Breakingভাইরালশিক্ষাঙ্গন

মাস্টার্স পাস চাওয়ালা মনিরুল বিক্রি করেন ৪৮ প্রকারের চা

মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান বিএম মনিরুল আহসান (৩২)। ২০১৪ সালে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) পাস করেন। এরপর পরিবারের হাল ধরতে দীর্ঘ সাত বছর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। তবে কর্মস্থলের মাসিক বেতনে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি।

সাবলম্বী হতে নিজে কিছু করার উদ্যোগ মনিরুল। শিক্ষিত যুবক হওয়া সত্ত্বেও উদ্যোক্তা হতে পেশা হিসেবে বেছে নেন চায়ের ব্যবসা। যশোর বিমানবন্দর মার্কেটে বছর খানেক আগে ‘চাওয়ালা’ নামে একটি দোকান দেন। এরপর থেকেই ভাগ্য বদল হতে শুরু করেছে তার।

মনিরুল এখন একজন সফল উদ্যোক্তা। তার চায়ের দোকানে পাওয়া যায় ৪৮ প্রকারের চা। তার চায়ের দোকানের খ্যাতি এখন যশোরসহ আশপাশের জেলায়ও। মনিরুলের ৪৮ প্রকারের চায়ের স্বাদ নিতে খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ থেকেও ছুটে আসেন চা-প্রেমীরা। অন্যদিকে চায়ের দোকানটি বিমানবন্দরে হওয়ায় বিমানে যাওয়া-আসার আগ মুহূর্তে মনিরুলে চায়ের স্বাদ নিতে ভোলেন না অনেকেই।

উদ্যোক্তা মনিরুল আহসান জানান, স্নাতকোত্তর পাস করার পর সামান্য বেতনে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। অল্প বেতনে দীর্ঘ সাত বছর টেনেটুনে সংসার চালাতে হয়েছে তাকে। এরপর আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করে সাবলম্বী হতে গত বছর যশোর বিমানবন্দরে একটি চায়ের দোকান দেন। চায়ের দোকানে বিক্রি করেন মসলা চা, মালটা চা, আদা চা, লেবু চা, চকলেট কফি, ম্যাংগো টি, বাদাম চা, এলাচ দুধ চা, লবঙ্গ চা, কুলপি টিসহ ৪৮ প্রকারের চা। তার এই চা এবং চাওয়ালা দোকানের খ্যাতি রয়েছে যশোরসহ আশপাশের জেলায়ও। দোকানে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ কাপ বিভিন্ন প্রকারের চা বিক্রি করেন তিনি। তার চায়ের ব্যবসায় ভাগ্যের বদল দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।

মনিরুলের চায়ের দোকানে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে চা খেতে আসেন পার্শ্ববর্তী ভেকুটিয়া গ্রামের হৃদয় হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন বিমানবন্দরে আসি শুধুমাত্র এই ব্যতিক্রমী চাওয়ালার চা খেতে। তার চায়ের দোকানের বিশেষত্ব হলো ৪৮ প্রকারের চা। তার এই ৪৮ প্রকারের চায়ের স্বাদ নিতে হলে যে কারও এখানে ৪৮ দিন আসাই লাগবে।

ফরিদপুর গ্রামের উজ্জ্বল হোসেন বলেন, মনিরুল আমাদের বন্ধু। আমরা একসঙ্গে পড়াশোনা শেষ করেছি। আমাদের অনেকেই অনেক পেশায় জড়িত, কিন্তু মনিরুল তার ব্যতিক্রমী চিন্তাধারা থেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হয়েছে। সে আসলে কোনো কাজকে ছোট করে দেখেনি। এজন্য সে চায়ের দোকান খুলে চাওয়ালা নামে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

খুলনার ফুলতলা থেকে বাইকার বন্ধুদের নিয়ে চা খেতে আসেন নিরব হোসেন। তিনি বলেন, মনিরুল ভাইয়ের চাওয়ালা দোকানের সঙ্গে বেশিরভাগ দূর-দূরান্তের বাইকাররা পরিচিত। তার এখানে এক প্রকারের চা যে খাবে তার ৪৮ প্রকারের চা খাওয়ার আগ্রহ আরও বেড়ে যাবে। তার চায়ের স্বাদ নিতে আমাদের মতো আরও দূর-দূরান্ত থেকে লোক আসে।

নিরব হোসেন আরও বলেন, মনিরুল ভাই শিক্ষিত যুবক হয়েও যে ব্যবসা পরিচালনা করছেন আসলে এটা প্রশংসনীয়। অনেক শিক্ষিত যুবক আছে যারা বেকার, তারা যদি হাত পা গুটিয়ে ঘরে বসে না থেকে নিজে কিছু করার চেষ্টা করে তাহলে সবারই ভাগ্যের বদল হবে বলে আমি মনে করি।

শিক্ষিত চাওয়ালা উদ্যোক্তা মনিরুল এখন গোটা এলাকার আইকন। তার আত্মকর্মসংস্থান এটাই প্রমাণ করে যে পৃথিবীতে কোনো কাজই ছোট নয় এবং ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − 1 =

Back to top button