Lead Newsধর্ম ও জীবন

কুরআনে প্রথম মহাকাশযাত্রার বিস্ময়কর বর্ণনা

মহানবী (সা.) ছিলেন পৃথিবীর প্রথম নভোচারী!

আজ থেকে ৬৪ বছর আগে রুশ নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন ছোট্ট একটি নভোযানে চড়ে মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মহাকাশ ভ্রমণে গিয়েছিলেন- এমনটিই আমরা শুনে এসেছি। অথচ ইসলাম বলছে- পবিত্র শবে মেরাজ হলো মুসলিম ইতিহাসে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ সেই বিস্ময়কর রাত যে রাতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সপ্তম আকাশে ভ্রমণ করেন এবং মহান আল্লাহর দিদার লাভ করেন। সুতরাং মুসলিম ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী- শতশত বছর আগের শেই বিশেষ রজনীই হলো মানব ইতিহাসের প্রথম মহাকাশ ভ্রমণ, আর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম সেই সফল মহাকাশযাত্রার প্রথম ও সফল অভিযাত্রী।

শবে মেরাজ ইসলামের ইতিহাসে এক বিশেষ রাত। এ রাতের ঘটনা শুরু হয় কাবার কাছে, যেখানে শুরুতেই জিব্রাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন। নবীজির জন্য অপেক্ষমাণ ছিল বোরাক নামের এক বিশেষ বাহন। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়- বোরাক খুব দ্রুত চলতে পারত। সেটিতে চড়ে প্রথমে তিনি মক্কা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস তথা মসজিদুল আকসায় যান। সেখানে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের সঙ্গে তিনি নামাজ আদায় করেন, এরপর নবীজি মহাকাশপানে যাত্রা শুরু করেন।

তিনি এক এক করে সাতটি আকাশ পার হন। প্রথম আকাশেই তাঁর সাক্ষাৎ হয় পৃথিবীর প্রথম মানব ও মুসলমানদের প্রথম নবী হযরত আদম আলাইহিস সালামের সাথে। এরপর একে একে দ্বিতীয় আকাশে ঈসা আলাইহিস সালাম ও ইয়াহিয়া আলাইহিস সালাম, এবং তৃতীয় আকাশে ইউসুফ আলাইহিস সালামের সাথে সাক্ষাৎ ঘটে। এভাবে প্রতিটি আকাশেই বিভিন্ন নবী আলাইহিস সালামের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। সবশেষ সপ্তম আকাশে তিনি ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের সাথে দেখা করেন।

এরপর তিনি সিদরাতুল মুনতাহা নামক বিশেষ এক জায়গায় পৌঁছান। এটি মূলত সৃষ্টির শেষ সীমা। এখান থেকে জিব্রাইল আলাইহিস সালাম আর সামনে যাবার অনুমতি পাননি। তাই জিব্রাইল আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে বিদায় নিতে হয় তাঁকে। এরপর মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাই আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার সান্নিধ্যে যান।

শবে মেরাজে মহাকাশের ঐ যাত্রাকাল থেকেই আল্লাহপাকের কাছ থেকে মুসলমানদের জন্য দৈনিক ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়। তবে হযরত মুসা আলাইহিস সালামের পরামর্শে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে বারবার অনুরোধ জানান এবং নামাজের সংখ্যা কমতে কমতে ৫ ওয়াক্তে নির্ধারিত হয়। আল্লাহপাক প্রতিশ্রুতি দেন যে, ৫ ওয়াক্ত নামাজের প্রতিদানে ৫০ ওয়াক্তের সওয়াব দেয়া হবে।

শবে মেরাজে মহাকাশের ঐ সফরেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখানো হয়। এক রাতের মধ্যেই তিনি সেই মহাকাশযাত্রা শেষে বোরাকের পিঠে চড়ে নিরাপদে আবার ফিরেও আসেন মক্কায়। পরদিন তিনি এই ঘটনা সবাইকে জানান। মক্কার মুশরিকরা তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ শুরু করে। তবে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু দৃঢ়ভাবে ঘোষণা দেন, “মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি একথা বলে থাকেন, তবে নিঃসন্দেহে এটাই ঘটেছে।” সেই থেকেই তিনি “সিদ্দিক” অর্থাৎ সত্যবাদী উপাধিতে ভূষিত হন।

এভাবে শবে মেরাজেই মানব ইতিহাসের প্রথম মহাকাশ ভ্রমণ হয়েছিল। আর বোরাকে চড়ে সেই সফর করা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন পৃথিবীর প্রথম নভোচারী। জানা গেছে- ইউরি গ্যাগারিন যে নভোযানে চড়ে মহাশূন্যে যাত্রা করেছিলেন, সেটি ছিল আকারে খুবই ছোট। সেটির ব্যাসার্ধ ছিল মাত্র দুই মিটার। সবচেয়ে বড় কথা হলো- ক্ষুদ্র ঐ নভোযানে তার ভূমিকা ছিল নেহাতই একজন যাত্রীর, নভোচারীর নয়। কারণ, সেসময় নভোযানের ভেতর কোনো যন্ত্রপাতি ছোঁয়ার অধিকার পাইলটের ছিলনা। গ্রাউন্ড কন্ট্রোল অর্থাৎ মাটিতে বসে নভোযানটির নিয়ন্ত্রণ যারা করছিলেন, তাদের সাথে গ্যাগারিনের যে কথোপকথন হয়েছিল তা থেকে জানা যায় যে- ক্যাপসুলের মত ছোট ঐ নভোযানের জানালা দিয়ে মহাকাশ থেকে পৃথিবীর “সৌন্দর্যে“ মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। ভূপৃষ্ঠের ওপর মেঘের ছায়া দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন।

উনিশশো একষট্টি সালের ১২ই এপ্রিল গ্যাগারিনের মহাশূন্য যাত্রা এবং নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসার ঘটনাটি ছিল আমেরিকার বিরুদ্ধে সোভিয়েতের ইউনিয়নের অনস্বীকার্য এক টেক্কা। কিন্তু ঐতিহাসিক সেই সাফল্য পেতে গ্যাগারিনকে চরম বিপজ্জনক এক ঝুঁকি নিতে হয়েছিল। তখন পর্যন্ত অজানা মহাকাশে এমন একটি ক্ষুদ্র যানে চড়ে তিনি রওনা দিয়েছিলেন যেখানে কোনো বিপদ ঘটলে বিন্দুমাত্র কোনো রক্ষাকবচ তার ছিলনা। যে রকেট তার নভোযানটিকে মহাশূন্যে নিক্ষেপ করেছিল, সেটি তার আগে বহুবার ব্যর্থ হয়েছিল।ফলে, গ্যাগারিন সেদিন গবেষণাগারের এক গিনিপিগের ভূমিকা নিয়েছিলেন।

তার মাধ্যমে মহাশূন্য সম্পর্কে অজানা কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা হয়েছিল – মহাকাশে কি মানুষ বেঁচে থাকতে পারে? কোনো নভোযানের পক্ষে সেখানে পৌঁছুন কি সম্ভব ? এবং যদি সেটি মহাকাশে পৌঁছুতে পারেও, সেখান থেকে কি ভূপৃষ্ঠের সাথে যোগাযোগ রক্ষা সম্ভব? এবং সেখান থেকে কি নিরাপদে ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসা সম্ভব? বস্তুত সেসময় রকেট থেকে শুরু করে নভোযান এবং তার নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে কেউই শতভাগ নিশ্চিত ছিলেন না। এমনকি মহাশূন্যে পৌঁছুতে পারলেও ভেতরের মানুষটি বাঁচবে কিনা তাও ছিল অজানা।

অথচ মুসলিম ইতিহাস কতই না সফলতার, কতই না নিশ্চয়তার, কতই না সম্মানের! কেননা শবে মেরাজ ছিল মহান আল্লাহপাকের ইচ্ছে ও পরিকল্পনায় মানব ইতিহাসের প্রথম মহাকাশ ভ্রমণ। আর তাঁর প্রিয়তম বান্দা ও রাসুল হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন পৃথিবীর প্রথম নভোচারী। তাই মেরাজের রাত মুসলিম উম্মাহর জন্য শুধু আধ্যাত্মিক ও সম্মানজনকই নয়- মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসেও এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six − 1 =

Back to top button