আন্তর্জাতিককরোনাভাইরাস

ময়লা ফেলার প্লাস্টিক ব্যাগ পরেই চিকিৎসা দিচ্ছেন ডাক্তাররা

সারা বিশ্বেই এখন পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষাসরঞ্জাম) সংকট। করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই সংকটের এ খবর বারবারই সামনে আসছে বিশ্ব গণমাধ্যমে।

করোনার অন্যতম হটস্পট স্পেন-ব্রিটেনও এর ব্যতিক্রম নয়। যেভাবে দ্রুতগতিতে দেশ দুটিতে ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ, তাতে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যথেষ্ট মুশকিল হচ্ছে।

কিন্তু তারপরও থেমে থাকছেন না চিকিৎসকরা। ময়লা ফেলার প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে নিজেদের গা-মাথা-পা মুড়ে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন রোগীদের।

শুধু ব্রিটেন নয়, একই উপায়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন স্পেনের ডাক্তার-নার্সরাও। স্পেনে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে ১৫ হাজার ডাক্তার-নার্স সংক্রমিত হয়েছেন, যা মোট আক্রান্তের প্রায় ১৫ শতাংশ।

ইতালিতে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন চার হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী। রোববার চিকিৎসক-নার্সদের ক্রান্তিকালীন স্বাস্থ্যসেবার এ দৃশ্য তুলে ধরেছে বিভিন্ন গণমাধ্যম।

লন্ডনের খ্যাতনামা চিকিৎসক ডা. রবার্টসের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, প্রতিটি হাসপাতালের আইসিইউ এখন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীতে পরিপূর্ণ।

তার কথায়, ‘এই অবস্থায় ময়লা ফেলার প্লাস্টিকের ব্যাগ (বিন ব্যাগ) দিয়ে বানানো পিপিই পরতে হচ্ছে আমাদের। অনেক হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

অনেক ক্যান্সার ক্লিনিকও বন্ধ। শুধু যে হাসপাতালগুলোয় করোনার চিকিৎসার পরিকাঠামো রয়েছে, সেগুলোই খোলা। তারপরেও সেগুলোর বেশির ভাগেই স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব আছে। রয়েছে বেডের অভাব। একদম সাধারণ মানের ভেন্টিলেটরও সব জায়গায় নেই।’

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ১৪ থেকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে ব্রিটেনে বড় আঘাত হানবে করোনাভাইরাস। এই সময়টাকেই বিশ্লেষকদের ভাষায় বলা হচ্ছে ‘পিক টাইম’।

আর চিকিৎসাকর্মীরা এখনই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন, কী তীব্র সংকটময় সময় আসছে সামনে। এখনই প্রত্যেক চিকিৎসক ১৩-১৪ ঘণ্টা করে কাজ করছেন প্রতিদিন।

সেটাও করতে হচ্ছে ময়লা ফেলার পলিথিন, প্লাস্টিকের এপ্রোন ও স্কিইং করার চশমা পরে। কোনো রকমে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন তারা।

যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই করোনা আক্রান্ত রোগীদের থেকে কয়েক সেন্টিমিটার দূরত্বে থেকে কাজ করছেন ডাক্তাররা।

যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনে সাধারণ মানুষকে বলা হচ্ছে- ১ থেকে ২ মিটার ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রাখতে। চিকিৎসকদের তো তেমন উপায় নেই। এর ফলে যে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে তাদের জীবনে, সেটা এখনই ভাবাচ্ছে ব্রিটেনের স্বাস্থ্যকর্মীদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক চিকিৎসক বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তার তিনজন সহকর্মী ভেন্টিলেশনে আছেন, যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

কিন্তু তাদেরও অবস্থা একই। ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘আমরা অসুস্থ চিকিৎসকদেরও সেরা ভেন্টিলেটর দিতে পারছি না, সর্বোচ্চ নার্সিং কেয়ার দিতে পারছি না।

নার্সরাও অমানবিকভাবে খেটে চলেছেন, তারাও যে কোনো সময় অসুস্থ হয়ে পড়বেন।’ ব্রিটেনের ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস’ অবশ্য দাবি করেছে, স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতরা করোনাভাইরাসে কর্মক্ষেত্রে সংক্রমিত হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ, সঠিক সুরক্ষার অভাবে অনেক কর্মীই ভুগছেন সংক্রমণে, মারাও যাচ্ছেন কেউ কেউ।

একই অবস্থা চলছে স্পেন-ইতালিতেও। ইউরোপে এ দুটি দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও এর ফলে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। স্পেনে যেখানে সরকারি হিসেবে রোববার পর্যন্ত ১৫ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত করা হয়েছে।

এ সংখ্যা দেশটিতে মোট আক্রান্তের প্রায় ১৫ শতাংশ। এদিকে ইতালিতে আক্রান্ত হয়েছেন চার হাজারের বেশি স্বাস্থকর্মী। এরপরেই জীবনবাজি রেখে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা। স্পেনে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি। মারা গেছেন ১২ হাজার ৪১৮ জন। ইতালিতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ২৫ হাজারের বেশি। মারা গেছেন ১৫ হাজার ৩৬২ জন।

 

আরও খবর পেতে পড়ুনঃ পজিটিভ ভিডিও ভ্রমণ কাহিনী 

Newsbd 24, Newsbd 24 , Newsbd 24

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen + 3 =

Back to top button