নাগরিকত্ব ও সমঅধিকার পেলেই স্বদেশে ফিরতে চায় রোহিঙ্গারা
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছে, নাগরিকত্ব ও সম-অধিকার নিশ্চিত হলে যে পথ দিয়ে তারা আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশে এসেছিলো সেটি দিয়েই ফেরত যাত্রার ঢল নামবে।
কিন্তু নাগরিকত্ব ও সম-অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা ফিরে যেতে ইচ্ছুক না। তারা ফেলে আসা ধন-সম্পদ, ভিটে-বাড়ি ফেরত ও জীবনের সুরক্ষার নিশ্চয়তা পেলে তখন স্বদেশে ফিরে যাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে চায়।
“এর আগে আমাদের জোর করে কেউ মিয়ানমারে নিয়ে যেতে পারবে না। প্রয়োজনে (বাংলাদেশে) গুলি করে আমাদের হত্যা করেন, তাতে আমরা খুশি। এতে করে আমাদের মৃতদেহ নূন্যতম জানাজা ও কবরের একটি নিদিষ্ট স্থান পাবে।”
মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া নিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণাথী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সহকারীর কার্যালয়ে স্থাপিত ‘তালিকায় নাম থাকা’ রোহিঙ্গারা স্বাক্ষাৎকার দিতে এসে গত বুধবার দুপুরে এসব কথা বললেন।
এ বিষয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী গৃহবধূ জামিলা আক্তার, মো. সেলিম, আফাজ উল্লাহ, শামশু আলম, আবু ছিদ্দিক, কবির, আবু তাহের ও মোহাম্মদ সেলিমসহ অনন্ত ১৫-২০ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা হয়।
শালবাগান রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সহকারী মোহাম্মদ খালেদ হোসেন বলেন, এ শিবিরে ৪২ হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। প্রত্যাবাসন প্রত্যাশী ৩ হাজার ৫৪০ জনের মধ্যে এ শিবির থেকে ৩ হাজার ৯১ জনের নামের একটি তালিকা কাছে এসেছে। তালিকায় যেসব রোহিঙ্গাদের নাম রয়েছে তাদের স্বাক্ষাৎকার নেওয়ার কাজ চলছে। এ পর্যন্ত ২০০ রোহিঙ্গা পরিবারের স্বাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
টেকনাফে হ্নীলার জাদিমোরা শালবাগান শিবিরের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সহকারী মোহাম্মদ খালেদ হোসেনের কার্যালয় থেকে জাতিসংঘের শরণাথী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিশনারের ১০টি দল শালবাগানের বিভিন্ন ঘরে প্রত্যাবাসনের তালিকায় নাম থাকা রোহিঙ্গাদের গিয়ে বুঝানোর চেষ্টা চালায়।সকাল থেকে তালিকায় নাম থাকা রোহিঙ্গারা হাতে একটি ফাইল নিয়ে ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ের পাশে স্থাপিত কক্ষে ঢুকে স্বাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকার দিয়ে বের হয়ে আসার পর রশিদ আমিন নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, আমরা বর্তমান অবস্থায় মিয়ানমারে ফেরত যেতে চাই না। মিয়ানমারে আমাদের ওপর নির্যাতনের বিচার করতে হবে, আমাদের সম্পত্তি ফেরত দিতে হবে, আমাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। এরপরই আমরা সেখানে ফেরত যাবো। এই কথাই আমরা সাক্ষাৎকারে বলেছি।
সাক্ষাৎকার দিতে আসা আফাজ উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, আমাদের নাগরিকত্ব ও সমঅধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার ফেরত যাবো না। কারণ মিয়ানমার সরকারকে কোনোভাবে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না।
সাক্ষাৎকার শেষে রোহিঙ্গা শরণার্থী রশিদা বেগম ও আবু তাহের বলেন, দলটি প্রথমেই জিঞ্জাসা করলেন, মিয়ানমার ফেরত যাবে কি না। আমরা সরাসরি না বলেছি। কারণ আমাদের আগে নাগরিকত্ব ও সমঅধিকার পেলে ফিরে যাব। এর সঙ্গে ধন-সম্পদ, ভিটি-বাড়ি ফেরত ও জীবনের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে হবে। তারপর স্বদেশে ফিরে যাব।
তারা আরও বললেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা ফেরত যাওয়ার মত পরিস্থিতি এখনো সৃষ্টি হয়নি। সেখানে এখনও রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন চলছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, রোহিঙ্গাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রত্যাবাসন স্থলপথে করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে মিয়ানমারকে।