Lead Newsরাজনীতি

ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনব: তাপস, প্রয়োজনে জীবন দেব: ইশরাক

ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে প্রচার। মঙ্গলবার দিনভর বিভিন্ন অলিগলি চষে বেড়ান আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী।

যেখানেই যান, সেখানে ছিল বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকের উপস্থিতি। কোথাও কোথাও রাস্তার দু’পাশে থাকা নারী-পুরুষ ফুল ছিটিয়ে মেয়র প্রার্থীকে বরণ করে নেন। তারাও হাত নেড়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজ নিজ প্রতীকে ভোট চান। দেন নানা প্রতিশ্রুতিও।

প্রচারের ১২তম দিনে দক্ষিণে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস ৪২নং ওয়ার্ডের রায়সাহেব বাজার থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। এ সময় পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ঢাকাবাসী তাদের যোগ্য, দক্ষ সেবক হিসেবে নির্বাচিত করবে।

আমরা ঢাকাবাসীর সেবা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে নেমেছি। আর ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের হোসেন মার্কেটের সামনে থেকে গণসংযোগ শুরু করে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, আমার কোনো রাষ্ট্রীয় বা পুলিশি শক্তি নেই। আমার শক্তি হচ্ছে জনগণ। আমি জনগণকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাব। প্রয়োজনে ঢাকাবাসীর জন্য জীবন দেব, রক্ত ঝরাতে হলে ঝরাব। তবুও কোনো ভয়ভীতির কাছে মাথা নত করব না।

তাপসের প্রচার : নির্বাচনী গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। মঙ্গলবার পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানার ৪২, ৪৪, ৪৩নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেন তিনি। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়।

দুপুরে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের রায়সাহেব বাজার থেকে নির্বাচনী প্রচারকালে তাপস বলেন, সাঈদ খোকন মনোনয়ন না পেয়ে কষ্ট পেলেও তিনি আমাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া তিনি (খোকন) এখনও মেয়র হিসেবে আছেন, সুতরাং আচরণবিধি লঙ্ঘন করে তার কাছে কোনো সহযোগিতা আমরা প্রত্যাশা করি না। তবে তিনি সব সময় আমাকে সমর্থন দিয়ে চলেছেন। মনোনয়ন না পাওয়ায় একটু কষ্ট পেলেও দলগতভাবে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। সর্বস্তরের নেতাকর্মী স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনের মাঠে থেকে গণসংযোগ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে শেখ তাপস বলেন, আমরা লক্ষ করছি, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এই নির্বাচনকে ঢাকাবাসীর উন্নয়নের নির্বাচন হিসেবে নিচ্ছে না। তারা এই নির্বাচনকে তাদের আন্দোলন এবং তাদের নেত্রীকে মুক্ত করার অংশ হিসেবে নিচ্ছে। আমরা ঢাকাবাসীর সেবা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য নেমেছি।

ইভিএম নিয়ে বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যে নতুন পদ্ধতি ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচনের কার্যক্রম করছেন, আমি মনে করি, ঢাকাবাসী এটাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। এটা আধুনিক প্রযুক্তি। আমি এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কাউকে কোনো শঙ্কা প্রকাশ করতে শুনিনি।

আওয়ামী লীগ মনোনীত এই মেয়র প্রার্থী বলেন, আমরা ৫টি ভাগে উন্নয়নের রূপরেখা প্রণয়ন করেছি। সেগুলো হল- ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় উন্নত ঢাকা গড়ে তোলা। এই নবযাত্রা ও নবসূচনায় আমি বিশ্বাস করি, ঢাকাবাসী দল-মত নির্বিশেষে সবাই উন্নত ঢাকার পক্ষে রায় দেবেন।

তাপস বলেন, উন্নত ঢাকা গড়ার বার্তা নিয়ে আমরা যেখানে গণসংযোগ করেছি, সেখানেই বিপুল ও স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাচ্ছি। ঢাকাবাসী অধীর আগ্রহে ১ ফেব্রুয়ারি নৌকা মার্কায় ভোট দিতে অপেক্ষা করছে। উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যেই তারা তাদের এই রায় প্রদান করতে চায়। এর মধ্য দিয়ে আমাদের এই প্রাণের ঢাকাকে উন্নত ঢাকা করার লক্ষ্যে একটি নবসূচনা শুরু করব।

এ সময় ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী হাজী মো. সেলিম ও মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী নাসিমা আহমেদকে পরিচয় করিয়ে দেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সানজিদা খানম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সূত্রাপুর থানা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক গাজী সারোয়ার হোসেন বাবু, সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মো. সাহিদ, সাধারণ সম্পাদক গাজী আবু সাইদসহ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ইশরাকের প্রচার : ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেছেন, আমার বাবা সাদেক হোসেন খোকা যাত্রাবাড়ী এলাকায় যুদ্ধের সময় গুলি খেয়েছিলেন। জনগণের অধিকার আদায়ে তিনি রক্ত ঝরিয়েছেন। আর আমি সেই বাবার সন্তান, আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না। আমি সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কাউকে ভয় পাই না। মঙ্গলবার গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন।

সকাল সাড়ে ১০টায় ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার হোসেন মার্কেটের সামনে থেকে ১২তম দিনের প্রচার শুরু করেন ইশরাক। সেখানে পথসভায় যোগ দেন তিনি। সভায় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তাদের মিছিলে এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।

ইশরাক হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাই ছিল গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা। এ অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। কিন্তু কোনো অপশক্তির কাছে আমাদের সেই চেতনাকে বিলীন হতে দিতে পারি না। আমরা এটা মানবো না। এই দেশ আমাদের সবার। এটা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষকে তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করে।

অপশক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পহেলা ফেব্রুয়ারি দলবেঁধে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। ধানের শীষে ভোট দিয়ে আমাদের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধার আন্দোলনে শরিক হবেন।

ইশরাক বলেন, গত কয়েক দিন আমি যেখানে গিয়েছি, সেখানেই ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার দেখেছি, মানুষের ঢল দেখেছি। ভোটবিহীন সরকারের অপশাসন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আজ সারা দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। তাই সরকারের কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের বিজয় ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। ১ ফেব্রুয়ারি বিজয় ছিনিয়ে আনার মাধ্যমে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব।

পথসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ইশরাক হোসেন সাবেক সফল মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সুযোগ্য সন্তান। এই পথসভার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে- পুরো ঢাকার শহর ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ মজলুম জনতার ওপর দুঃশাসন চলছে। এই অন্যায়, অপশাসন ও স্বৈরশাসনের কবল থেকে রক্ষা পেতে ঢাকাবাসীকে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, সালাউদ্দিন আহমেদ, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, ঢাকা মহানগরের নবীউল্লাহ নবী, তানভির আহমেদ রবিন, শরিফ হোসেন প্রমুখ।

স্টাফ কোয়ার্টার থেকে ইশরাক হোসেন বাওনি বাজার, ডেমরা বাজার হয়ে ডেমরা ব্রিজের দিকে গেলে রাস্তার দু’পাশে থাকা নারী-পুরুষ তাকে ফুল ছিটিয়ে বরণ করে নেন। এ সময় ইশরাক হাত নেড়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। সবার কাছে দোয়া চান। পরে মিরপাড়া, আমুলিয়া স্টাফ কোয়ার্টার রোড, মোয়াজ্জেম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, সারুলিয়া বাজার, মা মেমোরিয়াল স্কুল, সফুরুদ্দিন মার্কেট, আমতলা, তালেবালী মসজিদ, জয়নালের স্কুল, অক্সফোর্ড স্কুল হয়ে রসুলনগর এলাকায় গণসংযোগ শেষে ৬৬নং ওয়ার্ডে অবরিতা কমিউনিটি সেন্টারে নামাজ ও মধ্যাহ্নবিরতি দেন। বিরতি শেষে ডগাইর বাজার, বাঁশেরপুল হয়ে ৬৪নং ওয়ার্ডের ডেমরা প্রধান সড়কে এসে গণসংযোগ শেষ করেন ইশরাক।

ডেমরা এলাকার মালা মার্কেটে গণসংযোগকালে দ্বিতীয় পথসভায় ইশরাক হোসেন বলেন, আপনারা কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে দেবেন। ধানের শীষের পক্ষে যে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে তাতে সব অপচেষ্টা ভেসে যাবে।

আজ বুধবার সকাল ১০টায় ৩১নং ওয়ার্ডের আরমানিটোলা হাইস্কুলের সামনে থেকে ১৩তম দিনের প্রচার শুরু করবেন ইশরাক। পরে দিনভর ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৫৫ ও ৫৬নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করবেন তিনি, সূত্র যুগান্তর

 

আরও খবরঃ শিল্প ও বাণিজ্যভিডিও 

Bangla Newspaper 24, Bangla newspaper 24

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − 13 =

Back to top button