জাতীয়

উড়োজাহাজের নাটবল্টু খুলে লুকিয়ে স্বর্ণ আনছে কারা?

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজের নাটবল্টু খুলে লুকিয়ে স্বর্ণের চালান আনার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বাড়ছে। এর মধ্যে কোনো কোনো চালান ধরা পড়লেও বেশির ভাগ চালান নিরাপদে বিমানবন্দর দিয়ে পার হয়ে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সদস্যরা অভিনব কায়দায় এয়ারক্রাফটের টয়লেটে, সিটের নিচে ও উড়োজাহাজের বডির ভেতর স্বর্ণের চালান পাঠালেও এ পর্যন্ত এসব কারা কিভাবে পাঠাচ্ছে তাদের হদিস বের করতে পারেনি প্রশাসন। শুধু তা-ই নয়, পরে ওই স্বর্ণের চালানগুলো এদেশীয় এজেন্টরা কিভাবে বিমানবন্দর থেকে পার করছে তারও কোনো কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না কাস্টম গোয়েন্দাসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

সর্বশেষ গত রোববার সকাল সোয়া ৮টায় দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের (বিজি-১৪৮) আধুনিক প্রজন্মের ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পরপরই কাস্টম গোয়েন্দারা উড়োজাহাজটি তাদের হেফাজতে নিয়ে যান। একটানা ১০ ঘণ্টা তাদের হেফাজতে রেখে সন্ধ্যা ৬টার দিকে এয়ারক্রাফটটি বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। এর আগে এয়ারক্রাফটের টয়লেট, সিটসহ অন্যান্য স্থানে খোঁজাখুঁজির পরও কোনো স্বর্ণ খুঁজে পাননি গোয়েন্দারা। এরপরই রোববার রাত সোয়া ৮টার দিকে আবার যাত্রী নিয়ে দুবাইয়ের উদ্দেশে চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়।

গতকাল চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রকৌশল শাখার একজন কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে নাম না প্রকাশের শর্তে শুধু বলেন, দুবাই থেকে বিমানের যে এয়ারক্রাফটটি এসেছিল সেটিতে কাস্টম গোয়েন্দারা স্বর্ণের চালান থাকতে পারে বলে সন্দেহ করে আটক করেছিলেন। কিন্তু আমি যত দূর জানতে পেরেছি এই এয়ারক্রাফট থেকে কিছুই মেলেনি।

বিমানবন্দরের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, সকালে এয়ারক্রাফট নামার পরপরই কাস্টম গোয়েন্দারা এয়ারক্রাফট তল্লাশি শুরু করে। কিছু না পাওয়ায় এরপর তারা বিমানের প্রকৌশল বিভাগের সহায়তা চায়।

দুপুরের পর প্রকৌশল শাখার উপস্থিতিতে কোনো কোনো অংশের এয়ারক্রাফটের নাটবল্টু খুলে তল্লাশি করার পরও স্বর্ণ থাকার কোনো কিছুর অস্তিত্ব খুঁজে পাননি তারা। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে কাস্টম গোয়েন্দারা এয়ারক্রাফটটি বিমান কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেন।

এর আগেও কাস্টম গোয়েন্দারা ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের একাধিক এয়ারক্রাফট তল্লাশি করে কখনো সিটের নিচ থেকে, কখনো টয়লেট থেকে স্বর্ণের চালান জব্দ করেন। এসব ঘটনায় বিভাগীয় মামলা দায়ের হলেও কারা এসব স্বর্ণের চালান অভিনব কৌশলে এয়ারক্রাফটের নাটবল্টু খুলে পাঠাচ্ছে তার হিসাব মেলাতে পারছেন না।

গতকাল সোমবার রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মোকাব্বির হোসেন নয়া দিগন্তকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কাস্টম গোয়েন্দাদের এয়ারক্রাফট তল্লাশির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এয়ারক্রাফটে কোনো স্বর্ণ পাওয়া যায়নি। কাস্টম নাকি বোর্ডিং ব্রিজে পেয়েছে। এর বাইরে আর কিছু জানি না। তারা এয়ারক্রাফট চেক করেছেন, এয়ারক্রাফটের টয়লেট চেক করে দেখেছেন কোথাও কিছু পাননি।

এর আগেও এয়ারক্রাফটের নাটবল্টু খুলে গোপনে স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনা রয়েছে এবং কারা এসব স্বর্ণ আনছে এমন প্রশ্নের উত্তরে এমডি বলেন, বাংলাদেশের বাইরের যেসব ডেস্টিনেশনে বিমান যায় সেখানে প্যাসেঞ্জার নামার পর ক্রুরা যখন নেমে যান তখন ওই এয়ারক্রাফটটি থাকে ওই দেশের কোনো এজেন্সির জিম্মায় অথবা গ্রাউন্ড হ্যান্ডলারের জিম্মায়। এখানে বাংলাদেশ বিমানের কেউ নাই।

তিনি বলেন, ঢাকায় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করে বিমান। যতগুলো এয়ারক্রাফট আছে তার সবই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করে বিমান। ক্লিনিংসহ অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং সাপোর্ট দেয়। ঠিক একইভাবে বাইরে আমরা যেসব জায়গায় যাই সেইসব জায়গায় ওই দেশের কোনো এজেন্সি করে থাকে। ফলে টেকনিক্যাল লোক ছাড়া বিভিন্ন এয়ারক্রাফটের বিভিন্ন জায়গায় গোল্ড লুকিয়ে আনে তা টেকনিক্যাল লোক ছাড়া সম্ভব না। ঢুকানোর ক্ষেত্রে বিমানের কেউ জড়িত না।

তবে এখানে আসার পর বের করে নেয়ার ক্ষেত্রে বিমানের কারো কারো সহায়তা থাকতে পারে। সেটি যাতে না হয় সেটায় আমরা অ্যালার্ট আছি বলে জানান তিনি, সূত্র নয়া দিগন্ত

 

বিবিধহাস্যরস

Live BdNews24.com, Live BdNews24.com

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 4 =

Back to top button