সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা পশ্চিমবঙ্গে; ‘বাংলাদেশি পাড়া’ জনশূন্য
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে সতর্কতা হিসেবে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেরও সব স্কুল ও কলেজ বন্ধের নির্দেশ জারি করা হয়েছে। রাজ্য সরকার এক নির্দেশে সোমবার থেকে রাজ্যের সমস্ত স্কুল ও কলেজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী ৩১শে মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসাসহ সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে সূচি অনুযায়ী উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলবে। তাতে কোনো রদবদল হবে না।
খড়গপুর আইআইটিও ৩১শে মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে আগেই। কোনো ক্লাস অথবা সেমিনার কিছুই করা হবে না। সেই মতো শনিবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেছেন ছাত্রছাত্রীরা। পাশাপাশি শনিবার থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত ক্লাস এবং পরীক্ষা।
এমনকি হোস্টেলও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। যতদিন না পরবর্তী নির্দেশিকা বেরুচ্ছে ততদিন পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের হোস্টেলে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। সমস্ত অনুষ্ঠানও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে কর্তৃপক্ষের তরফে। ৩১শে মার্চের পর পরবর্তী নির্দেশিকা জারি করা হবে বলে জানানো হয়েছে। ক্লাস বন্ধের নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়েও। পশ্চিমবঙ্গে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের নিশ্চিত কোনো খবর পাওয়া না গেলেও ভারতে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে ৮৩তে পৌঁছেছে। ইতিমধ্যেই দু’জনের মৃত্যু ঘটেছে।
গত মঙ্গলবার কর্ণাটকে একজনের মৃত্যু হয়েছিল এক প্রৌঢ়ের। শুক্রবার দিল্লিতে মৃত্যু হয়েছে এক প্রৌঢ়ার। ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে শপিং মল, সিনেমা হল, নাইট ক্লাব, বিবাহ অনুষ্ঠান সহ সমস্ত জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সব খেলাধুলাও বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে শনিবার দর্শকশূন্য মাঠে আইএসএলের ফাইনাল হওয়ার কথা রয়েছে।কলকাতার ‘বাংলাদেশি পাড়া’ জনশূন্য।
কলকাতার নিউমার্কেট সংলগ্ন মারকুইজ স্ট্রিট, ফ্রি-স্কুল স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, স্টুয়ার্ট লেন, টোটি লেন, হার্টফোর্ট লেনগুলো একপ্রকার জনশূন্য হয়ে পড়েছে। এই অঞ্চলের হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে সব সময় গিজ গিজ করতো বাংলাদেশি সহ অন্যান্য দেশের পর্যটকের আনাগোনায়। বাংলাদেশি পাড়া বলে পরিচিত নিউমার্কেটের এই এলাকায় আগে যেখানে একজন একজন অন্তর বাংলাদেশিদের দেখা পাওয়া যেতো শনিবার সেখানে গিয়ে একজনও বাংলাদেশির দেখা পাওয়া যায়নি।
সামান্য যে কয়েকজন ছিলেন তারা শনিবার সকালেই হোটেল ছেড়ে স্বদেশের পথে রওনা দিয়েছেন। অনেকেই চিকিৎসার জন্য এলেও তা অসম্পূর্ণ রেখেই ফিরে গিয়েছেন বলে বিভিন্ন গেস্ট হাউস সূত্রে জানা গেছে। আগামী এক মাস বিদেশিদের ভারতে আসার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় হোটেল ও রেস্তরাঁ মালিকদের মাথায় হাত পড়েছে।
আগামী ৪৫ দিন পর্যন্ত সব বুকিং বাতিল হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর স্ট্রিটের একটি হোটেলের ম্যানেজার। পর্যটক সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসায়ীদের মুখ এখন ভার। নিউ মার্কেট, এয়ারকন্ডিশন মার্কেট সহ মধ্য কলকাতার বিভিন্ন বিপণিগুলো চলতো বাংলাদেশিদের কেনাকাটার উপর। এবার বাংলাদেশি শূন্য কলকাতায় কেনাকাটা বন্ধে চোখের পানি ফেলছেন তারা।
গত শুক্রবার থেকেই বাংলাদেশগামী সরকারি পরিবহন পরিষেবা সৌহার্দ্যের যাতায়াত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বেসরকারি বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার যে অসংখ্য ভলবো বাস প্রতিদিন পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত যাতায়াত করতো সেগুলো শনিবার থেকে প্রায় সম্পূর্ণভাবেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
শনিবার ঢাকা থেকে শুধুমাত্র ভারতীয় যাত্রী নিয়ে মৈত্রীর ভারতীয় ট্রেনটি ফিরে আসার পর ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত আর মৈত্রী এবং বন্ধন ট্রেন যাতায়াত করবে না। এদিকে কলকাতার বাইপাসের ধারের স্পেশ্যালিটি হাসপাতালগুলোর পরিচালকদেরও মাথায় হাত। এই সব হাসপাতালে প্রধানত বাংলাদেশিরাই চিকিৎসা নিতে আসেন।
আরও নতুন খবর পেতেঃ কর্পোরেট বাংলা নিউজ – মজাদার সব রান্নার নিউজ
National News, National News