আন্তর্জাতিক

রাতের অন্ধকার রাস্তায় ফের স্লোগান ‘গোলি মারো’

কোন রাস্তা দিয়ে ফিরছ? সেখানে কোনো গোলমাল নেই তো? অফিস থেকে একটু রাতে বাড়ি ফেরার সময় গত তিন দিন ফোনে এই কথোপকথনগুলোই এখন নিয়ম। পূর্ব দিল্লির যে এলাকায় ১২ বছর ধরে বাস, রাইসিনা হিলস থেকে তার দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। এই পাড়া থেকে জাফরাবাদ-মৌজপুরের দূরত্ব আরো ১০-১২ কিলোমিটার। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে নতুন দিল্লি থেকে যমুনার ব্রিজ পেরিয়ে পূর্ব দিল্লিতে ঢুকতেই শহরটা যেন পাল্টে গেল।

নতুন দিল্লি থেকে আইটিও হয়ে পূর্ব দিল্লিতে ঢুকতেই লক্ষ্মীনগর। এলাকার নতুন বিজেপি বিধায়ক অভয় বর্মার নেতৃত্বে সন্ধ্যায় মিছিল বেরিয়েছিল। স্লোগান উঠেছিল— ‘দেশকে হত্যারোঁ কো, গোলি মারো শালো কো’, ‘যো হিন্দু হিত কি বাত করেগা, ওহি দেশ মে রাজ করেগা’। লক্ষ্মীনগর রাত ১২টা-১টাতেও গমগম করে। খাবারের ছোট ছোট দোকান খোলা থাকে।

মেট্রো স্টেশনে অটোর অপেক্ষায় ভিড় লেগে থাকে। মঙ্গলবার সেই লক্ষ্মীনগর শুনশান। রাস্তার সমস্ত আলো নেভানো। ৭-৮ কিলোমিটার দূরে উত্তর-পূর্ব দিল্লির অশান্তির আতঙ্ক এতখানি পথ পেরিয়ে চলে এসেছে! দিল্লিতে চাকরি করলেও যারা উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ, ইন্দিরাপুরম, নয়ডায় বসবাস করেন, তাদের মনে আতঙ্ক— বর্ডার সিল করে দেবে না তো?

উচ্চ-মধ্যবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তদের জন্য আবাসন। তার পাশেই নিম্ন-মধ্যবিত্তদের পাড়া। সেখানে বাংলা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার থেকে রুটিরুজির সন্ধানে আসা গরিব মানুষের বাস। মুসলিমেরা সংখ্যায় বেশি। রাস্তার এ পারে মন্দির, তো ও পারে মসজিদ। মসজিদের সামনের পার্কে ভোরবেলায় লাফিং ক্লাব। সপ্তাহান্তে ওই পার্কেই এখন আরএসএস-এর শাখা। তবু অশান্তি বাঁধেনি।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেই মসজিদের সামনের বেপাড়ার কিছু লোক ঢুকে পড়েছিল। নানা রকম কটূ-কাটব্য, বাগবিতণ্ডা— অশান্তি তৈরির উপক্রম। এলাকার বিধায়ক দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসৌদিয়া। পুলিশ আসতে দেরি করেনি বলে পরিস্থিতি খারাপ দিকে এগোয়নি। কিন্তু দোকানপাট সন্ধ্যা নামতেই বন্ধ। ঘরে ঢুকে পড়েছেন রিকশাওয়ালারা। দিল্লি জুড়ে এ ভাবেই ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। শহরটা যে পাল্টে যাচ্ছে, কিছু দিন ধরেই টের পাওয়া যাচ্ছিল।

গত বছর রামনবমীর সময় এই মসজিদের সামনেই হিন্দুত্ববাদীরা জড়ো হয়ে আবির খেলতে শুরু করেছিল। মুখে ‘জয় শ্রী রাম’। সে বারও পুলিশ এসে সামলায়। গোটা পাড়ায় একটাই দুর্গাপুজো। বহু বছরের। হঠাৎ শোনা গেল, সে পুজো করার অনুমতি মিলবে না। পুজোর মাঠে আমিষ খাবার নিয়ে আপত্তি। পুজোর সময় পার্কে আমিষ রান্না হবে না— থানা-পুরসভায় লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে পুজোর অনুমতি মিলেছিল।

এক প্রতিবেশী মুসলিম পরিবারের গলায় হতাশার সুর। ‘কেউ চাইছে না, আমরা এখানে থাকি। আমরাও বুঝতে পারছি। বাড়িতেও আলোচনা করছি। কিন্তু আমরা কোথায় যাব বলুন তো?’ প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাই না। রাজধানী শহরেও মানুষ এত নিরাপত্তার অভাবে ভোগে? মুসলিম না-হলেও কি বাকিরা নিশ্চিন্তে রয়েছেন? এক প্রতিবেশী বলছিলেন, কে বলবে এটা দেশের রাজধানী! অন্য শহরের বন্ধুরা এখন ফোন করলেই বলে, তোমাদের দিল্লিতে তো এখন খুব অশান্তি চলছে! জেএনইউ, জামিয়া, শাহিন বাগ, জাফরাবাদ-মৌজপুর— থামার লক্ষণই নেই।

যেন, ‘ইস রাত কি সুবাহ নেহি’। (আফসোস, এই রাতের যেন কোনো ভোর নেই)। সূত্র : আনন্দবাজার

 

আরও খবর পেতেঃ জাতীয় খবররাজনীতির খবর 

Bd News24, Bd News24

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 4 =

Back to top button