নিজের তৈরি মেশিনে হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন
কুড়িগ্রামের উলিপুরে রেজাউল ইসলাম রেজা নামে এক তরুণ উদ্যোক্তা নিজ উদ্যোগে ইনকিউবেটর মেশিন তৈরি করে তার মাধ্যমে বেইজিং হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন। তার দুটি ইনকিউবেটর মেশিনে ১৭শ ডিম ফুটিয়ে ১২শ থেকে ১৩শটি বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে। তার এই কর্মকাণ্ডের খবর পেয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্যোক্তারা এসে ইনকিউবেটর মেশিন তৈরি করে নিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ী ইউনিয়নের মধূপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় উদ্যোক্তা রেজাউল ইসলাম রেজার সঙ্গে। তিনি জানান, প্রথমে ৭-৮ লাখ টাকা খরচ করে শুরু করেছিলেন ছাগলের খামার। ছয় মাসের মধ্যে ১৫০টি ছাগলের মধ্যে ৭৫টি পিপিআর রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তাতে লোকসান হয় আড়াই লাখ টাকা। এতে হতোদ্যম না হয়ে ইউটিউবে বেইজিং হাঁস সম্পর্কে জেনে আগ্রহী হন হাঁস পালনে। কুড়িগ্রাম হাঁস প্রজনন কেন্দ্রে হাঁস না পেয়ে লালমনিরহাট থেকে এক উদ্যোক্তার কাছ থেকে ২শ ডিমপাড়া বেইজিং হাঁস কিনে আনেন। পরে ছাগলের সেড ব্যবহার শুরু করেন এই হাঁস পালন। সেই সঙ্গে হাঁসের চলাচলের জন্য দেড় একর জমিতে তিনটি বড় পুকুর তৈরি করেন।
রেজা জানান, ইউটিউবে বেইজিং হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানের পদ্ধতি দেখে নিজেই উদ্যোগী হয়ে ৩শ বাচ্চা ফোটানোর মতো ইনকিউবেটর মেশিন উদ্ভাবন করেন তিনি। এতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। ২৮ দিন পর বাচ্চাগুলো খোলস থেকে বেরিয়ে আসার পর সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে দেন। লভ্যাংশ বেড়ে যাওয়ায় ছোট ইনকিউবেটর ভেঙে এখন ৫ হাজার ও ১২ হাজার বাচ্চা ফোটানোর ইনকিউবেটর তৈরি করেন। এতে তার ৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়।
তরুণ এ উদ্যোক্তা জানান, প্রতিটি বাচ্চা উৎপাদনে খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। তিনি এখন বিক্রি করছেন ৭২ থেকে ৭৫ টাকায়। মাসে তার ১৩ হাজার বাচ্চা উৎপাদন হয়। খরচ বাদ দিয়ে মাসে আয় হয় প্রায় ৩ লাখ টাকা। কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালি, সিলেট, চট্টগ্রাম, ভৈরব, হবিগঞ্জ, দিনাজপুর, লালমনিরহাট থেকে ক্রেতা এসে তার কাছ থেকে বাচ্চা নিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ একরের মতো দৈর্ঘ্যরে তিনটি পুকুর থেকে বিনা খরচে তিনি বছরে ৫-৬ লাখ টাকা মাছ বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন।
রেজার বাবা আব্দুল করিম জানান, ২০১৫ সালে আমি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করি। এরপর বাড়িতে এসে ছেলেকে নিয়ে ছাগলের খামার শুরু করি। সেটাতে লোকসান করার পর ছেলে বেইজিং হাঁস পালনে আগ্রহী হয়। তার উদ্যোগের ফলে এখন আমাদের খামার অনেক বড় হয়ে গেছে। এখন এখানে নিয়মিত চারজন লোকের কর্মসংস্থান ছাড়াও প্রতিদিন গড়ে আট-নয় জন লোক কাজ করছে।
রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, আমার হাঁসের বাচ্চার ডিম তৈরির ইনকিউবেটর মেশিন দেখে আগ্রহীদের জন্য তিন জেলায় গিয়ে আমি ইনকিউবেটর মেশিন তৈরি করে দিয়েছি। এরমধ্যে রংপুর থেকে একজন আড়াই লাখ টাকা খরচ করে ১৫ হাজার বাচ্চার একটি, নীলফামারী থেকে তিন লক্ষ টাকা খরচ করে ১৩ হাজার বাচ্চার একটি এবং সিলেট থেকে একজন ১০ হাজার বাচ্চা ফোটানের মেশিন তৈরি করে দিয়ে এসেছি।
তিনি অভিযোগ করেন, তার এই কাজে জেলা বা উপজেলা থেকে কোনো সহায়তা করা হয়নি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি এটি করেছেন। হাঁস পালনে তিনি বেকার যুবকদের এগিয়ে আসার আহ্বা জানান।
রেজাউল ইসলাম রেজার স্বপ্ন প্রসেসিং প্লান্ট তৈরির মাধ্যমে হাঁস পালন করে বাজারজাত করার। বড় আকারে করলে খরচ পরবে ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা। তাই তিনি ছোট আকারে এই প্লান্ট করার স্বপ্ন দেখছেন। যাতে তার প্রসেসিং প্লান্ট থেকে দেশে এবং বিদেশে হাঁসের উন্নতজাতের মাংস সরবরাহ করতে পারেন, সূত্র অধিকার নিউজ।
আরও খবর পেতেঃ হাস্যরস – কি রোজই খাবেন ?
Tag: Bd news 24Bangla, Bd news 24Bangla news