, কিছু খাচ্ছেন না এবং খেলেও তা বমি করে ফেলে দিচ্ছেন।’
‘ডাক্তার আজকে বোধহয় এসেছিলেন, তাঁরা ওষুধ দিয়েছেন কিন্তু সেই ওষুধে কাজ হচ্ছে না। তাঁর উন্নত চিকিৎসা দরকার।’
এ সময় সেলিমা ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা তো পারমিশন পাই না। আজকে এক মাস হলো অনেক বলার পরে আমরা দেখা করার অনুমতি পেলাম। আমরা কাছে এলে তাও তো তাঁর একটু ভালো লাগে কিন্তু আমরা যে দেখতে আসব সেই পারমিশনও তারা দিচ্ছে না। এক মাস দেড় মাস হয়ে যায় কোনো পারমিশন দেয় না।’
চিকিৎসার বিষয়ে খালেদা জিয়া কিছু বলেছেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘তিনি অসুস্থ, তিনি তো উন্নত চিকিৎসা চাইবেনই। তাঁর সুস্থ হওয়ার জন্য উন্নত চিকিৎসা খুবই জরুরি।’
খালেদা জিয়া দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন বলেও জানান সেলিম ইসলাম, সূত্র এনটিভি অনলাইন।
আরও খবর পেতেঃ কূটনীতি ও ড. কামাল হোসেন
Tag: Bangla news all, Bangla all news, Bangla all news update