অভিন্ন ৫৪ নদীর পানিবণ্টনের বিধি নিয়ে কাজ করছে ঢাকা-দিল্লি: জয়শংকর
বাংলাদেশ ও ভারত অভিন্ন ৫৪ নদীর পানিবণ্টনে ‘পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিধির’ সন্ধানে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শংকর।
ঢাকায় সাংবাদিকদের তিনি মঙ্গলবার বলেন, ‘আমাদের ৫৪ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনে পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিধি খুঁজে পেতে অগ্রগতির অপেক্ষায় আছি আমরা।’ খবর ইউএনবি।
দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জয়শংকর বলেন, বিষয়টি সমাধানে তাদের যে প্রতিশ্রুতি আছে তাতে কোনো পরিবর্তন নেই। ‘আমাদের একটি অবস্থান আছে। আপনারা সবাই তা জানেন। এ অবস্থানে আমাদের একটি প্রতিশ্রুতি আছে। এবং এ বিষয়ে কোনো পরিবর্তন নেই।’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বেলা ১১টা ১০ মিনিটে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন। এক ঘণ্টার অধিক সময় ধরে চলা বৈঠক শেষে তারা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে জয়শংকর বলেন, তারা একমত যে রোহিঙ্গাদের নিজেদের ভূমি রাখাইন রাজ্যে ‘নিরাপদ, দ্রুত ও টেকসই’ প্রত্যাবাসন তিন দেশ- বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের জাতীয় স্বার্থের বিষয়।
‘বাস্তুচ্যুত মানুষদের বাংলাদেশে আরও সহযোগিতা দিতে এবং রাখাইন রাজ্যে আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে আমাদের প্রস্তুত থাকা আমরা পুনর্ব্যক্ত করেছি,’ বলেন তিনি।
আসামে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) করার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি তাদের দেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’।
জয়শংকর বলেন, অংশীদার হিসেবে এক সাথে কাজ করলে প্রতিবেশীরা কী করতে পারে তার উদাহরণ হয়ে আছে বাংলাদেশের সাথে ভারতের অংশীদারিত্ব।
এ অংশীদারিত্ব যে দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশ্বের জন্য সত্যিকারের রোল মডেল তা নিশ্চিত করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ভারতীয় মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মসূচিগুলো, যা ভারতের স্বার্থেও অন্তর্ভুক্ত তা বাস্তবায়নে তারা সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা দিতে চান।
সম্পর্কের বর্তমান সময়কে ‘সোনালি যুগ’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অংশীদারিত্ব যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে দুই দেশই পারস্পরিকভাবে উপকৃত হবে।
জয়শংকর বলেন, দুদেশের খুব গুরুত্বপূর্ণ অভিন্ন ইতিহাস রয়েছে এবং তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের উদযাপনে অংশ নেয়ার অপেক্ষায় আছেন।
ভারতীয় মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে দেশটি যে গুরুত্ব দেয় তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে এ সফরের মাধ্যমে তারা প্রকাশ্যে জানান দিয়েছে। ‘এটা এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।’
জয়শংকর বলেন, অপরাধ, চরমপন্থা ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে উন্নত অংশীদারিত্ব দুদেশের জনগণের জন্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরাসরি উপকার বয়ে আনবে।
যোগাযোগ নিয়ে তিনি বলেন, এ খাতের সব সম্ভাবনা বাস্তবায়নে দুদেশের অংশীদারিত্বকে বর্ধিত করবে তারা।
‘সরকারি ও বেসরকারি খাতে অংশীদারিত্বসহ আমাদের জ্বালানি-ভাগাভাগির অনেক প্রকল্প আছে, যা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি,’ যোগ করেন তিনি।
বাণিজ্য নিয়ে জয়শংকর বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিকশিত ও পরিপক্ব হওয়ায় তারা অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের পরবর্তী স্তরে পৌঁছাতে প্রস্তুত।
মানুষের সাথে মানুষের সংযোগ নিয়ে তিনি বলেন, ভারতের সবচেয়ে বড় কনস্যুলার সেবা এখন বাংলাদেশে পরিচালনা করা হচ্ছে এবং এ নিয়ে ভারত গর্বিত।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন জানান, তারা অনেক বিষয় নিয়ে খুব ভালো আলোচনা করেছেন এবং প্রায় সবকিছুতে ঐকমত্য হয়েছে।
তিনি বলেন, তারা আলোচনা নিয়ে সন্তুষ্ট এবং সামনে উন্নত দিনের আশায় আছেন।