দুই বছরের বেশি সময় কারাভোগের পর অবশেষে মুক্তি পেলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বিএনপি’র চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব আব্দুস সাত্তার বিবিসির কাদির কল্লোলকে একথা নিশ্চিত করেছেন।
মিস্টার সাত্তার জানিয়েছেন, বেলা তিনটা পাঁচ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি দেয়ার পর পরিবারের সদস্যরা এবং বিএনপির মহাসচিব তাকে গ্রহণ করেন।
এর আগে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ছয় মাসের জন্য তার সাজা স্থগিত করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তি দেয়ার পর থেকে এই ছয় মাস গণনা শুরু হবে।
দুইটি শর্তে তাকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে আইনমন্ত্রী জানান। সেগুলো হলো, এই সময়ে তাঁর ঢাকায় নিজের বাসায় থাকতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
আইনমন্ত্রী বলেন, ”বেগম খালেদা জিয়ার বয়স বিবেচনায়, মানবিক কারণে, সরকার সদয় হয়ে দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এদিকে মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার মুক্তির ঘোষণা আসার পর এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, এতে দল ও নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি বোধ কাজ করছে।
তিনি বলেন, ”সরকারের এই সিদ্ধান্তে দল ও নেতাকর্মীরা যেমন স্বস্তি বোধ করছেন, আবেগ কাজ করছে, পাশাপাশি তাদের মধ্যে একটি আতঙ্কও কাজ করছে এটা ভেবে যে এমন একটা সময়ে তাকে মুক্তির এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, যখন করোনাভাইরাস নিয়ে একটি দুর্যোগ চলছে।” সূত্র বিবিসি বাংলা।
কারাগার থেকে হাসপাতাল
খালেদা জিয়া কারাগারে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ড কারাগারে গিয়ে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। এরপর ৭ এপ্রিল বেলা ১১টা ২০ মিনিটে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হয়। ওইদিন কেবিন ব্লকের ৫১২ নম্বর কক্ষে অবস্থান করেন খালেদা জিয়া। ফের ফিরিয়ে নেওয়া হয় কারাগারে। এরপর ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করতে ও চিকিৎসা সেবা শুরু করতে পাঁচ সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। দুইদিন পর ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর ফের একই হাসপাতালে আনা হয় তাকে।
২০১৯ সালের ১ এপ্রিল পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় খালেদা জিয়াকে। তিনি সেখানে ৬২১ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে জানান খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জিলন মিয়া সরকার। তার পাশের ৬২২ নম্বর কেবিনটিতে কারা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলরা অবস্থান করছিলেন।
বিএনপির ও চেয়ারপারসনের পরিবারের পক্ষ থেকে অনেকবার খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতির কথা জানানো হয়। যদিও এই দাবি নিয়ে কয়েক দফায় উচ্চ আদালতে আপিল, রিভিউ আপিল করেও তাকে মুক্ত করতে পারেননি আইনজীবীরা। আর এ নিয়ে বরাবরই আইনজীবীদের সঙ্গে দলের নেতাদের বিরোধ ছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও নতুন খবর পেতে দেখুনঃ কর্পোরেট বাংলা নিউজ – করোনাভাইরাস নিউজ আপডেট
Positive News, Positive News