মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন ক্ষতিকর নয়: বিটিআরসি
মোবাইল টাওয়ার থেকে নির্গত রেডিয়েশনের মাত্রা নিয়ে সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘টাওয়ার রেডিয়েশনের মানদণ্ড ও সাম্প্রতিক জরিপ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বিটিআরসির মহাপরিচালক (স্পেকটাম) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল আলম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিটিআরসি যে জরিপ চালিয়েছে, সেখানে টাওয়ারের রেডিয়েশন আন্তর্জাতিক ও বিটিআরসির বেঁধে দেয়া মানদণ্ডের অনেক নিচে আছে। তাই এ বিষয়ে আতংকিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
সভায় বিটিআরসির কমিশনার আমিনুল হাসান বলেন, আমরা দেশের অনেকগুলো স্থানে মোবাইল টাওয়ার রেডিয়েশন জরিপ সম্পন্ন করেছি এবং তা অব্যাহত থাকবে। টাওয়ারের রেডিয়েশনের ফল অত্যন্ত সন্তোষজনক পাওয়া গেছে, যা আমরা নিয়মিতভাবে বিটিআরসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করি। টাওয়ার রেডিয়েশন নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি আছে, তবে এটা ভিত্তিহীন।
দেশের উচ্চ আদালত আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন। খুব দ্রুতই আদালতের কাছে প্রতিবেদন পেশ করা হবে বলেও জনান তিনি।
রেডিয়েশন সর্ম্পকে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের উপপরিচালক ড. শামসুজ্জোহা বলেন, রেডিয়েশন দুই প্রকার- আয়োনাইজিং ও নন-আয়োনাইজিং। এর মধ্যে আয়োনাইজিং রেডিয়েশন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, যেমন পারমাণবিক বর্জ্য, সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রে, গামা-রে কিংবা এক্স-রে। এগুলো শরীরের মধ্যে ডিএনএ পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তবে নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশনের শক্তি খুব কম, ফলে এতে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই।
তিনি বলেন, মোবাইল টাওয়ারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ইএমএফ রেডিয়েশন বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নির্দিষ্ট মানদণ্ড আছে। আমরা জরিপে পেয়েছি, দেশের মোবাইল টাওয়ারগুলোর রেডিয়েশন নির্ধারিত সীমার অনেক নিচে রয়েছে।
জরিপ করতে গিয়ে কয়েকটি টাওয়ারের উপর পাখির বাসা দেখেছি উল্লেখ করে ড. শামসুজ্জোহা আরো বলেন, পাখিরা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে আছে এবং বংশ বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। অনেক ভবনের ছাদে বাগান করা হয়েছে, তাতে খুব ভালো সবজির ফলন হচ্ছে। আশা করি, এই টাওয়ার রেডিয়েশন নিয়ে জনমনে যে বিভ্রান্তি আছে তা দূর হবে।
জরিপ অব্যাহত রাখা এবং রেডিয়েশন নিয়ে জনমনে যে বিভ্রান্তি আছে তা দূর করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিটিআরসির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, ইদানিং অনেক চিকিৎসকের মধ্যে রেডিয়েশন নিয়ে মনগড়া মন্তব্য করার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। এটা ঠিক নয়। বরং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে এক্স-রে বা অন্যান্য পরীক্ষায় যে রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয় সেটা ক্ষতিকর। তাদের আরো বেশি সতর্ক হওয়া দরকার।
অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অফ বাংলাদেশের (এমটব) মহাসচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব.) বলেন, সামনে যখন ফাইভ-জি আসবে তখন আমাদের অনেক বেশি সাইটের প্রয়োজন হবে। তাই শুধু শুধু আতংকিত হয়ে প্রযুক্তিকে রুদ্ধ করার কোনো যুক্তি নেই। তাহলে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়ব। বিটিআরসির উদ্যোগে ও এমটবের আয়োজনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।