Lead Newsশিল্প ও বাণিজ্য

তারল্যসংকটে ব্যাংক, প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন কীভাবে হবে?

প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজটি সার্বিকভাবে একটি কাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপ। অনেকের মতো আমিও বলি, করোনার কারণে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কমার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। তাই সার্বিক বিবেচনায় এ সময়ে এমন একটি প্রণোদনা দরকার ছিল।

কিন্তু প্রণোদনা ঘোষণার পর যে প্রশ্নটি সামনে আসছে, তা বেশ উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। সেটি হলো, এই প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন কীভাবে হবে। সব কটি প্যাকেজই ঋণনির্ভর। শিল্প, সেবা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা—এসব খাতে যে অর্থায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তার সবই ঋণ হিসেবে ব্যবসায়ীদের দেওয়া হবে। ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলো ৯ শতাংশ হারে সুদ পাবে। যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক দেবে ঋণগ্রহীতা ও বাকি অর্ধেক ভর্তুকি হিসেবে দেবে সরকার।

কিন্তু শঙ্কা হলো, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতি মোটেও সন্তোষজনক নয়। আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় কমে গেছে আমানতের প্রবৃদ্ধি। ব্যাংকগুলো বর্তমান পরিস্থিতিতে তারল্যসংকটের মধ্যে ঋণ দেবে কীভাবে? নিজেদের তারল্যসংকট থাকলে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে খুব বেশি আগ্রহী হবে না।

ঘোষিত প্রণোদনার মধ্যে আরও সমস্যা হলো, কারা অর্থ পাবেন, যথাযথভাবে প্রণোদনার অর্থ দেওয়া হবে কি না—এসব নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ আছে। দেখা যাবে, ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যাঁদের পাওয়ার কথা, তাঁরা হয়তো না-ও পেতে পারেন। রাজনৈতিক প্রভাব বা অন্য কোনো সম্পর্কের কারণে যাঁদের সুবিধা পাওয়ার কথা নয়, তাঁরাও ঋণ পেয়ে যেতে পারেন।

 এখন প্রশ্ন হলো, ব্যাংকগুলোর তারল্যসংকট কীভাবে দূর করা হবে? উপায় অবশ্যই আছে। প্রথমত, আমি মনে করি, বাংলাদেশ ব্যাংককে বড় আকারে পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচি বা স্কিম চালু করতে হবে, যাতে ব্যাংকগুলোতে তারল্যসংকট না হয়। ওই কর্মসূচি থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২-৩ শতাংশ সুদে ব্যাংকগুলোকে ধার দেবে। দ্বিতীয়ত, সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ ধার নিতে পারে। সরকারের ঋণ নেওয়া মানে হলো, নোট বা টাকা ছাপানো। সেই টাকা সরকার বিভিন্ন ব্যাংকে আমানত হিসেবে জমা রাখবে। এতে তারল্যসংকট দূর হতে পারে।

 এর বাইরে অর্থনীতিশাস্ত্রে ‘হেলিকপ্টার মানি’ নামে একটি ধারণা আছে। কোনো দেশ ভীষণ রকমের মন্দার মধ্যে থাকলে এবং চাহিদার বিপুল সংকট থাকলে হেলিকপ্টার মানি ধারণার মতো সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়া। এর মানে, হেলিকপ্টার থেকে যেভাবে টাকা ছড়ানো হয়, অনেকটা সেভাবেই টাকার সরবরাহ বাড়ানো। সমাজের ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির মানুষের কাছে টাকা পৌঁছানো গেলে তাতে চাহিদা তৈরি হবে। ফলে উৎপাদকেরা উৎপাদনে উৎসাহিত হবেন। কিন্তু বাংলাদেশে সমস্যা হলো, স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারণে শ্রমিকেরা অনেকেই বাড়ি চলে গেছেন। তাই চাহিদা অনুযায়ী কারখানায় উৎপাদন করা সম্ভব না-ও হতে পারে।

বর্তমান সংকটের সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে আরও বেশি করে প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। তবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে তিন ধরনের সমস্যা রয়েছে। এসব কর্মসূচির সুবিধা যাঁদের পাওয়ার কথা, তাঁরা পান না। আবার যাঁরা পান, তাঁদের পাওয়ার কথা নয়। এ ছাড়া সরাসরি তছরুপের ঘটনাও ঘটে। তাই সামাজিক কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তদারকিও জোরদার করতে হবে। জবাবদিহি নিশ্চিত করাটাও জরুরি।

 সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আরেকটি সমস্যা হলো, এ দেশে প্রায় সব সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রামভিত্তিক। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে শহুরে বস্তিবাসী, ছিন্নমূল মানুষ বেশি ঝুঁকিতে আছেন। তাই এই সংকটকালে সরকার শহরকে কেন্দ্র করে কিছু সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে। সেখানে বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে।

 অর্থনীতি মন্দার মধ্যে ঢুকে গেলে দেশে বেকারের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। কিন্তু আমাদের দেশে বেকারত্ব বিমা বলতে কিছু নেই। তাই সরকারের উচিত সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাঁদের (বেকার) নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া। পাশাপাশি ১০০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের আওতা বাড়ানো।

এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম
অর্থ উপদেষ্টা, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার

সূত্রঃ প্রথমআলো

আরও খবর পেতে দেখুনঃ পজিটিভ ভাইরাল ভিডিওআমি মাস্ক পরব না: ট্রাম্প

newsbd 24, newsbd 24

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen + five =

Back to top button