Lead Newsআন্তর্জাতিকজাতীয়

যে কারণে এক হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান

অবিভক্ত ভারতের পরিকল্পনা নিয়ে বহুদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশটির ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি ও তাদের আদর্শিক মিত্র রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ-আরএসএস। ভারতীয় উগ্রপন্থিদের ঐ ধারনা এখনো বাস্তবায়িত না হলেও বসে নেই সংশ্লিষ্টরা, যদিও এসব নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর পারস্পারিক সম্পর্কে জলঘোলা হয়েছে বেশ। এবার সে বিষয়টিই ফের সামনে এলো ‘অবিভক্ত ভারত’ শীর্ষক এক সেমিনার আয়োজনের উদ্যোগ নেয়ায়।

জানা গেছে- ভারতের আবহাওয়া বিভাগ তথা আইএমডি’র ১৫০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত ‘অবিভক্ত ভারত’ শিরোনামের ঐ সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই উদ্যোগে ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহাসিক ঐক্য উদ্‌যাপনের জন্য মতভেদ ভুলে সবপক্ষকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আয়োজকরা।

দিল্লি-আয়োজিত এই সেমিনার উপমহাদেশের ইতিহাস ও যৌথ উত্তরাধিকার উদযাপনকে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হচ্ছে বলা হলেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে বেশ আলোচনার খোরাক যুগিয়েছে ভারতীয় এই উদ্যোগ। প্রশ্ন উঠেছে- দিল্লীর এমন আয়োজনের পেছনে মোদী সরকারের কোনো দুরভিসন্ধি নেই তো? ‘অবিভক্ত ভারত’ গড়ার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ নয় তো সর্বসাম্প্রতিক এই উদ্যোগ?

জনপ্রিয় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, এই সেমিনারে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, মালদ্বীপ এবং আফগানিস্তানসহ উপমহাদেশের অন্যান্য দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়াও, মধ্যপ্রাচ্য এবং মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তাদেরও সেমিনারে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

আরেক ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়, পাকিস্তান ইতোমধ্যেই সেমিনারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। তবে বাংলাদেশ এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক মহল মনে করছে, যদি ঢাকা এই সেমিনারে অংশ নেয়, তবে এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হবে।

ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘বিভেদ ভুলে উপমহাদেশের ঐতিহাসিক সংহতি এবং একসাথে কাজ করার উদাহরণ তুলে ধরতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ তবে সেমিনারের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি।

জানা গেছে- ভারতের আবহাওয়া বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৫ জানুয়ারি, ১৮৭৫ সালে যখন উপমহাদেশ ছিল অবিভক্ত। ১৮৬৪ সালের কলকাতার ঘূর্ণিঝড় এবং ১৮৬৬ ও ১৮৭১ সালের দুটি ভয়াবহ বন্যার পর বাংলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এই দুর্যোগ মোকাবিলা এবং আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আইএমডি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার সময় টেলিগ্রাফের মাধ্যমে সারা উপমহাদেশে আবহাওয়ার তথ্য ও সতর্কতা পৌঁছে দিত আইএমডি।

তবে এর আগেই আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কয়েকটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছিল। কলকাতা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র চালু হয় ১৭৮৫ সালে, মাদ্রাজ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ১৭৯৬ সালে এবং বোম্বে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ১৮২৬ সালে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ তথা আইএমডি’র একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি, প্রতিষ্ঠার সময় যারা অবিভক্ত ভারতের অংশ ছিল, তারা এই উদযাপনে যুক্ত হোক।’ তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই আবার এবারের ‘অবিভক্ত ভারত’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজনকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। তাঁরা বলছেন- এটি শুধু যৌথ ইতিহাসের উদযাপন নয়, বরং অঞ্চলীয় সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের প্রচেষ্টা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 − six =

Back to top button