ধর্ম ও জীবন

মাদক অশ্লীলতার উৎস

ইসলামের দৃষ্টিতে মাদক সেবন কবিরা গুনাহ। আল্লাহপাক প্রায় সাড়ে চৌদ্দশ বছর আগেই মাদক নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বলেন-‘হে ইমানদাররা! (মনে রাখবে) মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য গণনা শয়তানের অপবিত্র কাজ, অতএব, তোমরা এগুলো থেকে বেঁচে থাকবে, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করতে পার।

শয়তান তো চায় মদ, জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে সংঘাত ও বিদ্বেষ ঘটাতে এবং আল্লাহর স্মরণ এবং নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। তবেও কি তোমরা বিরত হবে না।’ (সূরা মায়েদা : ৯০-৯১)।

আল্লাহপাক এ নির্দেশনার মাধ্যমে মদ তথা মাদককে চিরতরে মুমিনের জন্য হারাম করে তা থেকে সতর্ক করেছেন। নবি করিম (সা.) বলেন; তোমরা মদ থেকে বেঁচে থাক কেননা এটা সব অশ্লীলতার উৎস। (হাকেম) এ থেকে প্রতিয়মান হয়, যে লোক মদপান থেকে বিরত থাকে না, সে আল্লাহ তার রাসূল (সা.)-এর সীমালঙ্ঘনকারী এবং অবাধ্যচারী এ জন্য তাকে নিশ্চিত শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। আল্লাহপাক ঘোষণা করেন-‘যে লোক আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.)-এর অবাধ্য হয় এবং তার (নির্ধারিত) সীমালঙ্ঘন করে, আল্লাহ তাকে চিরস্থায়ী জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। তার জন্য রয়েছে অপমানকর শাস্তি।’ (সূরা নিসা-১৪)।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন; মদপান সবচেয়ে গুরুতর কবিরা গুনাহ এবং নিশ্চিতভাবে যাবতীয় নোংরা ও গর্হিত কাজের প্ররোচনার উৎস। (তাবরানি, হাকেম) হজরত জাবের (রা.) বলেন; রাসূল (সা.) বলেছেন, মাদকদ্রব্য সেবনকারীর জন্য আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হচ্ছে : আল্লাহ তাকে তিনাতুল খাবালের পানীয় পান করাবেন।

আরজ করা হলো-ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনাতুল খাবাল কী? তিনি এরশাদ করলেন- জাহান্নামিদের ঘাম ও মলমূত্র। (বুখারি, মুসলিম)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন; রাসূল (সা.) বলেন, ‘মদপানে চির অভ্যস্ত ব্যক্তি মূর্তি পূজকের সমান।’ বলা হয়েছে মদপানকারী তওবা না করে মারা গেলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না (অর্থাৎ অমুসলিমদের মতো চিরস্থায়ী জাহান্নামি)। রাসূল (সা.) বলেন; ‘মাতা-পিতার অবাধ্য ও মদপানে অভ্যস্ত (মাদকাসক্ত) এ দুজন জান্নাতে যাবে না।’

অপর এক বর্ণনায় আছে তিনজনের জন্য আল্লাহ জান্নাত নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। মদপানকারী, মাতা-পিতার অবাধ্য এবং দাইউস। দাইউস হচ্ছে ওই ব্যক্তি যে তার পরিবারের সদস্যদের অসৎ কাজে লিপ্ত জেনেও প্রতিবাদ করেনি। বলা হয়েছে; মাদক সেবনকারীর কোনো আমলই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।

মদপানের কারণে মানুষের বিবেক-বিবেচনা সঠিক থাকে না, এমন যে কোনো মাদকই মদ। তা চাই শক্ত হোক বা তরল বা পানীয় হোক। বলা হয়েছে; মদ্যপায়ী মদ্যপান অবস্থায় মুমিন থাকে না। আবু হুরায়রা (রা.) রাসূল পাক (সা.) থেকে বর্ণনা করেন; চোর চুরি করার সময় মুমিন থাকে না, জিনাকার জিনা অবস্থায় মুমিন থাকে না, মদ্যপায়ী মদ্যপান অবস্থায় মুমিন থাকে না। অতঃপর তওবা করলে মুমিন অবস্থায় ফিরে আসে।

(বুখারি, মুসলিম) অপর এক বর্ণনায় এসেছে; যে ব্যক্তি জিনা কিংবা মদ পান করে আল্লাহপাক এভাবে তার ইমান বের করে নেন যেভাবে কোনো লোক তার জামা মাথার ওপর দিয়ে বের করে নেয় (হাকেম)। হজরত আব্বাস (রা.) বলেন; রাসূল (সা.)কে বলতে শুনেছি, হজরত জিবরাইল (আ.) আমার কাছে এসে বললেন, হে মুহাম্মদ (সা.) মদ, মদপ্রস্তুতকারক, যার জন্য মদ বানানো হয়, মদের ক্রেতা-বিক্রেতা, তা বিক্রয়লব্ধ অর্থ ভোগকারী, আমদানি, রপ্তানি ও পরিবেশনকারী এবং যাদের তা পরিবেশন করা হয় এদের সবার ওপর আল্লাহ অভিশাপ বর্ষণ করেন। (আহমদ, হাকেম)। উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা গেল মদ কত বড় গুনাহ।

মদপানকারী জান্নাতের আশা করতে পারবে না। অতএব, অতীতের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করে আমলে জিন্দেগি দুরস্ত না করলে মহাবিপদে পড়তে হবে সন্দেহ নেই। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 + 5 =

Back to top button