আন্তর্জাতিক

ইরানের বিক্ষোভকারীদের সাহস দেখে অনুপ্রাণিত ট্রাম্প

ইরানের সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাদের সাহসে অনুপ্রাণিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

এক টুইটবার্তায় ইরানি নেতাদের হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীদের হত্যা করবেন না। ইতিমধ্যে কয়েক হাজার লোকজনকে হত্যা ও কারাবন্দি করেছেন আপনারা। বিশ্বের নজরে রয়েছেন।-খবর মেইল অনলাইন

মানবীয় ভুলে ইউক্রেনের বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে বলে ইরান সরকার স্বীকার করে নিলে ঘটনা ধামাচাপ দেয়ার অভিযোগে রোববার তেহরানের রাস্তায় হাজার হাজার লোক নেমে আসেন। এরপর তার বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।

ট্রাম্প বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষণ করছে। ইন্টারনেট ফিরিয়ে দিন। সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে দিন।

এর আগে শনিবার বিক্ষোভকারীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমরা আপনাদের সাহসে উৎসাহিত হয়েছি।

এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট বলেন, সাহসী ও ধৈর্যশীল ইরানি জনগণ: প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার মেয়াদ শুরুর পর থেকে আমি আপনাদের সমর্থন দিয়ে আসছি। আমার প্রশাসন অব্যাহতভাবে আপনাদের পাশে থাকবে। নিবিড়ভাবে আপনাদের বিক্ষোভ আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আর আপনাদের সাহসে অনুপ্রাণিত হচ্ছি।

ইরানি সরকারেক উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ইরানি জনগণের চলমান বিক্ষোভে সরেজমিনে থেকে ঘটনার পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদন তৈরি করতে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোকে অবশ্যই অনুমোদন দিতে হবে দেশটির সরকারকে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সেখানে আরেকটি গণহত্যা হতে পারে না কিংবা ইন্টারনেটও বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না। বিশ্ব তাদের পর্যবেক্ষণ করছে।

তেহরানে ইউক্রেনের একটি যাত্রীবাহী বিমানে ভুলবশত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে ১৭৬ যাত্রীর সবাই নিহত হন। নিহদের মধ্যে অধিকাংশই ইরানি ও ইরানি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক।

প্রথমে যন্ত্রিক ত্রুটিতে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কথা বললেও পরে মানবীয় ভুলে সেটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে বলে দাবি করে ইরান সরকার।

গত ৩ জানুয়ারি বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড্রোন থেকে রকেট হামলা চালিয়ে ইরানের প্রভাবশালী জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে মার্কিন বাহিনী।

ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই তাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। আর হত্যা অভিযানে অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল সহায়তা করেছে বলে খবরে বলা হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, সোলাইমানি হত্যা অভিযান সামনে রেখে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে কথা বলেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।

যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের মধ্যে একমাত্র এই ইহুদি রাষ্ট্রটিই এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জানতো বলে খবরে দাবি করা হয়েছে।

এবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের পতাকার ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে অস্বীকার করেছেন ইরানের সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। এদিকে প্রতিবাদকারীদের হত্যা না করতে হুশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

রোববার দেশটির শাহেদ বাহশাতি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবেই তারা ও ডোরা (মার্কিন পতাকা) এবং ডেভিডের তারা (ইসরাইলি পতাকা) পায়ে না মাড়িয়ে একপাশ দিয়ে চলে গেছেন।

ব্রিটেনের ডেইলি মেইলের খবরে, এটাকে আবিশ্বাস্য মুহূর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দখলদার ইসরাইলের প্রতি অসম্মান জানাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে দুই দেশের পতাকা এঁকে রেখেছিল ইরানি কর্তৃপক্ষ।

এর আগে ২০১৬ সালে এই দুই বৈরী দেশের পতাকার ওপর দিয়ে না হেঁটে এড়িয়ে গিয়েছিলেন ইরানি অধ্যাপক সাদেগ জিবাকালাম। তিনি বলেন, ওই দেশগুলোর প্রতি অসম্মানের নিদর্শন হচ্ছে এটা। মাটিতে তাদের পতাকা রেখে তার ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া ভুল।

তেহরানে সাবেক মার্কিন দূতাবাসের কাছেই আমির কবির প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হন। ভুলবশত ইউক্রেনীয় যাত্রীবাহী বিমানে গুলি করে বিধ্বস্ত করায় সরকার ও সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা।

এদিকে বিক্ষোভে উসকানিমূলক তৎপরতা চালানোর অভিযোগে তেহরানে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে আটকের পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনাকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছে লন্ডন।

বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তেহরানের আমির কবির, শরীফ ও তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। কিন্তু পরে তা বিক্ষোভে রূপ নেয়।

বিক্ষোভের মুখে দক্ষিণ তেহরানের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা আজাদি স্কোয়ারে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এছাড়া আমির কবির, শরীফ ও তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইনকিলাব স্কোয়ারে রায়ট পুলিশ ও জলকামান মোতায়েন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাইরে এক হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারী দেশটির নেতাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। বিমানটি ভূপাতিত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের এবং যারা ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে তারা মামলা করার আহ্বান জানান। বিক্ষোভে তারা নানা স্লোগান দেন।

স্লোগানের মধ্যে ছিল ‘কমান্ডার-ইন-চিফ পদত্যাগ করুন।’ শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে উদ্দেশ করে এ স্লোগান দেয়া হয়। ‘মিথ্যাবাদীদের মৃত্যুদণ্ড দাও’ বলেও স্লোগান দেয়া হয়।

 

আরও খবর পেতেঃ আন্তর্জাতিকইরান 

Tag: Bangla breaking news 24, Bangla breaking news 24  update

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 + thirteen =

Back to top button