ক্যারিয়ারের প্রায় অন্তিমলগ্নে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। যেকোনো দিন হয়তো চলে আসতে পারে অবসরের ঘোষণা। তবে সেই দিনটি আসার আগ পর্যন্ত নিজের খেলাটা উপভোগ করতে চান- এমন কথা তিনি অনেকবারই বলেছেন সংবাদমাধ্যমে।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের কারণে নিজের মতো করে উপভোগের সুযোগটা নেই মাশরাফির সামনে। কেননা পরিসংখ্যান সাক্ষী দিচ্ছে, সবশেষ দশ ওয়ানডেতে মাশরাফির উইকেট সংখ্যা মাত্র একটি। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, প্রায় ১৮ বছরের ক্যারিয়ারের কখনওই এতো বাজে সময়ের মধ্যে যেতে হয়নি টাইগার অধিনায়ককে।
এ দুঃসময়কে পেছনে ফেলার সুবর্ণ সুযোগ এবার মাশরাফির সামনে। আগামীকাল (রোববার) থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের জিম্বাবুয়ে সিরিজ। প্রতিপক্ষ চিরচেনা ও তুলনামূলক দুর্বল বলেই মাশরাফি এবার ফর্মে ফিরতে পারবেন- এমনটাই ধারণা অনেকের।
কিন্তু সেটি করার আগে এক মুহূর্তের জন্যও নিস্তার নেই তার। স্বভাবতই নিজের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের কারণে বারবার জর্জরিত হচ্ছেন প্রশ্নবাণে। যেমনটা তাকে শুনতে হলো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনেও।
প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, ‘আপনার (মাশরাফি) কাছে যেসব বিষয় তুলে ধরা হয়, সেগুলো এখন অনেকটা আত্মসম্মানের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেষ দশ ম্যাচে উইকেট নেই কিংবা পাঁচ ম্যাচে উইকেট নেই- ক্যারিয়ারে এমন অবস্থায় কখনও পড়েননি আপনি। এখন প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে বলেই কি বাড়তি অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন?’
উত্তর দিতে গিয়ে যেন খানিক ক্ষেপলেন মাশরাফি। তবে কণ্ঠে যতসম্ভব নমনীয়তা ধরে রেখেই প্রথমে উত্তর দিলেন খেলার মাঝে আত্মসম্মানের বিষয়টি পরিষ্কার করে। তিনি বলেন, ‘প্রথমত হচ্ছে আত্মসম্মান বা লজ্জা! আমি চুরি করি মাঠে? আমি কি চোর?’
‘খেলার সাথে লজ্জা, আত্মসম্মান আমি মেলাতে পারি না। এতো জায়গায় এতো চুরি হচ্ছে তাদের লজ্জা নেই। আমি মাঠে এসে উইকেট না পেলে আমার লজ্জা লাগে, আমি কি চোর? মানে উইকেট আমি নাই পেতে পারি আমার সমালোচনা করবেন, সমর্থকরা করবে। লজ্জা পেতে হবে কেন?’- পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েন মাশরাফি।
পরে উত্তরটাও নিজ থেকেই দেন। খেলার মধ্যে লজ্জার কোনো স্থান নেই বলেই ব্যাখ্যা করেন মাশরাফি। বিশেষ করে তিনি যখন নিজ দেশের হয়েই খেলছেন, তখন লজ্জা বা আত্মসম্মানের কোনো বিষয় আসার সুযোগ নেই বলেই মনে করেন টাইগার অধিনায়ক।
মাশরাফি বলেন, ‘আমি কি বাংলাদেশের হয়ে খেলছি, না অন্য কোনো দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলছি যাতে আমার লজ্জা পেতে হবে? আমি পারিনি আমাকে বাদ দেবে, জিনিসটা তো সহজ। এখন কথা হচ্ছে যে লজ্জা, আত্মসম্মানবোধ আমি কার সাথে দেখাবো? আমি তো বাংলাদেশের হয়ে খেলতে নামছি। আমি কি বাংলাদেশের জনগণের বিপক্ষের মানুষ?’
যেহেতু তিনি একজন ক্রিকেটার, তাই ক্রিকেট মাঠে ব্যর্থতার জন্য সমালোচনা করলে তাতে কোনো সমস্যা নেই মাশরাফির, ‘আমি উইকেট পাই না, আমার সমালোচনা হবে। কিন্তু কথা যখন আসে লজ্জা, আত্মসম্মানবোধ। আমার সমালোচনা করুক, কিন্তু ক্রিকেট খেলতে এসে আমি কি আত্মসম্মান বিসর্জন দিতে আসছি নাকি! আমি কি অন্য দেশের হয়ে খেলতে নামি নাকি? নাকি আমি চুরি করি? এই জিনিসটার সাথে আমি মোটেও একমত না।’
প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশ অর্থাৎ সাম্প্রতিক সময়ের অফ ফর্মের কারণে থাকা চাপের ব্যাপারে মাশরাফি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিটা ম্যাচেই চাপ থাকে, এটা থাকবেই। মুশফিক গত ম্যাচে দুইশ করল। পরে যখন সে খেলতে নামবে, তখন কি কোনো চাপ থাকবে না? এটা থাকবেই। আমার ক্ষেত্রে সবকিছু মিলিয়ে হয়তো জিনিসটা একটু জটিল জায়গায় আছে। কিন্তু এর মানে এই না যে, এ জায়গা থেকে বের হতে পারব না। আবার একই সময়ে আমি গ্যারান্টিও দিতে পারব না যে, কালকেই পাঁচ উইকেট পেয়ে যাব। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের এমন একটা সময় আসেই। তখন প্রত্যেকটা দিনই তার জন্য চ্যালেঞ্জিং। আমিও হয়তোবা এমন অবস্থায় আছি।’
আর সংবাদ পেতে দেখুনঃ তরতাজা খেলার খবর – কর্পোরেট নিউজ
Online News Bangladesh, Online News Bangladesh